লাল-হলুদের Ball-ad বা স্বপ্নের উপকথা।
Posted by bangalnama on October 5, 2008
১৯২০ সালের এক গুমোট বিকেল। মোহনবাগান আর জোড়াবাগান ক্লাবের মধ্যে খেলা শুরু হবার কথা একটু পরেই। হঠাৎ খবর এল, অপ্রত্যাশিতভাবে জোড়াবাগান ক্লাবের প্রথম একাদশ থেকে বাদ পড়েছেন তাদের তারকা খেলোয়াড়, লেফ্ট হাফ শৈলেশ বোস। কানাঘুষোয় এও শোনা গেল পদ্মাপারের লোক হওয়ার সুবাদেই এমন একচোখো বৈরীতার শিকার হতে হল শৈলেশবাবুকে।
ঘটনার প্রতিবাদে জোড়াবাগানের ভাইস প্রেসিডেন্ট সুরেশচন্দ্র চৌধুরি মশাই তৎক্ষণাৎ পদত্যাগ করলেন। তাঁরই চেষ্টায় এবং রাজা মন্মথনাথ চৌধুরি, রমেশচন্দ্র সেন, এবং অরবিন্দ ঘোষের আনুকুল্যে ১৯২১ সালের পয়লা অগাস্ট, ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের গোড়াপত্তন হল গড়ের মাঠে। খুব স্বাভাবিকভাবেই, এই দলের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর নাম – মোহনবাগান। লাল-হলুদ আর সবুজ-মেরুনের প্রথম সাক্ষাতে নেপাল চক্রবর্তীর দেওয়া গোলে ম্যাচের ফল ইস্টবেঙ্গলের অনুকূলে ১-০ হয়। 🙂
ইস্টবেঙ্গল কলকাতার একমাত্র ক্লাব যারা উপর্যুপরি ছ’বার কলকাতা লীগ জিতেছে [১৯৭০-১৯৭৫]। পর পর দু’বার জাতীয় লীগ জেতার একমাত্র কৃতিত্ব এই ক্লাবের রয়েছে, ২০০৩-২০০৪ সালে। স্বাধীনতার পর ইস্টবেঙ্গল প্রথম ভারতীয় ক্লাব, যারা ইরানের পাস ক্লাবের মত বিদেশি দলকে হারিয়ে IFA শিল্ড জিতেছে। ১৯৭০-এর সেই ইতিহাস হয়ে যাওয়া ম্যাচের একমাত্র গোলটি করেন পরিমল দে। এরপরে ২০০৩ সালে, এই ক্লাবের ASEAN কাপ জেতা তো এই মহাদেশের ফুটবল ইতিহাসের একটা অসম্ভব প্রাসঙ্গিক অধ্যায়।
আমেদ খান কিংবা ভাইচুং ভুটিয়ার মত কিংবদন্তি খেলোয়াড়দের কাছে ইস্টবেঙ্গল নামটার সঙ্গে “মাদার ক্লাব” শব্দবন্ধ জড়িয়ে আছে। এই ক্লাবের সবুজ গ্যালারি এখনো মনে করে রেখেছে সুধীর কর্মকারের শেষমুহূর্তে করা ট্যাকলে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ের পা থেকে বল ছিনিয়ে আনা কিংবা মাঝমাঠ থেকে নির্ভুল নিশানায় পিন্টু চৌধুরির লঙ বল বক্সের মধ্যে থাকা ফরোয়ার্ডের মাথায় ফেলা। নিছক চাঁদির টান ছাড়াও ইস্টবেঙ্গল নামের ভেতর লুকিয়ে থাকা অগণিত মানুষের স্বপ্ন-মানচিত্র এই ক্লাবে খেলে যাওয়া প্লেয়ারদের জার্সির লাল-হলুদে ঠিকরে বেরিয়েছে।
দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলেই ঘুরে দাঁড়ানোর শপথে শান পড়েছে তখন, অতলের মধ্যে থেকেই পাহাড়চুড়োর স্বপ্ন দেখাটাও সেই বাঙালে গোঁ-এর একটা জাতি-লক্ষণ কিনা!
পদ্মাপারের বৃত্তান্ত হৃদয়ে জ্বালিয়ে সেই যে বল পেটানোর শুরু, তার লাল-হলুদ আবেগ ভারতীয় এবং ক্ষেত্রবিশেষে আন্তর্জাতিক ফুটবলে এখনো জ্বলজ্বল করছে। ময়দানে কোনো বিকেলবেলাশেষে যখন গঙ্গাপারের স্টিমারে পূরবীর ভোঁ বেজে ওঠে, গড়ের মাঠের আকাশে রঙের পাগলা ঘোড়া সপাট টানের মত ছুটতে শুরু করে, তখন, তক্ষুনি…ভিটেমাটি হারানো রক্তের ইশ্বরদের হাতে হাতে জ্বলে ওঠে মশাল, যার আগুনে বাংলাদেশের চোখের তারা আর ঘামে ভেজা লাল-হলুদ জার্সি একাকার হয়ে যায়।
কমলকুমার মজুমদার কোন এক ঘরোয়া আড্ডায় একবার বলেছিলেন, “বাঙালদের হিস্ট্রি আছে, জিওগ্রাফি নেই।” ইস্টবেঙ্গল ক্লাব বোধহয় আমাদের সেই হারিয়ে যাওয়া ভুগোল-বই, যেখানে সুবচনীর হাঁস বেলাশেষে পালক ধুতে বাড়ির পুকুরে নামে, চাল-ধোয়া কিশোরী হাতের স্পর্শ পেয়ে শিউরে ওঠে আলপনারা, আর রেললাইন ধরে তীব্রগতিতে ছুট্টে যাওয়া চোখের অবাধ উল্লাস টুকরো টুকরো হয়ে মিশে যায় কাঠের ডিভাইডারে।
আমি, আমরা ঘরে ফিরি সেই মুহূর্তগুলোতে।
কাঁটাতার পেরিয়ে।
ব্যারিকেড অগ্রাহ্য করে,
কেবল লাল–হলুদ নিয়ে।
কেবল লাল–হলুদ হয়ে।
রচনা ও ছবি সৌজন্যে – অনির্বাণ দাশগুপ্ত
[বাংলা হরফে প্রতিলিখন – প্রিয়াঙ্কা রায়]
Devalina Sen said
Bah! Bhalo laglo lekhata. Jio East Bengal- the Real Power!![:)]
The Ancient Mariner said
EastBengal is also the most successful of all indian clubs. having won the most number of matches in the national league. Also it has won IFA shield a multifold times more than its archrivals. It has also an overwhelming 106-81 head to head record with the green maroon brigade who are somehow still known as the national club with one memorable victory in their bag! 😛
Shibashis said
Kintu aaj kaal boddo haarchhe….