বা ঙা ল না মা

আমোদিনীর হেঁশেল

Posted by bangalnama on July 6, 2009


আমোদিনী সেন শ্বশুরবাড়ি চললে – বারো বছরের মেয়ে। ইংরাজি ক্যালেন্ডারে সাল ১৯০০। মেয়েটির কোনও স্কুলে বা বাড়িতে ধারাবাহিকভাবে পড়াশুনো করা হয়নি। তবুও দাদাদের দেখে দেখে তাদের কাছ থেকে লিখতে আর পড়তে শিখেছে, বেশ ভালই শিখে ফেলেছে। বুদ্ধি অতি চৌকস, সবকিছুতে প্রশ্ন আছে – কে? কবে? কিভাবে? কেন? কেন? কেন?

অল্প বয়সেই রান্না শিখেছে, আর সে কি সাধারণ রান্না! ঢাকা-বিক্রমপুরের বিখ্যাত রান্না, তবে নিজের পছন্দমত এক-আধটুকু বদলে নেওয়া। শ্বশুরবাড়ি গিয়ে আমোদিনী শ্বশুরমশাইকে নিজের বাবার মতন করে পেল – স্নেহশীল, ধৈর্য্যবান – এবং তিনি পেলেন ছোট্ট আমোদিনীকে তাঁর কন্যাসন্তান হিসেবে। আমোদিনীর হেঁশেল এখান থেকেই শুরু হয়।

প্রথম থেকেই ভাঁড়ারঘরের চাবি হাতে নিয়ে পরিবারের খাবারের ভার নিল সে। বঙ্গদেশের ফল, ফসল, আনাজ, মাছ, ধানের তখন খুব প্রাচুর্য্য ছিল। ইলিশ মাছের দাম দু’আনায় এক হালি (চারটে মাছ) – তাই নিয়েও প্রচন্ড তর্কাতর্কি, বেশি দাম বলে!

রান্নাঘরে আমোদিনী নিজের মনে রান্না করে যায়। খাবার আর পুষ্টির সম্পর্কটা কোনো সময় বোধহয় মাথায় ঢুকে ছিল – তাই প্রথম থেকেই ওঁর রান্না অল্প তেল আর অল্প মশলায় তৈরি। বাঙাল রান্নার মূল সুর হল ফোড়নের জোরে রান্নার কেরামতি। কোন ফোড়ন কিসে দিলে স্বাদ ভাল হয়, সেটা খানিকটা শেখা আর খানিকটা নিজস্ব রুচি। আমোদিনীর তাই সবরকমের খাবারের উপর একটা আকর্ষণ ছিল। আর শুধু স্বাদই নয়, খাবারের চেহারাতেও কত জোর থাকে, সুন্দরভাবে সাজিয়ে খাবার পরিবেশনেও যে কত আনন্দ! তখনকার দিনে মেয়েদের অন্দরমহলে দু’প্রকারের চর্চা ছিল প্রধানতঃ – কে কিভাবে সাজল এবং কি নতুন গহনা পরল, আর কে কি রান্না করল। আমোদিনীর দ্বিতীয় বিষয়েই বেশি আকর্ষণ ছিল। নতুন নতুন রান্না, খাবার, মন্ডা-মিঠাই বানাতে খুব ভালবাসতেন। সকাল সকাল রান্না সেরে ফেলে, উনানের আঁচ কমতে থাকাকালীন নানান রকমের তরকারি পুড়িয়ে পরবর্তী দিনের রান্নার প্রস্তুতি হত। বেগুনপোড়া, কাঁচকলা-পোড়া, নারকেলের কোরানি দিয়ে চিকন চিঁড়া – এসব কাঠকয়লার শেষ আঁচে বানানো হত। এই সময় বসে বসে রান্নাবাড়ি নিয়ে অনেক কিছু চিন্তা করতেন। আশেপাশের মুসলমান বাড়ির বিভিন্ন রান্নায়ও ওনার নজর পড়ে। এখানে একটা গল্প বলি।

তখনকার দিনে হিন্দু পরিবারে মুর্গী খাওয়া নিষেধ ছিল। আমিষ রান্নাঘরে মাছ ছাড়া কেবল পাঁঠা আর কাছিমের মাংস খাওয়া হত। পূর্ববঙ্গে এতরকমের মাছ পাওয়া যেত – তাজা এবং শুঁটকি – যে অন্যরকমের মাংস ইত্যাদি খাওয়ার চল খুব কম ছিল। বিয়েবাড়ি বা পুজোর সময় ছাড়া প্রায় মাংস খাওয়াই হত না। তবে মুর্গী রান্নাঘরে ঢুকত না।

আমোদিনীর একদিন মুর্গী খাওয়ার ইচ্ছে হল। শ্বশুরবাবাকে গিয়ে একথা বললেন। তিনি তো শুনে হতবাক! বাড়ির বউ মুর্গী খেতে ইচ্ছুক! এমন সমস্যা কোনোদিন পরিবারে দেখা দেয়নি। মুর্গী রান্নাঘরে ঢুকলে নির্ঘাৎ বাড়ির সকলের জাত যাবে। কিন্তু শ্বশুরমশাই আমোদিনীকে নিজের মেয়ের আবদারে রাখতেন। দাবিটাকে যাচাই করে দেখলেন। ওনার নিজেরও বোধহয় সংস্কারে পুরোপুরি অন্ধবিশ্বাস ছিল না। কিছুক্ষণ ভেবে বললেন, “বাড়িতে তো মুর্গী রান্না করা যাবে না।” এই বলে খানিকক্ষণ চুপ করে রইলেন। তারপর গম্ভীর স্বরে বললেন, “বাড়ির বাইরে রান্না করা যাবে।” আমোদিনী বাড়ির বাইরে, একটা আম গাছের তলায় মুর্গী আনিয়ে রান্না করে খেলেন – প্রথমে একা, তারপর তাঁর বরও খেলেন। একটা সংস্কার ভেঙে গেল।

কিন্তু ওঁর মুর্গীর মাংস পছন্দ হল না, তাই উনি আর খেলেন না।

এই প্রসঙ্গে মাংস রান্নার একটা পদ্ধতি দিলাম।

আমোদিনীর বাড়িতে পেঁয়াজ-রসুনের রান্না হত না – বোধহয় ওঁদের পেঁয়াজ ছাড়া রান্না ভাল লাগত।

কষা মাংস


কি কি লাগবেঃ
পাঁঠার মাংস – ১ কেজি
আলু (৩-৪) – আধখানা করে (মাংসের আলুকে ফালা করে টুকরো কাটা হয় না)
আদা বাটা – ১/২ পেয়ালা পরিমাণ
জিরা বাটা – ১/২ পেয়ালা পরিমাণ
হলুদ বাটা – ১ বড় চামচ
লঙ্কা বাটা বা গুঁড়ো – ১-২ চামচ (এটা নিজের ইচ্ছামত দিতে পারেন)
দই – ১ পেয়ালা
টমেটো – ১ খানা কুচোনো
দারচিনি – ২-৩টে বড় টুকরো
তেজপাতা – ২-৩
লবঙ্গ – ৩-৪
বড় এলাচ – ৩-৪
তেল – ১/২ পেয়ালা
লবণ, চিনি – নিজের ইচ্ছা/স্বাদ মত


প্রণালীঃ
মাংসটাকে দই, আদাবাটা আর হলুদ দিয়ে ঘন্টা দুই মেখে রাখতে হবে। তেল গরম করে প্রথমে তেজপাতা আর গোটা গরম মশলা ফোড়ন দিতে হবে। সুবাস বেরোলেই আলুগুলো দিয়ে অল্পক্ষণ ভাজতে হবে, তারপর মাংসের টুকরোগুলো দিয়ে একসঙ্গে ভাজতে হবে। আঁচ যেন কম থাকে এসময়টাতে। মাংস একটু লালচে হলে জিরাবাটা দিয়ে আরো আধঘন্টা ধীমে আঁচে ভাজতে হবে, কড়াই বা রান্নার পাত্রটা ঢাকা দেওয়া থাকলে ভাল হয়, মাঝে মাঝে একটু নাড়াচাড়া করলেই হবে। প্রয়োজন হলে আরেকটু হলুদবাটা দেওয়া যেতে পারে। শুকনো হয়ে এলে অল্প জল (বড়জোর ১-২ চামচ একেকবারে)দিয়ে মাঝে মাঝে নাড়তে হবে, যাতে মাংসটা নরম হয়ে যায়। রান্নার শেষ আধঘন্টায় লবণ আর চিনি(ইচ্ছা হলে, কারণ বাঙাল রান্নায় চিনির ব্যবহার কম) দিতে হবে। মাংসে ঝোল চাইলে জল বেশি দিতে হবে, কারণ রান্না করে রেখে দিলে আলুগুলো জল টেনে ঝোলটা এমনিতেই শুকিয়ে যাবে।


আমোদিনী’র পরামর্শঃ যদি খাসির মাংসে গন্ধ থাকে, তাহলে ভাজার সময় একটু হিং দিলে গন্ধটা চলে যাবে।

ছবি ১ – কষা মাংস

ছবি ১ – কষা মাংস

ক্রমশ আমোদিনীর গৃহে ন’টি সন্তান জন্ম নেয়। সবাইকে ভাল পুষ্টিকর খাবার দেওয়াটা একটা চিন্তার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। রান্নাঘরে তখন সবচেয়ে দামী বস্তু ছিল তেল, তাই সব রান্নাই অল্প তেলে হত। তরিতরকারির ছাল, খোসা, ডাঁটা, পাতা, শিকড় সবই রান্না হত, কিছুই ফেলান যেত না। বাড়ির পাশে একটা ছোট বাগিচায় পুঁইশাক, কুমড়ো, লাউ, কাঁচালঙ্কা, ধনেপাতা, শসা হতই আর বেড়ার বাড়ির চালে চালকুমড়ো।


আমোদিনীর রান্না মুগডালের একটা পদ্ধতি বলি। বাঙাল রান্নায় সবরকম পদে তরকারি দেওয়া থাকে। এটাতে পুষ্টিও বেশি এবং একই পদে অনেকজনকে খাওয়ানোর সুবিধাও হয়।


দিদিমণি’র ডাল ১ (কাঁচা মুগের ডাল)


কি কি লাগবেঃ
মুগ ডাল – ১ পেয়ালা (বেছে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে)
লাউ – ১(ছোট) খোসা ছাড়িয়ে ডুমো ডুমো করে কাটা (খোসা গুলো তুলে রাখবেন, ও দিয়ে ভাল খোসাভাজা হয়)
হলুদ গুঁড়ো – ১ ছোট চামচ
তেজ পাতা – ২
জিরা (আস্ত) – ১ ছোট চামচ (ভরা)
ঘি – ২ বড় চামচ
শুকনো লঙ্কা – ২
ধনেপাতা (কুচোনো) – ২ চামচ
কাঁচালঙ্কা – ২-৩
লবণ, চিনি – আন্দাজমত


প্রণালীঃ
ডালটা হলুদ আর একটু লবণ দিয়ে ফুটিয়ে নিতে হবে। ডাল ফুটে উঠলে উপরে ভেসে ওঠা ছ্যাকড়া (সাদা ফেনা) তুলে ফেলে দিতে হবে। তারপর তেজপাতা, কাঁচালঙ্কা (গোটা) আর লাউ ডালে দিয়ে আরো আধঘন্টা মত আঁচ কমিয়ে ফুটিয়ে নিয়ে, শেষের পাঁচ মিনিটে ধনেপাতা আর চিনি দিতে হবে।


আলাদা ছোট পাত্রে ঘি গরম করে, শুকনো লঙ্কা আর আস্ত জিরা তাতে ভেজে নিয়ে গরম ডালে ফোড়ন দিতে হবে।

ছবি ২ - দিদিমণি’র ডাল ১ (কাঁচা মুগের) ও লাউয়ের খোসা ভাজা।

ছবি ২ - দিদিমণি’র ডাল ১ (কাঁচা মুগের) ও লাউয়ের খোসা ভাজা।


দিদিমণি’র ডাল ২ (ভাজা মুগের ডাল)

কি কি লাগবেঃ
মুগ ডাল – ১ পেয়ালা (বেছে পরিষ্কার করা, কিন্তু ধোয়া হবে না। শুধু একটা পরিষ্কার কাপড়ে মুছে নিতে হবে, ধোয়া হবে পরে)
হলুদ গুঁড়ো – ১ ছোট চামচ
তেজপাতা – ২
শুকনো লঙ্কা – ২
জিরা (আস্ত) – ১ ছোট চামচ
ঘি বা তেল – ২ ছোট চামচ
ইচ্ছা করলে এই ডালের সাথে কড়াইশুঁটি, পালংশাক বা মাছের মাথা (টুকরো করে হলুদ আর লবণ মাখিয়ে ভেজে) দেওয়া যায়।

প্রণালীঃ
ডালটাকে একটা শুকনো লোহার পাত্র বা যেকোনো ভারী কড়াইতে শুকনো খোলায় ভাজতে হবে। ভাজার সময় সারাক্ষণ ডালটাকে নাড়াতে হবে যাতে পুড়ে না যায়। ভাজা মুগডালের সুবাস বর্ণনা করা মুস্কিল, সে এক অপূর্ব গন্ধ!

ডাল ভেজে উঠলে কড়াইটা নামিয়ে ডালটাকে জলে ধুয়ে নিতে হবে। তারপর হলুদ আর লবণ দিয়ে ফুটিয়ে ছ্যাকড়া(সাদা ফেনা) ফেলে দিতে হবে। তেজপাতা দিয়ে আরেকটু সেদ্ধ করতে হবে। ভাজা মুগ ডাল কিন্তু সেদ্ধ করলেও যাতে একেবারে গলে না যায় সেটা খেয়াল রাখতে হবে। এই সময় কড়াইশুঁটি, পালংশাক বা মাছের মাথা দিতে চাইলে দেওয়া যেতে পারে।


শেষে শুকনো লঙ্কা আর জিরা, ঘি বা তেলে ভেজে, ফোড়ন দিতে হবে।

আমোদিনী সেন দাশগুপ্ত

আমোদিনী সেন দাশগুপ্ত


আমোদিনীর এতবড় পরিবারকে সবসময় মাছ-মাংস খাওয়ানো যেত না। কখনো দুধ বা দইয়ে যুগিয়ে যেতেন পুষ্টির চাহিদা। স্বামী অনুকূল বাবুর কর্মসূত্রে ওঁরা এরপর ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে চলে যান। সেখানে নতুন ধরনের খাবার দাবার – শুঁটকি মাছ, বাঁশের কঞ্চি, বাঁশের কচিপাতা, ব্যাঙের ছাতা, ইত্যাদি দিয়ে রাঁধতে শিখলেন। চট্টগ্রামের খাবারে অনেক বেশি লঙ্কা এবং রসুনের ব্যবহার আমোদিনীর রান্নার ঢং কিছুটা বদলেছিল। ওখানকার খাবারের মধ্যে যেটা উনি পছন্দ করতেন না আর কোনোদিন বানাননি, সেটা হল গেঁড়ি-গুগলি – নদী আর সমুদ্রের মোহনায় পাওয়া যেত। ওঁর ধারণা ছিল ওগুলো অপরিষ্কার জিনিস। সত্যিই দেখা গেল যে যারা ওগুলো খেত, তাদের পেটের অসুখ অনেক বেশি হত।


আমোদিনী’র হেঁশেলের তো আরো অনেক কাহিনী আছে, কিন্তু আজ এখানেই প্রথম অংশটা শেষ করি। পরবর্তী কোনো সংখ্যায় বাকিগুলো লিখব। যাবার আগে একটা গল্প বলে যাই।


আমোদিনীর পরিবারের সকলেই খুব লম্বা ছিলেন, শুধু কনিষ্ঠ পুত্র আর লম্বা হয় না, সে চিরকালই ছোট সাইজের। তার জন্মের এক বছর পরই তার ছোট বোনের জন্ম হয়, তাই বোধহয় তার দুধ খাওয়াটা পূর্ণ হয়নি। আমোদিনী জানতে পারলেন যে বাচ্চাদের নাকি ক্যালসিয়ামের অভাবে হাড়ের দোষ হয় এবং তারা ঠিকমত বেড়ে উঠতে পারে না। ভিটামিনের দামী টনিক কিনবার টাকা ছিল না। খোঁজখবর করে বড় ছেলেদের কাছ থেকে জানলেন যে ক্যালসিয়াম নাকি চুনে পাওয়া যায়। ছোট ছেলে তখন ম্যাট্রিক পরীক্ষার প্রস্তুতি করছে। সকলে বেচারাকে নিয়ে হাসাহাসি করে, “তুই তো একটা হাফ-টিকিট!” (তখন সিনেমাতে বাচ্চাদের হাফ-টিকিটে প্রবেশ হত)। আমোদিনী পানের জন্য রাখা চুন নিয়ে একটা কৌটোতে রাতভর ভিজিয়ে রেখে, পরদিন ছেলেকে চুনের জল খাওয়াতে লাগলেন। ছ’মাস পরে ছেলে ছ’ফুট চার ইঞ্চি লম্বা হয়ে গেল। সেটা চুনের জলের কেরামতি না কপাল, কে জানে! কিন্তু ক্যালসিয়াম আর হাড়ের ব্যাপারে, আমোদিনী – একটি সাধারণ অশিক্ষিতা মহিলা – সঠিক পথেই চলেছিলেন।

(চলবে..)


লেখা ও ছবি – দেবলীনা সেন
প্রতিলিখন – প্রিয়াঙ্কা রায়

4 Responses to “আমোদিনীর হেঁশেল”

  1. Purush maanush howaa shottwe’o aamaar ranna’r deeke ektu aadhtu jhonk aachhe. Ei lekha’ti daarun upobhog shohokaar’e porlaam. Penyaaj baad diye kosha maanghso, hing’er hint, ityadi niye shiggir experiment korbo thik korechhi. Ekhaanei eshe jaanaabo byapaar’ti kemon holo!

  2. brishti said

    দেবলীনা সেন এর কৃপায় ‘আমোদিনী’র হেঁশেলে’এ ঢুকে দারুণ সুরভিত, সেই সাথে ঋদ্ধ হলাম
    পেঁয়াজ ছাড়া মাংস রান্না…করে দেখতে হবে তো !
    আগামীতে আমোদিনী কি নিয়ে আসে তা জানার জন্যে অধীর অপেক্ষায় রইলাম ঃ)

  3. […] https://bangalnama.wordpress.com/2009/07/06/amodinir-hneshel/ […]

  4. […] আমোদিনীর হেঁশেল […]

Leave a comment