বা ঙা ল না মা

ইলা মিত্র ও নাচোল বিদ্রোহ – আলাপচারিতায় মোহন মিত্র

Posted by bangalnama on June 1, 2010


তেভাগা আন্দোলনের প্রবাদপ্রতিম নেত্রী, ১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৫০ সাল মালদা-রাজশাহীর রামচন্দ্রপুর-চন্ডীপুর অঞ্চলের কৃষক নেত্রী ও সংগঠক, নাচোল বিদ্রোহের পুরোধা, কমরেড ইলা মিত্রের ছেলে মোহন মিত্রের সঙ্গে কথা বলল বাঙালনামা। মোহন মিত্র নিজেও ১৭ বছর বয়সে কম্যুনিস্ট পার্টির সদস্য হয়েছিলেন। তার জন্মের ৭ বছর পরে ১৯৫৪ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসারত মা-কে প্রথম দেখেন তিনি । তার ছাপ্পান্ন বছর বাদে ২০১০-এর ফেব্রুয়ারীতে আবার গিয়েছিলেন ঢাকা। নাচোল থেকে দলে দলে মানুষ এসেছিলেন সাউথ এশিয়ান গেমস-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিতে। আবার সেবারই নাচোলে গিয়ে সেখানকার মানুষের তেভাগার স্মৃতির প্রতি, তার মায়ের প্রতি অটুট আবেগেরও সাক্ষী হয়েছিলেন। তেভাগা আন্দোলনে ইলা মিত্রের ভূমিকা, বেড়ে ওঠা নিয়ে নানান দিক উঠে এলো আলোচনায়। ঈষৎ সম্পাদিত সাক্ষাৎকারটা এখানে তুলে দিলাম।


বাঙালনামা।। আচ্ছা আপনি কি আপনার দাদামশায়, মানে আপনার মায়ের বাবা, তাঁকে পেয়েছিলেন? আমি পড়ছিলাম যে উনি ডেপুটি অ্যাকাউন্টান্ট জেনেরাল ছিলেন..


মোহন মিত্র।। তাহলে আমি প্রথম থেকে তাঁর কথা বলি..


বাঙালনামা।। ..একটু শুরু করছি আমি। উনি, বলা যেতে পারে, মধ্যবিত্ত-উচ্চমধ্যবিত্ত অবস্থায় তখন (৩০-এর দশকে) রয়েছেন। আর ওনার মেয়ে তখন নানান খেলাধুলায়, যাকে বলা যায়, সেরা মহিলা খেলুড়ে হয়ে উঠছেন। একদিকে আবার তিনি ভালো পড়াশোনায়। এইরকম একটা বাড়ি থেকে আসা মেয়ে, যে অবশ্যই কিছু আন্দোলনে যুক্ত হচ্ছে,… কিন্তু তার সাথে বিয়ে হচ্ছে একজন কম্যুনিস্ট হোলটাইমারের। এই ব্যাপারটা হল কী করে?


মোহন মিত্র।। এটা একটা অতি আশ্চর্যজনক ঘটনা। সমস্ত জায়গায় এটা খুব আলোচ্য ব্যাপার হয়েছিল। সেই সময় কম্যুনিস্ট পার্টির হোলটাইমার মানে হচ্ছে একটা বিরাট ব্যাপার। তাদের শিক্ষা দীক্ষা জ্ঞানে তারা অন্য মানুষের চেয়ে অনেক এগিয়ে সে সময়ে। আর তাছাড়া আমার দাদু ছিলেন খুব প্রগ্রেসিভ মানুষ। যদিও তিনি গভর্নমেন্টের ডেপুটি অ্যাকাউন্টান্ট জেনেরাল ছিলেন, কিন্তু তাঁর দৃষ্টিভঙ্গীতে এটা বোঝা যায়। ১৯৩৫ সাল- ৩৪ সাল, এই সময়ে.. মেয়েরা তখন হাফপ্যান্ট পরে মাঠে দৌঁড়বে এবং ছেলেদের সঙ্গে প্র্যাক্টিস করছে, হি অ্যালাউড দীস থিংগস। এবং মেয়েকে প্রশিক্ষণ দিয়ে, সে ১৯৩৬ থেকে ১৯৪২ বেঙ্গল এবং সারা ভারতে। এবং ১৯৪০ সালে যে হেলসিনকি অলিম্পিকে তার নাম সিলেক্টেড হল। এটার থেকেই বোঝা যাচ্ছে। অন্য কোনো বাড়ি হলে … এখনো কোনো মেয়েকে হাফপ্যান্ট পরে বেরোলে আমাদের সমাজে এখনো অন্য চোখে দেখে। সেইসময় দাদু তার মেয়েকে এইভাবে ট্রেনিং দিতে পেরেছিল, এবং সে মহিলা অাত্মরক্ষা সমিতিতে যোগ দিয়েছিল ওই বাড়ি থেকে সেটা একটা বিস্ময়কর ব্যাপার। এবং আমি যেটা ছোটো থেকেই জানি, যখন বিয়ের ব্যাপারটা হয়, দাদু তো পাত্র খুঁজছিল মা’র জন্য। আর মা তখন বেথুন স্কুল, বেথুন কলেজ থেকে অনার্সে (বি এ পাশ) করেছে, খেলাধুলোয় তখন জগৎ জোড়া নাম তার, সেই সময় একটা পাত্র খুঁজছে মায়ের জন্য। খুঁজতে গিয়ে দেখল যে একটা পাত্র, মালদা জেলার, আছে। আমার বাবা (রমেন মিত্র) ছিলেন অত্যন্ত বিদ্বান লোক..

কুমারী ইলা সেন বর্তমান বৎসরে মেয়েদের  স্পোর্টস-এ সর্ব্বাপেক্ষা অধিক সংখ্যক পুরস্কার পাইয়াছে এবং জাতীয় যুবসঙ্ঘ, আনন্দমেলা ও ক্যালকাটা এথলেটিক স্পোর্টসে চ্যম্পিয়ানশিপ কাপ পাইয়াছে। --সচিত্র ভারত, ৩য় বর্ষ, শনিবার, ২৪শে বৈশাখ, ১৩৪৫, পৃষ্ঠা ২৫৮। মুদ্রণ: আর্ট প্রেস, ২০ নং ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান স্ট্রীট, নরেন্দ্র নাথ মুখোপাধ্যায় কর্ত্তৃক সম্পাদিত, প্রকাশিত ও মুদ্রিত।

কুমারী ইলা সেন বর্তমান বৎসরে মেয়েদের স্পোর্টস-এ সর্ব্বাপেক্ষা অধিক সংখ্যক পুরস্কার পাইয়াছে এবং জাতীয় যুবসঙ্ঘ, আনন্দমেলা ও ক্যালকাটা এথলেটিক স্পোর্টসে চ্যম্পিয়ানশিপ কাপ পাইয়াছে। --সচিত্র ভারত, ৩য় বর্ষ, শনিবার, ২৪শে বৈশাখ, ১৩৪৫, পৃষ্ঠা ২৫৮। মুদ্রণ: আর্ট প্রেস, ২০ নং ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান স্ট্রীট, নরেন্দ্র নাথ মুখোপাধ্যায় কর্ত্তৃক সম্পাদিত, প্রকাশিত ও মুদ্রিত।


বাঙালনামা।। ..তখন উনি (রমেন মিত্র) তো কৃষকসভার সম্পাদক ছিলেন।


মোহন মিত্র।। হ্যাঁ কৃষকসভার সম্পাদক ছিলেন। আমার বাবা লেখাপড়া করেছিলেন, ব্যারাকপুরে মামার বাড়ি থেকে। তিনি ম্যাথেম্যাটিক্স, ইকোনমিক্স নিয়ে সে সময়ে বি এস সি পড়েছিলেন। আর ভীষণ হিউমারাস ছিলেন, খুব হাসিখুশি মানুষ ছিলেন। আমাদের তো জমিদারবাড়ি ছিল – বিরাট জমিদারি ছিল আমাদের। বাবা সেই তার বিরুদ্ধে … তিনি ‌তখন এখানে মার্ক্সিজম পড়ে ফেলেছেন কলকাতায়, মার্ক্সিস্ট হয়ে গেছেন তখন। তখন তিনি যোগ দিয়েছেন ক্যানেল আন্দোলনে। বাড়ি বহুদিন ছেড়ে দিয়েছে তখন। সেই সময় রামচন্দ্রপুর গ্রামে তিনি আস্তে আস্তে সংগঠন গড়ে তুলছেন কৃষকদের মধ্যে। সেই অবস্থায় বিয়ের প্রস্তাব আমাদের বাড়িতে, আমার ঠাকমার কাছে গেল… সেই ছেলেকে দেখতে দাদু গেছিল। মালদায়, মানে রাজশাহীতে, আমাদের গ্রামের বাড়িতে। কথা বলে উনি এত মুগ্ধ হয়ে গেলেন, যে দাদু ফিরে এসে আমাদের দিদিমা এবং মামাদের বলেছিল যে এমন একটা লোকের সঙ্গে দেখা করে এলাম – He is a living encyclopaedia। এটা দাদুর ভাষা।


বাঙালনামা।। তখন আপনার মা-ও তো কম্যুনিস্ট পার্টির মেম্বার ছিলেন?


মোহন মিত্র।। মা তখন এতখানি কম্যুনিস্ট পার্টি করেনি। এখানে যখন মা মহিলা আত্মরক্ষা সমিতিতে যোগদান করেছে, কনক মুখার্জী তখন মহিলা সমিতিতে ছিলেন। তারা বলত যে, ‘ইলা আসত, একটা প্যান্ট আর একটা তোয়ালে জড়িয়ে আসত, এসে বলত ‘আমাকে বেশি কাজ দেবে না, কালকেই আমাকে লখনৌ চলে যেতে হবে দৌড়তে।” মানে মা তখন রীতিমত সেই সময়ে রাইসিং স্পোর্টসউওম্যান। তখন কম্যুনিস্ট পার্টির চেয়েও তার জীবনে খেলাধুলাটা ছিল খুব তুঙ্গে। কিন্তু তিনি কম্যুনিস্ট পার্টির প্রতি আকৃষ্টও হয়ে গেছেন। অলরেডি তিনি নাম লিখিয়ে ফেলেছেন, এবং কাজ শুরু করে দিয়েছেন কলকাতায়।


বাঙালনামা।। সেটার অনুপ্রেরণা কেউ ছিলেন, পার্টিকুলারলি?


মোহন মিত্র।। পার্টিকুলারলি কমলা মুখার্জী ছিলেন, কম্যুনিস্ট পার্টির পুরনো মহিলা। মণিকুন্তলা সেন, মা কে কম্যুনিস্ট পার্টির মেম্বারশিপের জন্য (অনুপ্রাণিত) করেন। তিনি কালীঘাট থেকে বহু বছর আগে জিতেছেন। তার স্বামীর নাম জলি কাউল। জলি কাউল ছিলেন কম্যুনিস্ট পার্টির সেক্রেটারি একসময়। যাইহোক, তারপর বিয়েটা হওয়ার পর, যখন মা, বাবা দেশে আমাদের রামচন্দ্রপুরের বাড়িতে গেলেন, বুঝতেই পারছ, ওই সময়ে সেই বাড়িতে মেয়েদের অবস্থানটা। সে বাড়ির বউ তো কোনোসময় বাইরে বেরোতে পারে না। আমার ঠাকমা কিন্তু আগাগোড়াই আমার বাবাকে সমর্থন করে গেছেন। এবং আমার মা প্রথমে গিয়েই… বাড়ি থেকে বেরোনোর তো সেই সময় নিয়ম ছিল না মেয়েদের, বিশেষ করে ওই সব পাড়াগাঁয়ে…তখন মা প্রথম স্টার্ট করল (স্কুল)। ওখানে কোনো মেয়েদের স্কুল ছিল না, মুসলিম মেয়েরা পড়ত না। পড়ার কোনো সুযোগ ছিল না। মা-ই প্রথম বলল যে ‘না পড়তে হবে।’ এই দিয়েই শুরু করল। স্কুল করল। প্রথমে চারটে মেয়ে এল। তারপর সেখানকার কিছু মুসলিম (পরিবার) বাধা দিতে শুরু করল স্কুলটাকে। এই কারণে যে মেয়েদের নাকি বাইরে বেরিয়ে এসে লেখাপড়া করা উচিত হবে না। তখন মাদের যুক্তি ছিল যে লোকের বাড়ি কাজ করতে যেতে পারছে, জোতদারের বাড়িতে, আর লেখাপড়া করতে পারে না? এই ভাবে মেয়ে জোটাতে শুরু করল। জোটাতে জোটাতে আমাদের গ্রামে, বাড়ির পাশে, আমাদেরই জায়গায় এই স্কুল করল। স্কুল তৈরী করে সেই প্রথম জনসমাজের সঙ্গে আস্তে আস্তে যুক্ত হল। বাবা তো সেইসময় মালদা জেলার কম্যুনিস্ট পার্টির সেক্রেটারি। তেভাগার আন্দোলন তখন দানা বাঁধছিল সেখানে। তখন she became a (mass leader)। অসম্ভব শক্তি ছিল মায়ের। শারীরিক শক্তি ছিল, স্পোর্টসের জন্য, মানসিক শক্তি ছিল খুবই বেশি। এবং যেহেতু জমিদার ঘরের বউ, সেহেতু তাকে বিশ্বাস করাও লোকের পক্ষে কঠিন ছিল। তাইজন্য সে সবসময় বেরিয়ে গিয়ে সাঁওতালি ভাষা সে আয়ত্ব করেছিল। এবং সাঁওতালদের সঙ্গে থাকা শুরু করল। এবং আমার ঠাকুমা তার মধ্যে কোনোরকম ইন্টারফেয়ার করেনি।


আমি ১৯৪৮ সালে জন্মগ্রহণ করি। কলকাতায় জন্মগ্রহণ করি। কলকাতায় তখন বাপের বাড়িতে মা এসেছিল, এবং দশ দিন পরেই আবার তাকে চলে যেতে হয় – তখন আন্দোলন প্রচন্ড দানা বেঁধেছে। ঠাকুমার কাছে আমি ওই গ্রামের বাড়িতেই থাকি। মা তখন আন্দোলনে নেমে পড়ে। বাবা মা দু’জনেই আন্ডারগ্রাউন্ড হয়ে যায়, পার্টি বেআইনি ঘোষিত হয়ে যায় সবজায়গায়। এবং ১৯৪৮ সালের ৬ই মার্চ পার্টি ভেঙে দু’টো পার্টি হয়ে গেল – একটা পাকিস্তান কম্যুনিস্ট পার্টি, একটা ইন্ডিয়ান কম্যুনিস্ট পার্টি। পাকিস্তান কম্যুনিস্ট পার্টির সেক্রেটারি হলেন সাজ্জাদ সাহেব। আমার বাবা ঢাকা সেন্ট্রাল কমিটির মেম্বার হলেন। কিন্তু পার্টি আন্ডারগ্রাউন্ড। Party was not legal at that time।


বাঙালনামা।। এই যে আপনার মা গ্রামে গেলেন, তখন একটা কলকাতার মেয়ে গ্রামে যাচ্ছেন, এই ব্যাপারটা – ধরুন আপনার ঠাকুমাও হয়তো মেনে নিয়েছেন, কিন্তু গ্রামটা তো একটি বাড়ি শুধু নয়, গ্রামে আরো সবাই রয়েছেন। সেখানে একটা কলকাতার মেয়ে যাচ্ছে, সে প্রথম সেই ভেতরে থাকার নিয়মটা ভাঙছে, এই ব্যাপারটা নিয়ে কীরকম (প্রতিক্রিয়া) হয়েছিল কিছু জানেন?


মোহন মিত্র।। হ্যাঁ, সেটা জানি। সেটা এইরকম হয়েছিল যে আমার বাবা, যেহেতু তেভাগা আন্দোলনের শুরুতেই কী করেছিল, আমাদের ৫০০ বিঘা জমি ছিল, ৫০০ বিঘা জমি কৃষকদের মধ্যে প্রথম তেভাগাটা আমাদের বাড়ি থেকেই শুরু হয়। এই যে ৫০০ বিঘা জমিতে লাল ঝান্ডা পুঁতে কৃষকদের অধিকারটা তখন আমাদের বাড়ি থেকেই শুরু হয়। (বাঙালনামা – হ্যাঁ অজয়বাবুর লেখায় পড়ছিলাম)। এই যে বিশ্বাসযোগ্যতা, আর তাদের সঙ্গে থাকা, এবং তাদের ভাষা শেখা, এবং বাবার যে একটা বিরাট ইনফ্লুয়েন্স ছিল গরীব মানুষের ওপর, গরীব মানুষরা বাবাকে দেবতার মত মনে করত। (তাই) তার বউকে সহজেই তারা (গ্রহণ করেছিল) (তাছাড়া তারা) যখন দেখল যে সে রাস্তায় নেমে পড়েছে, এবং তাদের ঘরেই বাস করছে, তাদের খাওয়াই খাচ্ছে, তখন (তারা আরো গ্রহণ করলো নিজেদের লোক বলে) এটা করতে কিন্তু সময় লেগেছিল। It was not a one-day matter. It took little bit of time। এবং যখন আন্দোলনে এগিয়ে যায় মানুষ, সে যখন দেখে তার সমস্ত বিপদের ঝুঁকি নিয়ে, তার বাচ্চাকে দুধ দিতে যাচ্ছে না সে, সে বাচ্চা – চারমাসের – পড়ে আছে – তখন তার বিশ্বাসযোগ্যতা আপনা থেকেই এসে যায়।


বাঙালনামা।। আপনার বাবাকে যখন কম্যুনিস্ট পার্টি দায়িত্ব দিয়ে পাঠাচ্ছে আপনাদের গ্রামেই তেভাগাটাকে গড়ে তুলতে, সেইসময় উনি (ইলা মিত্র)-ও যোগ দিচ্ছেন। কিন্তু আস্তে আস্তে দেখতে পাচ্ছি যে ইলা মিত্র ইলা মিত্র হয়ে উঠছেন, প্রায় এক-দু’বছরের মধ্যে, এবং পরবর্তীকালে যাদের আমরা জানি তেভাগার নেতা ও নেত্রী হিসাবে, নারীদের মধ্যে সবার থেকে উজ্জ্বল একটা নাম হয়ে উনি উঠে আসছেন — এটা কীরম করে হল? মানে, সেই অর্থে এর আগে তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় খুব বেশি নেই। বরং আপনার বাবা রাজনৈতিক ভাবে অনেক বেশি অভিজ্ঞ ছিলেন।


মোহন মিত্র।। না, বাবা তো হোলটাইমার ছিল, যতদিন বাবা বেঁচে ছিলেন, সারা জীবনই, পার্টিতে তার স্থান ছিল অনেক উঁচুতে। ইলা মিত্র ইলা মিত্র হয়ে যাওয়ার পরেও পার্টির যে একটা ইনার থাকে না? পার্টি সেন্ট্রাল কমিটি… There are some leaders who are very much popular in the outside, but there are some core leaders, who, inside the Communist Party, পার্টির তাত্ত্বিক ব্যাপারে তাঁরা (অগ্রণী) থাকেন। আমার বাবা কিন্তু ওই দলে ছিল। আর মা কিন্তু বাবার সঙ্গে বিয়ে হওয়ার আগেই কম্যুনিস্ট আদর্শে বিশ্বাসী হয়েছিল। ১৯৪২ সালে মা কম্যুনিস্ট পার্টিতে যোগদান করে। আর তাদের বিয়ে হয়েছে ৪৫ সালে। আমার বাবা কোনোদিনও মাস লিডার ছিল না। মা-ই কিন্তু সংগ্রামটাকে লিড করেছিল। বাবা পেছন থেকে (সাহায্য করেছিল), অনেক মিটিং করেছিল (ইত্যাদি), কিন্তু গোটা আন্দোলনটা লিড করেছিল আমার মা।


বাঙালনামা।। এইটা কী করে হল, সেটাই প্রশ্ন ছিল। একজন ভদ্রমহিলা, আগে অবশ্যই রাজনীতি করেছেন, কিন্তু সেইসময় হঠাৎ, এক দু-বছরের মধ্যে উনি এতবড় একটা প্রবাদপ্রতিম ফিগার হয়ে উঠছেন।


মোহন মিত্র।। এটার কারণ দেখতে হলে সেই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতটা বিচার করতে হবে। সেই সময়ের প্রেক্ষিতটা অসম্ভব অন্যরকমের ছিল। তাইজন্য কাকদ্বীপ হয়েছিল। কাকদ্বীপে কংসারি হালদার। একটা কিংবদন্তী নাম হয়ে গেছিল। তিনি আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে এম পি হয়েছিলেন। কাকদ্বীপকে মুক্তাঞ্চল করে রেখেছিলেন। এদিকে তোমার অন্ধ্রপ্রদেশে গোটা জায়গা, তেলেঙ্গানা, পুরো মুক্ত করে রেখে দিয়েছিল। এই যে পরিপ্রেক্ষিতটা ছিল অসম্ভব সেইসময়ে। সেইসময়ে যেন মনে হচ্ছে সশস্ত্র সংগ্রাম করেই দখল করে নেওয়া যাবে। এবং জমিদারদের নির্যাতনের মুখে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার মত এর আগে এরকম ঘটনা ঘটেনি। এর আগে সবাই ডেপুটেশন দিত। এই যে সশস্ত্র ভাবে এগিয়ে চলা, এই যে ‘ধান দেব না’, ‘ধান দেব না। ঘিরে রাখব। হাজার হাজার ভলান্টিয়ার তৈরী করব।’ এই যে হাজার হাজার ভলান্টিয়ার তৈরী করে ধান রক্ষা করা, ধান জমিদারের খিলানে যেতে দেব না, এই যে একটা প্রতিরোধ, এ প্রতিরোধ আগে কোনোসময় হয়নি।


বাঙালনামা।। আরেকটা যেটা আমার প্রশ্ন ছিল, তেভাগা আন্দোলনটা পুর্ববাংলার অন্যান্য জায়গাতে অনেক আগে সংগঠিত হয়েছে। ৪৬-এ তুঙ্গে উঠেছে। তারপর আস্তে আস্তে, যখন পাকিস্তানের স্লোগানটা বেশি বড় হয়ে যায়, it kind of took over, তেভাগার কৃষকের দাবিটা বলতে গেলে সাবভার্টেড হয়ে যায়, তখন কিন্তু নাচোলের যে বিদ্রোহটা হয়েছিল, সেটা দেখা যাচ্ছে অনেক পরে, ১৯৫০ সালে। বাই দ্যাট টাইম, অন্যান্য জায়গাতে তেভাগা থেমে গেছে। এরই সঙ্গে আরেকটা জিনিস যেটা দেখি, যে এখানে অর্থনৈতিক শোষণটা অনেক বেশি ছিল। অন্যান্য জায়গায় যেরকম আধিয়ারি প্রথা ছিল, এখানে ছিল না। এখানে কুড়ির মধ্যে মাত্র তিন ভাগ ধান কৃষকের বরাদ্দ হত। তা নাচোলের ক্ষেত্রে এই তফাৎ গুলো কেন? একদিকে অনেক পরে আন্দোলনের দানা বঁাধা আবার এই অতিরিক্ত অর্থনৈতিক জুলুম। তাছাড়া যখন সুন্দরবনে, দিনাজপুরে আন্দোলন পিছিয়ে আসছে, নাচোল যেটার জন্য বিখ্যাত সেই বিদ্রোহটা (১৯৫০ সালে) সেই স্তিমিত সময়েও দীর্ঘদিন ধরে তেভাগাকে নাচোলে সাসটেইন করা কীভাবে সম্ভব হয়েছিল বলে আপনার মনে হয়?


মোহন মিত্র।। ঠিক বলেছ, ওখানে আধিয়ারি ছিল না। দীর্ঘদিন ধরে তো লড়াইটা করতে হয়েছে আসলে। আস্তে আস্তে সংগঠিত করতে হয়েছে। এবং দীর্ঘদিন ধরে লড়াইটা কিন্তু চলছে। ৪৬ সাল থেকে, সেই ৪৫ সাল থেকেই ওখানে কৃষকদের দাবীর লড়াই শুরু করেছে। পশ্চিমবাংলার কিছু জেলায় যে তেভাগা আন্দোলন হয়েছে, তারা একটু এগিয়ে থাকা মানুষ ছিল। ওইজানকার লোকেরা কিন্তু, বিশেষ করে ট্রাইবাল, একটু পিছিয়ে থাকা মানুষ ছিল। পিছিয়ে থাকা মানুষকে সংগঠিত করতে এবং সেই আদর্শে উদ্বুদ্ধ করতে, যারা জমিদারের গোলামি করে গেছে সারাজীবন, তাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যেতে it took time । ওই দু-তিন বছরের মধ্যেই প্রচুর লড়াই হয়েছে সে সময়ে। ওটা (১৯৫০ এর পুলিশ হত্যা) হচ্ছে লাস্ট। তার আগে তো প্রত্যেকটা জায়গায় লড়াই হয়েছে। প্রথমে হাটে ‘তোলা’ দেওয়া বন্ধ হল। সেই হাটের আন্দোলন হল। এভাবে আস্তে আস্তে হল। একবারেই তো কোনো আন্দোলন দানা বঁেধে উঠতে পারে না। It took time to organise the whole thing ।


বাঙালনামা।। তেভাগার সময়ে আরেকটা জিনিস আমরা দেখেছিলাম, নারীদের ভূমিকা। যেটা আগে সেই অর্থে দেখা যায়নি। সেইটা নিয়ে যদি কিছু বলেন। এবং সেটার সাথেও ইলা মিত্রের ইলা মিত্র হয়ে ওঠার মনে হয় একটা যোগ আছে।


মোহন মিত্র।। (নারীদের) অসাধারণ, অসাধারণ ভূমিকা। এই যে মেয়েদের বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে আসা, এটা ইলা মিত্রই করতে পেরেছিলেন। এটা আমার বাবার দ্বারা সম্ভব হত না। মেয়েদের বাড়ি থেকে বের করে আন্দোলনে যুক্ত করা (বাঙালনামা – এটা বিশ্বাসযোগ্যতা দিয়েছিল মনে হয়, একজন মেয়ে হয়ে মেয়েদের নিয়ে আসা, এই নিয়ে কোনো ঘটনা যদি বলেন) হ্যাঁ বিশ্বাসযোগ্যতা। মুসলমান মেয়েরা, তারাও যে বেরিয়ে পড়েছিল বাড়ি থেকে, এটা অকল্পনীয় সে সময়ে। নারীদের যে স্কোয়াড তৈরী করেছিল, সে অসম্ভব, ভাবা যায় না। এবং সেখানে হিন্দু, মুসলমান এবং সাঁওতাল – তিনটে সম্প্রদায়কে একসাথে। এই যে, এত ননকম্যুনাল যে লড়াইটা হয়েছিল, সেটা কিন্তু শিক্ষার ব্যাপার আছে পৃথিবীর সবার কাছে। হিন্দু-মুসলমান-সাঁওতাল সবাই একসাথে হয়ে লড়াইটা করছে তো, এটা একটা অদ্ভুত, আলাদা মাত্রা পেয়েছিল। তখন স্বাধীনতা হয়েছে, হিন্দু-মুসলমান টেনশন ভীষণ। কিন্তু একটা ব্যাপারে তারা একজায়গায় দাঁড়িয়েছিল। এটা কিন্তু খুব লক্ষণীয় ব্যপার। (মেয়েদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রে) স্পেসিফিক কিছু ঘটনা আমার মনে নেই তবে এটা মনে আছে যে প্রত্যেক বাড়ি থেকে মেয়েরা জয়েন করেছিল এবং মেয়েদের আলাদা সংগঠনও তৈরী করেছিল। পুরুষদের পাশাপাশি তাদের বউদেরও এই কাজে যুক্ত করতে পেরেছিল। যেটা আমরা এখনো এখানে, এত বছর পরেও কম্যুনিস্ট পার্টি, তা করতে পারিনি।


বাঙালনামা।। এক্ষেত্রে ওনার মেয়েদের স্কুল চালানোর সময়ে মেয়েদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনার অভিজ্ঞতা সাহায্য করেছিল নিশ্চয়ই?


মোহন মিত্র।। হ্যাঁ অবশ্যই হেল্প করেছে সেটা। সেই স্কুল এখন কলেজ হয়ে গেছে। এবং আমি এবার যখন গেছিলাম (ফেব্রুয়ারি ২০১০) তখন নাচোলের লোকরা সব এসেছিল, আমাকে তাদের কাছে যেতে হয়েছিল। এবং দেখলাম সেখানে ৬০০-৭০০ কৃষক ও কৃষক মেয়েরা বসে আছে। তারা বলছিল যে ‘আমরা সব সময় আমাদের নেত্রীর কথা বলি। আমার ঠাকুরদাদা ওই লড়াইয়ে মারা গেছে।’ ওর রেশ এখনো যায়নি। মা যখন তেভাগা আন্দোলনের অর্ধশতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে গেল তখন ওখানে মাকে দেখতে দেড় লক্ষ লোকের সমাবেশ হয়েছিল। এখনো নাচোলে গিয়ে তো আমি অবাক। সে সব লোক জড়িয়ে ধরছে আমাকে। বলছে যে ‘আপনার মার সঙ্গে (লড়াইয়ে) আমার মা ছিল। ওই গ্রামে জ্বালিয়ে দিয়েছিল। তার আমি নাতি।’ অনেক সংগ্রাম হয়, নিভে যায়, লোকে ভুলে যায়। এই যে এইসব লোকেরা এখনো রয়ে গেছে, নাচোলে, এখনো তারা ওই সংগ্রামের কথাটা মনে রেখেছে।


বাঙালনামা।। যে ঘটনার পর পুলিশি অত্যাচারটা শুরু হল, নাচোলে যখন ওই পাঁচজন পুলিশকে মারা হল, তারপর তো পুলিশবাহিনী বিশালভাবে অত্যাচারটা নামিয়ে আনল…মেয়েদের ওপর অত্যাচার হয়েছে, সাঁওতালদের ওপর…


মোহন মিত্র।। হ্যাঁ, গ্রামকে গ্রাম জ্বালিয়ে দিল, চোদ্দোটা গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছিল। লক্ষ লক্ষ মানুষকে মারল, নির্যাতন করল। সে তো একটা ম্যাসাকার যাকে বলে। প্রচুর অত্যাচার হয়েছে। আমার মা কে দেখেছি মাঝে মাঝেই আউট অফ সেন্স হয়ে যেত, খেতে পারত না। খেতে বসে উঠে পড়ত। ‘মা, খেলে না কেন, খেলে না কেন’? উঠে পড়ত। উঠে পড়ে বলে ‘খেতে ইচ্ছে করছে না।’ অনেক ছোট ছোট জিনিস মার মধ্যে উঠে আসত। যেমন ধর, ওখানে আমাদের বাড়ির পাশে ছিল হরেক। হরেক বেশি কাজ করত না, মার কাছে খুব বকুনি খেত – ‘কি পার্টির মিটিং-এ আসছিস না, (কাজ) করছিস না’। যখন ধরা পড়ল হরেক, মা-ও ধরা পড়েছে, তখন ইলা মিত্রকে আইডেন্টিফাই করার জন্য হরেককে নিয়ে গেছে, ‘বল, এটা তোদের নেত্রী ইলাদি, রানীমা ইলা মিত্র’। হরেক কিছুতেই বলছে না। ‘না, আমি চিনি না এঁকে।’ তারপর মার সামনে তার বুকে জোড়া লাথি মারছে পুলিশ। দমাদ্দম লাথি মারছে, মুখ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে লোকটা ধড়ফড় করতে করতে মারা গেল। এই হচ্ছে হরেক। মা বলে, ‘হরেকের মুখটা মনে পড়ে গেল রে, আমি আর খেতে পারব না।’


বাঙালনামা।। উনি যখন অ্যারেস্ট হচ্ছেন, তখন ওনার সাথে আরো অনেকে একসাথে ধরা পড়েছিলেন, তাঁদের পরিণতি….


মোহন মিত্র।। যখন ওখানে গ্রামকে গ্রাম জ্বলছে তখন ওখান থেকে পালিয়ে যাবার জন্য দু’টো দলে ভাগ হয়েছিল। ওখানে যে লিডার, মাতলা সর্দার তার নাম, সাঁওতালদের লিডার। মাতলা মাকে বলেছিল, ‘আপনাকে আমি সেফ জায়গায় নিয়ে চলে যাব। আপনি চিন্তা করবেন না।’ মা বলল যে ‘তুমি বল কোন রাস্তা দিয়ে যাব। আরেকটা দল অন্য দিক দিয়ে চলে গেছে। তুমি আমাকে জায়গাটা বল, রোহনপুর স্টেশনটা বলে দাও, কোনদিক দিয়ে যাব’। মা অপেক্ষা করতে রাজি না। তখন প্রচন্ড পেছনে ফায়ারিং চলছে। আরো মিলিটারি আসছে, ঘিরছে। ঘিরে ফেলার আগেই রোহনপুর স্টেশনে যেতে হবে। রোহনপুর স্টেশনে মা আরো পাঁচজন সাঁওতাল মেয়েকে নিয়ে… এবং মার ড্রেসও ছিল সাঁওতালি, খালি গা, সাঁওতালি ড্রেস, কেননা মা ভীষণ ফ্লুয়েন্ট সাঁওতালি বলতে পারত। গিয়ে যখন রোহনপুর স্টেশনে বসেছে, মাটিতেই বসেছে, ট্রেন আসার অপেক্ষা করছে। তা পুলিশ তো ছেয়ে গেছে স্টেশনে, কিন্তু ধরতে পারে নি প্রথমে। কিন্তু ট্রেনটা আসছে না। That was a mistake of my mother, যে সেইসময় মার ট্যাঁকে একটা ঘড়ি গোঁজা ছিল, বুঝেছ। হঠাৎ টাইমটা দেখার জন্য ট্যাঁক থেকে আস্তে করে, নিচু হয়ে ঘড়িটা দেখতে গেছিল। Somebody had noticed it। এক সাঁওতাল, মাটিতে বসে আছে, আদ্ধেক কাপড় নেই, কালো গা… মার গায়ের রং ছিল কালো… সে কী দেখছে? তখনি বুঝতে পেরেছে যে এই হচ্ছে ইলা। এবং আমাদের গ্রামেরই এক পুলিশের আইবি ছিল, হি আইডেন্টিফায়েড হার।


বাঙালনামা।। উনি যখন ধরা পড়ছেন, তখন পড়ছিলাম যে আরো অনেককে সেই সময়ে মেরে ফেলেছিল। আর ওনার ওপর তারপর অকথ্য অত্যাচার শুরু হয়…


মোহন মিত্র।। এই অত্যাচার তো পৃথিবীর ইতিহাসে খুব কম হয়েছে। যে থানায়ই নিয়ে গেছে সে থানায়ই রেপড হয়েছেন। যে থানায় প্রথমে নিয়ে গেল, সেখানে পুলিশরা রেপ করেছে, তারপর আরেকটা থানায় নিয়ে গেল, সেখানেও পুলিশ রেপ করেছে। এতো নৃশংস, নৃশংস। এবং কম্যুনিস্ট পার্টির যে তখন জেলে, ভানুদি, এরা বলেছিল যে তোমাকে উঠে দাঁড়িয়ে এইটা কোর্টে বলতে হবে। তখন মা একটু.. একটু.. দ্বিধাগ্রস্ত হয়েছিল। কম্যুনিস্ট পার্টি তাকে সে শক্তি দিয়েছিল যাতে সব কথা সে কোর্টে দঁাড়িয়ে বলতে পেরেছিল।


বাঙালনামা।। এটা তো তখনকার দিনে, এখনকার প্রেক্ষিতেও, একটা বিশাল বড় ব্যাপার।


মোহন মিত্র।। বিশাল বড় ব্যাপার। কেননা সমাজ তখন তো অন্যরকম সমাজ। রাদার এখনও, তুমিই বল, রেপড উওম্যানকে সমাজ কতখানি সম্মান দেয়। কিন্তু it was a glorious matter to everybody. It was glorious to us. যে একটা সংগ্রামের জন্য যদি জীবনের সবকিছু দিতে হয়, নো ম্যাটার। এটা কোনো ব্যাপারই না।


বাঙালনামা।। কিন্তু এই যে আপনাকে ছেড়ে, আপনার মনে হয় আটচল্লিশ সালে জন্ম, এবং আপনি ওনাকে আবার প্রথম দেখছেন ঢাকা হসপিটালে, চুয়ান্ন সালে। এর মধ্যে উনি জেলে থাকছেন, নানা অসুবিধায় পড়ছেন। এই যে দীর্ঘ সময় ধরে আপনার একা বেড়ে ওঠা, এটা পারিবারিক প্রেক্ষিতে কীভাবে দেখা হয়েছিল?


মোহন মিত্র।। আমার ঠাকুমা ছিল খুব শক্ত মহিলা। আমার বাড়ি ছাড়ার কথা আমার মনে আছে, আমাদের দেশের বাড়ি ছাড়ার কথা। (অ্যারেস্টের পর) পুলিশি অত্যাচার এমন দুর্ধর্ষভাবে বেড়ে গেল… আমাদের প্রচুর গরু ছিল, সে গরুগুলো একদিন টেনে নিয়ে চলে গেল। আমার চোখের সামনে মনে পড়ে, লালমণি বলে একটা গাই ছিল, আমাকে দুধ দিত যে। তা সে সব নিয়ে গেল। ঠাকুরদালান ছিল, সে দালান ভেঙে দিয়ে গেল। দিনের পর দিন অত্যাচার। কিন্তু গ্রামের মানুষ, সমস্ত আমাদের পক্ষে ছিল। এটা একটা অসাধারণ ব্যপাার। ঠাকুমাকে আমি তখন মা বলতাম। ঠাকুমাকে বলত, আপনাকে আমরা যেতে দেবনা এখান থেকে, আপনি থাকবেন। এবং ঠাকুমাও ঠিক করেছিল, আমরা থাকব, আমরা নড়ব না। আমি আর আমার ঠাকুমা, এই দু’জনই তখন বাড়িতে ছিলাম। আর সবাই চলে গেছে, কেউ ছিল না। আমরা ওখানে স্টিক করে ছিলাম। এবং গ্রামের মানুষ, মুসলমান অধ্যুষিত গ্রাম, তারা যেভাবে আঁকড়ে ধরেছিল আমাদের… বাবা তখন, নাচোল কেসে, এক নম্বর আসামী। পুলিশ খুন হয়ে যাবার পর, পুলিশের অত্যাচার সাতগুণ বাড়িয়ে দিল। প্রত্যেকদিনই এসে মারধোর শুরু করল। তারপর ঠাকুমার পক্ষে আর সম্ভব হল না, ঠাকুমা আমাকে নিয়ে বর্ডার পার করে চলে এলেন। তারপর আসার পরও অনেক দুর্ভোগ হয়েছে আমার জীবনে। আমি প্রথমে… আমার পিসতুতো দাদারা একটা মেস করে পড়তো এখানে… সেখানে এলাম। সেখানে ঠিক হল না আমাদের, তারপর আমরা জ্যাঠার বাড়িতে গেলাম। জ্যাঠার বাড়িতেও ঠিক পোষালো না। নানারকম কারণ। আমি ফ্লোটিং ভাবে ঘুরতে লাগলাম। একবার এখানে একবার ওখানে একবার সেখানে, এইভাবে চারদিকে ঘুরতে লাগলাম। যার জন্যে আমার প্রথম অ-আ শিক্ষা হয় সাত বছর বয়সে। তার আগে অ-আ শিক্ষা হয়নি। এবং সেটা বাবা আসার পরেই আমাকে পড়াতে শুরু করে।


বাঙালনামা।। …আর আপনার এই যে সাত বছর মা কে ছেড়ে একা বড় হওয়াটা, বাড়ির মধ্যে কোনো টেনশন সৃষ্টি করেছিল কি?


মোহন মিত্র।। না, বাড়ির মধ্যে কোনো টেনশন সৃষ্টি করেনি। আমরা সকলেই খুব গর্র্বিত বোধ করতাম। পশ্চিমবাংলায় তো বিরাট ব্যপাার। সেই সময় শম্ভু মিত্র ‘ইলা মিত্র’ কবিতাটা আবৃত্তি করছে সমস্ত জায়গায়, সুভাষদা তো আমাদের বাড়িরই লোক ছিল, সুভাষ মুখার্জী। সুচিত্রা মিত্র। এই যে গোটা সংস্কৃতি জগৎ, মায়ের মুক্তির দাবীতে কলকাতায় আন্দোলন চলছে। আমার ওপর তাই (মায়ের উপস্থিতির অভাব) কোনো (প্রভাব) ফেলেনি। কিন্তু চরম দুর্দশা এবং দারিদ্রের মধ্যে কেটেছে। এবং সেটা সারাজীবনই কেটেছে রাদার। কোনো সময়েই, এম এল এ হওয়ার পড়েও তার থেকে কোনো মুক্তি হয়নি (হাসি)।


বাঙালনামা।। আর যেটা বলার ছিল- পরবর্তীকালে, কলকাতায় যখন উনি রয়েছেন, পড়াচ্ছেন, সেই সময় এই যে এতদিনের এত লোকের সঙ্গে দেখা, বা এত কমরেড যারা একসাথে লড়াই করেছিলেন, মারা গেলেন, এঁদের কথা ফিরে ফিরে আসত কী?


মোহন মিত্র।। সব সময় আসত। সব সময়, সব সময়। এটাই ছিল বড় পরিপ্রেক্ষিত, সব সময়। এবং বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ নিবিড়। বাংলাদেশের কোনো লোক, মানে এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কোনো লোক কোনো সময় কলকাতায় যদি আসে, তাহলে তারা আমাদের বাড়িতে আসবেই। এমন কোনো লোক নেই… বাংলাদেশের বামপন্থী আন্দোলনের, এমনকি আওয়ামী লিগের সঙ্গেও যারা আছে, তারাও এ-বাড়িতে আসবে। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে সব কিছুতেই মা ও বাবা, আমরা এই বাড়ি থেকেই সংগঠিত করার চেষ্টা করেছি। মুজিবুর রহমান এবং মা একসঙ্গে জেল-এ ছিল, পাশাপাশি সেলে। ভাষা আন্দোলনের সময় মুজিবুর ঢাকায় অ্যারেস্ট হয়েছিলেন সে সময়ে। যখন স্বাধীনতা পেল বাংলাদেশ, তার পর মুজিবুর রহমান কলকাতায় এসেছিলেন। মা তখন এয়ারপোর্টে গেছিল। মাকে দেখে বলেছিল, ‘ইলা, তুমি এখানে কেন? এদেশে কেন? তোমার তো ওই দেশে থাকার কথা। তোমাকে আমি নাগরিকত্ব দেব। তুমি আমার দেশে ফিরে এস।’ মা বলছে, ‘আমার নামে তো এখনো কেস উইথড্র হয়নি। সব কেসই তো রয়ে গেছে।’ ‘না, সে সব কেস…’ হাসিনাও বলেছিল নাগরিকত্বের কথা। তারপর তো মারা গেল মা (২০০২ সালে)।


বাঙালনামা।। উনি যখন ধরা পড়েন, তখন তো রণদিভে লাইন চলছে। ওই সময় কম্যুনিস্ট পার্টির অনেক বড় বড় নেতা ধরা পড়ছেন। হয় আন্ডারগ্রাউন্ড, নয় জেলে। এবং উনি তখন ধরা পড়লেন। এর কী কোনো প্ড়ভাব পড়েছিল? এই যে ধরা পড়ার পর ওনাকে ছাড়াতে এত দীর্ঘ সময় লাগল, বাইরে এত অান্দোলন হচ্ছিল তা সত্ত্বেও।


মোহন মিত্র।। ছাড়া তো পায়নি। ওনাকে ছাড়েনি। ওনাকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। She was not released। তার যখন শরীর খারাপ তখন গর্ভনমেন্টের প্যারোলে বলা হল যে পৃথিবীর যে কোনো জায়গায় চিকিৎসার জন্য যেতে পার। চিকিৎসা করে তোমাকে আবার ফিরে আসতে হবে জেলে। তখন মা বলল যে আমি কলকাতায় যাব। কেননা আমার বড়মামা তখন ডাক্তার, এখানে, মেডিক্যাল কলেজে। তখন ওখানকার ডঃ আলম সাহেব, যে মাকে চিকিৎসা করেছিল, অসাধরণ মানুষ, তিনি প্লেনে করে মাকে কলকাতায় নিয়ে এলেন। এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ঢোকালেন। তারপর যখন সুস্থ হলেন, তখন তো প্রত্যেকদিন পুলিশ এসে বলছে যে ‘চলো। জেলে যেতে হবে এখন।’ সেটা নিয়ে তো বিরাট ব্যাপার। বিধান চন্দ্র রায়, তারপর জ্যোতিবাবুরা গিয়ে দরবার করল, হীরেন মুখার্জী দরবার করল নেহেরুর কাছে। ওদিকে ওরা বলছে প্রিজনার ফেরত দাও আমাদের কাছে। এই নিয়ে চলল। She was not released at all!


বাঙালনামা।। …আমি পড়ছিলাম যে ১৯৭২ সাল অবধি ওনাকে বারবার এরকম টানাহ্যাঁচড়া করা হয়েছে…


মোহন মিত্র।। প্রতিবারই। আমার মনে আছে, প্রতিবারই লোক এসে হাজির। চলুন, যেতে হবে আপনাকে। এটা তো চলেছে সমানে। তাইজন্যই তো যখন নাগরিকত্বর কথা বলেছিল মাকে, মুজিবুর রহমান, মা বলেছিল, ‘আমার নামে তো কেস এখনো ওঠেনি ওখানে। নাগরিকত্বের কথা আসে কী করে?’


বাঙালনামা।। আপনিও তো রাজনীতি করেছেন। এবার আপনাকে যদি কম্যুনিস্ট লিডার হিসেবে, মা হিসেবে নয়, ইলা মিত্রের মূল্যায়ণ করতে হয়, তাহলে আপনি কীভাবে করবেন? এটা দিয়েই আমরা শেষ করছি।


মোহন মিত্র।। আমি তো কম্যুনিস্ট পার্টির নেত্রী এবং নেতাদের সঙ্গে মিশেছি ছোটবেলা থেকেই। এমন কোনো নেতা-নেত্রী নেই যাদের চিনি না, জানি না, যাদের সংস্পর্শে আসিনি… গোটা ভারতবর্ষেরই। আমার মা কে যদি তাদের মধ্যে ফেলি, আমার যেটা সবসময় মনে হয়, মা একটা ব্যাপারে এগিয়ে — মার সাহস ছিল দুর্ধর্ষ। এত সাহসী মহিলা আমি কোনোদিনও দেখিনি। আমার জীবনে কোনো মহিলার এত সাহস দেখিনি। কেননা মা যখন MLA এখানে, ধর মানিকতলার MLA হয়েছে, কিম্বা যখন আমাদের বাড়ির সামনে রায়ট হ’ল, তখন দেখেছি – মা রাঁধছে, খুন্তি ফেলে দিয়ে, এক শাড়ি, নিচে ঝুলছে, রায়টের সামনে – আমাদের গোটা এলাকাটা মুসলিম অঞ্চল, পার্ক সার্কাস – সেখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে গিয়েছে সামনে, শাড়ি লুটোচ্ছে, বলছে, ‘থামো’। এই যে সাহস, মব-এর সামনে দাঁড়িয়ে পড়া, অসম্ভব সাহস, সব কিছুতে সাহস। এই সাহসটা আমি কোনো মানুষের মধ্যে দেখিনি। ১৯৬২ সালে গ্রেপ্তার হল, ১৯৭৪ সালে গ্রেপ্তার হল, কিন্তু অসীম সাহস। আর মনের জোর। এবং কোনো রকম ভণিতা ছিল না। খুব গুছিয়ে কথা বলতে পারতো না। আমরা যেমন, কোনো সময় কাউকে কোনো কথা বলতে গেলে অনেকরকম আড়াল করি – কিন্তু মার মধ্যে কোনো আড়াল ছিল না। স্ট্রেট কথা বলতে পারতেন, দ্বিধাহীন ভাবে কথা বলতে পারতেন। অনেকসময় হয়তো সেটা তার পক্ষে খারাপ গেছে। কিন্তু ট্যাক্টফুলি কখনো জীবনে বাঁচেননি। Whatever she thought, she did। এটা খুব কম নেতার মধ্যেই পাওয়া যায়। এই জিনিসটা আমি সারাজীবন দেখেছি তার মধ্যে। এবং যে কোনো জিনিস তাড়াতাড়ি আয়ত্ব করে নেওয়া। ধর এই বয়সে, ঐখান থেকে আসার পর, এত অত্যাচারিত হওয়ার পর… বাবা তো হোলটাইমার, রোজগার কি করে হবে? তাকে তো কিছু একটা করতে হবে। বাবা তখন পার্টি অফিসে বসছে, সে তো কোনোদিনও কাজ করবে না, সে তো পার্টি হোলটাইমার। আমাদের সংসার চলবে কী করে? সংসার তো চলে না তখন। একটা ঘরে, কোনোরকমে একটা বস্তি ঘরে আমরা থাকছি। সে সময় মা দেখছি কঠিন ভাবে পড়ছে। এম এ পরীক্ষা দেওয়ার জন্য। এম এ পরীক্ষা দিয়ে তাকে পাশ করতে হবে, পাশ করে তাকে চাকরি করতে হবে। তখন শঙ্খ ঘোষ খুব সাহায্য করেছিলেন, শঙ্খ ঘোষও ঐ ব্যাচের, মা’দের ব্যাচের। সৌমিত্রকে দেখেছি বই দিয়ে যেতে। এরা সব আসতো মাকে বই টই নোট টোট দিতে। এবং সে পরীক্ষা দিল ‘৫৭-এ। পাশ করে তারপর টিউশনি করতো। তারপর সে সিটি কলেজে চাকরি পেল, সিটি কলেজে চাকরি পাওয়া নিয়েও…কম্যুনিস্টদের চাকরি দেয় না, ব্রাহ্ম কলেজ ওটা। তবুও কোনোরকমে চাকরি পেয়ে সংসারটা কোনোরকমে চালাল। এই যে মনের জোর, আমাকে করতেই হবে। আমাকে পড়তেই হবে। এতবছর কন্টিন্যুয়েশন নেই লেখাপড়ার। এই অদম্য মনের জোর খুব কম মানুষের থাকে। আমরা হাল ছেড়ে দিই। মাকে কোনোদিন কোনো ব্যাপারে হাল ছাড়তে দেখিনি, শেষ জীবন পর্যন্ত। এবং মা তো স্পোর্টসউওম্যান ছিল, এখানে সমস্ত স্পোর্টসের ব্যাপারে সে থাকত, ইউনিভার্সিটির স্পোর্টস, বেঙ্গল স্পোর্টস। মরার একমাস আগেও ‘ইলাদি, আমাদের বেঙ্গল টীম যাচ্ছে চন্ডীগড়ে, স্যুইমিং টীম’… মা তো খুব ভালো সুইমার ছিল… ‘আপনি ম্যানেজার হিসাবে যান’। মা চলল সেই স্যুইমিং টীম নিয়ে। আমরা বললাম, ‘মা তোমার শরীর খারাপ’। বলত, ‘ধুর! ছাড়তো! আমি পারব’। চলে গেল। এই অদম্য মনের জোর। কোনো সংগ্রামে সবসময় এগিয়ে যাওয়া। তাত্ত্বিক আলোচনার থেকেও উনি ব্যবহারিক কাজ করতে ভালোবাসতেন।


বাঙালনামা।। ওনার যে মাস-অ্যাপিলটা ছিল, সেটা হয়তো এই সব কারণেই..?


মোহন মিত্র।। নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই। তাত্ত্বিকতার কচকচানি বেশি উনি করতেন না। যেটা আমরা করি (হেসে) পলিটিক্যাল লাইন, কি লাইন, কি মার্ক্সিজম, জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব না জনগণতান্ত্রিক বিপ্লব – এই নিয়ে প্রচন্ড আলোচনা। ঘরের মধ্যে আমরা তুলকালাম করি। মা এত বেশি ওসব করতো না। কিন্তু পলিটিক্যাল লাইন নিয়ে বক্তৃতা দেওয়ার হলে সুন্দর বক্তৃতা দিতে পারত। অসামান্য বক্তৃতা দিতে পারতেন তিনি।


বাঙালনামা।। এখানেই শেষ করছি আজকের মত। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমাদের এতখানি সময় দেওয়ার জন্য, আপনার অভিজ্ঞতা ও স্মৃতি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।


মোহন মিত্র।। ধন্যবাদ তোমাদেরও।

2 Responses to “ইলা মিত্র ও নাচোল বিদ্রোহ – আলাপচারিতায় মোহন মিত্র”

  1. Pranab De said

    I extend my whole-hearted thanks to the Editor, Bangalnama for holding and publication of interview with son of most fighting and courageous lady of Tebhaga Movement. It is the best piece, in my opinion, in this issue. Let us not forget this lady.

  2. Tapash Majumder said

    অসম্ভব প্রাণিত হলাম মোহন মিত্রের এই সাক্ষাৎকারটি পড়ে। আমরা কিছু কিছু ঘটনা জানতে পেরেছি আগেই মালেকা বেগমের বই পড়ে। তার অনেক কথার সমর্থন এখানে যেমন পেলাম তেমনি নতুন কিছু তথ্য জানা গেল। আমার কাছে সবসময়ই ইলা মিত্র একটি বিস্ময়ের নাম। তিনি জমিদার ঘরের বউ অথচ সাধারণ কৃষকদের পাশে বিশ্বস্ততার সঙ্গে দাঁড়িয়েছেন। তিনি পুরোদস্তুর একজন কমিউনিস্টের সাথে ঘর বেঁধেছেন। তিনি সন্তান জন্ম দেয়ার ১০ দিনের মাথায় অনিশ্চিতের পথে পা বাড়িয়েছেন। তিনি কৃষকদের সাথেই থাকছেন, তাদের সাথেই খাচ্ছেন, এটা কল্পনা করাও কঠিন। তিনি ভনিতা না করে দ্বিধাহীন ভাবে কথা বলতেন। এই সাহসী ত্যাগী মানুষটির জন্য আমার অন্তরের গভীর থেকে শ্রদ্ধা ও প্রণাম জানাই।

    ইলমিত্রের নামে রাজশাহীতে কোন প্রতিষ্ঠান দেখিনি। সেজন্য আমরা কয়েকজন এই রাজশাহীতে তার জন্ম মাসে (অক্টোবর) ইলা মিত্র শিল্পী সংঘ নামে ২০১০ সালে একটি সংগঠন গড়ে তুলি। ১২ বছর চলছে গান শেখানো, আবৃত্তি করা এবং নাটক নিয়ে সংগঠনটি কাজ করছে। মোহন মিত্র মহাশয় কোথায় আছেন ঠিক জানিনা। যদি তাকে একবার এখানে এনে দেখাতে পারতাম ভালো লাগতো।

Leave a comment