স্মৃতি-রাঙানো বিবর্ণ ঈদ।
Posted by bangalnama on September 30, 2008
দুই বাঙলার বাঙালী ভাসছে দুই ভিন্ন উৎসব-আনন্দে…দুর্গাপূজা আর ঈদ-উল-ফিতর দুটোই এবার পর পর এসে গেছে…
দেশে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ঈদ হত, বিদেশে সব কিছুই হিসেব মত চলে। যে কোন উৎসবই যে তারিখেই হোক না কেন, সবই শেষ অব্দি গড়িয়ে পড়ে পরের weekend-এ। সেই হিসাবে এখানে ঈদ গিয়ে পড়ছে সামনের শনি-রবিবারে (৪’ঠা/৫’ই অক্টোবর)।
ধর্ম ও ইতিহাস – ঈদ-উল-ফিতর মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রধান দুটি ধর্মীয় উৎসবের অন্যতম। ঈদ আর ফিতর দুই-ই আরবী শব্দ। পবিত্র রমজান মাসের সিয়ামের চাঁদ দেখে রোজার সাধনা ও সংযম পালনের পর সাওয়াল মাসের পয়লা তারিখে নতুন চাঁদ দেখে উপবাস ভঙ্গ করে স্বাভাবিক কর্মময় জীবনে ফিরে যাওয়ার আনন্দময় দিনটির নামই ঈদ-উল-ফিতর। এইসময় ষড়রিপু (কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্য) কে দমন করে রাখার সর্বাঙ্গীন চেষ্টা নেওয়া হয়। এই কারণে ফিতর শব্দটি বিজয়ার্থেও ব্যবহার করা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে যেসব প্রধান ধর্মীয় উৎসব পালিত হয়, সেগুলোর মধ্যে ঈদ-উল-ফিতর হচ্ছে কনিষ্ঠতম। এই মহান পুণ্যময় দিনটির উদযাপন শুরু হয় আজ থেকে মাত্র ১৩৮০ সৌরবর্ষ আগে। হজরত মহম্মদের(স: ) মদিনাতে হিজরতের পর পরই ঈদ-উল-ফিতর উৎসব শুরু হয়।
ঈদের আয়োজন ও আজকের বাংলাদেশ – এখন রোজার মাস প্রায় শেষের পর্যায়ে। সারাদিন উপবাসের পর সন্ধ্যার আজানের সাথে সাথে সাধ্য অনুযায়ী ইফতারের আয়োজন করা হয় ঘরে ঘরে। পথে-ঘাটে সাজিয়ে বিক্রি করা হয় নানা ধরনের ইফতার সামগ্রী। এক সাধারণ বাঙালীর বাড়িতে ইফতার হিসাবে থাকে – মাগ্রিবের আজানের সাথে শরবত (লেবু ও দইয়ের, কখনো রুহ্-আফজা নামক পানীয়ের) খেয়ে রোজা ভাঙ্গা হয়। এরপর আসে ভেজা কাঁচা ছোলার ডাল (আদাকুচি, নুন ও কখনো লেবু দিয়ে), বেগুনি, পেঁয়াজি, মরিচা, চপ, হালিম, জিলাপি, দু-তিন রকমের ফল (খেজুর অবশ্যই), ও ছোলার ঘুগনি মুড়ি দিয়ে (এটাই প্রধান খাদ্য)।
[হালিম কি করে বানাবেন – এটা হালিম বানানোর খুব সহজ ঘরোয়া পদ্ধতি, বিশেষত প্রবাসীদের জন্য। কেজিখানেক হাড়ছাড়ানো খাসির মাংস কে পেঁয়াজ, আদা-রসুনের পেস্ট, নুন, হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কার গুঁড়ো ও দু গ্লাস জল দিয়ে সেদ্ধ করে নিতে হবে। আধা কাপ করে চাল, মুসুর ডাল, মাসকলাই, গম, ও ছোলার ডাল সারারাত ভিজিয়ে রেখে পর্যাপ্ত জল ও দু’চামচ হালিম মশলা দিয়ে প্রেসার কুকারে রান্না করতে হবে। মাংসটা সেদ্ধ হয়ে গেলে হাল্কা তেলে ভেজে নিয়ে প্রেসার কুকারে বাকি জিনিসের সাথে দিয়ে আরো আধা ঘন্টা রাখতে হবে। পেঁয়াজকুচি করে নিয়ে তেলে ভাল করে বেরেস্তা করে নিতে হবে। তারপর একটা মাটির পাত্রে সব হালিম ঢেলে নিয়ে তার উপর পেঁয়াজ বেরেস্তা, আদাকুচি, অল্প ঘি, লেবু ও পুদিনা পাতা দিয়ে গরমাগরম পরিবেশন করতে হবে।
চলতি রমজান মাসে আমার পর-বাসে ইফতারের আয়োজন করেছিলাম। হালিম কে সুস্বাদু বানাবার মূল রহস্য হচ্ছে মাটির পাত্রে পরিবেশন করা। তা সে আমার ছেলে রুবাইয়াতের কিনে আনা Wal-Mart-এর মাটির পাত্রই হোক না কেন! বাংলাদেশে প্রচলন আছে হালিম বানিয়ে তার নামকরন করার, যাতে সেটা আরো সুস্বাদু হয়। ঢাকার সবচেয়ে জনপ্রিয় হল “মামা-ভাগ্নে হালিম”। আমার ছেলে হালিম বানিয়ে এনে তার নাম দিয়েছিল “ভাইবোন হালিম”। 😀]
চাঁদ রাত থেকেই শুরু হয়ে যায় ঈদের আনন্দধারা…চারিদিক যেন ঝলমল করে ওঠে উৎসবের আনন্দে। ইদ উৎসব বাংলাদেশে খুবই জাঁকজমকের সাথে পালন করা হয়। যে যার সাধ্য অনুযায়ী ভালো পোষাক পরে এবং ভালো খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করে। আত্মীয়স্বজন-পাড়াপড়শীরাও এই আনন্দের শরিক হয়।
রমজান শুরু হতে না হতেই লেগে যায় কেনা-কাটার হিড়িক। পাল্লা দিয়ে চলে ঈদের বাজার। ছেলে-মেয়েদের পোষাক-আষাকে থাকে হিন্দি ফিল্মের নামের ছড়াছড়ি (এক সময়ে বান্টি ও বাবলি নামের সালোয়ার কামিজ ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছিল)।
বাঙালীর উৎসব-অনুষ্ঠান মানেই খাওয়া-খাদ্যবহুল। সবকিছু মিলে যায় শেষে যেন সেই পেটপূজাতে, খাবার টেবিল-চেয়ারে বসে।
ঈদের দিন সকালে – ফিরনি, সেমাইয়ের পায়েস, চালের আটার রুটি, ভাজা মাংস, ইতাদি খাওয়া হয়।
ঈদের দুপুর ও রাত – বিরিয়ানি (পোলাও) – বোরহানি সহযোগে, মুর্গীর কোর্মা, খাসির ঝাল বা রেজালা, শামী কাবাব স্যালাড সহযোগে, পরিবেশন করা হয়।
[বোরহানি কি করে বানাবেন – কাঁচালঙ্কা ও পুদিনাপাতা বাটা, ধনে-জিরা গুঁড়ো, সাদা গোলমরিচ গুঁড়ো, সর্ষেগুঁড়ো, নুন,(চিনি, ইচ্ছা হলে) এবং ভালো করে ঘাঁটা দই – সব একসাথে ব্লেন্ডারে দিয়ে দু-তিন মিনিট ব্লেন্ড করে নিয়ে ফ্রীজে রেখে ভাল করে ঠান্ডা করে বরফকুচি দিয়ে পরিবেশন করতে হবে।
বাংলাদেশে অনেকে বোরহানি ছাড়া বিরিয়ানি খাবার কথা ভাবতেও পারেন না।]
এই উপলক্ষে তিনদিন সরকারী ছুটি দেওয়া হয়, তাই গ্রামপ্রধান বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরবাসী চাকুরেরা নিজেদের গ্রামে গিয়ে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে ঈদের আনন্দ উপভোগ করে।
এই দিন মাথাপিছু নির্দিষ্ট হারে গরিবের ‘ফিতরা’ বা অনুদান ধর্মীয় দিক থেকে বাধ্যতামূলক। তাছাড়া তাদের সাধ্যমত খাবার, কাপড়-চোপড়ও দেওয়া হয়।
মুসলমানরা এই ঈদের দিনে দুই রাকাওয়াতের নামাজ পড়ে, বয়স-নির্বিশেষে কোলাকুলি বা পা ছুঁয়ে সালাম করার রেওয়াজ চালু আছে। সালাম করার পর ছোটদের ‘ঈদি’(পকেটমানি) দেওয়া হয়, যা তাদের কাছে অন্যতম প্রধান ঈদের আকর্ষণ বলে বিবেচিত।
রেডিও-টেলিভিশনে বিশেষ আনন্দ-অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়, যা ঈদের আনন্দকে বাড়িয়ে তোলে বহুগুণ। অনেকেই প্রায় সারাক্ষণ টেলিভিশনের সাথে সেঁটে থাকেন।
প্রবাসে ঈদ –
কিছু আগে দেশ থেকে আসা টেলিফোনে জানলাম অক্টোবরের ১ বা ২ তারিখে ঈদ (চাঁদ দেখা সাপেক্ষে)। আজ (২৭’শে সেপ্টেম্বর) এই লেখার খসড়া করলাম আর ভেজা চোখের সামনে ছায়াছবির মত ভাসতে থাকল – হাড়-কাঁপানো শীতের সকালে ঘুম থেকে উঠে গরম পানিতে চান করে নতুন কাপড় পরা, মায়ের হাতের সিমাইয়ের পায়েস খাওয়া, বাবা-ভাইয়েরা নামাজ পড়ে ফিরে এলে সবাই মিলে মা-বাবা আর বাড়ির বড়দের পা ছুঁয়ে সালাম করা, দুপুরে পোলাও-কোর্মা খাওয়া, বিকেলে পাড়া বেড়াতে যাওয়া, সন্ধ্যাবেলা হতে না হতেই টিভির সামনে বসে পড়া…
মা উপরে, বাঙলা মা ওপারে। তবুও ঈদ আসে, ঈদ যায়। কোথাও “কেহ” নাই…
শেষঅব্দি থাকে কেবল বাঙালনামা।
সূত্র –
১। বাঙলাপিডিয়া ডট কম (http://www.banglapedia.com)
২। দ্যা ডেইলি স্টার (http://thedailystar.net)
৩। প্রথম আলো(http://www.prothom-alo.net)
রচনা ও ছবি সৌজন্যে – বৃষ্টি সইদ
[বাংলা হরফে প্রতিলিখন – প্রিয়াঙ্কা রায়]
If you are unable to read this article in bengali font, see the PDF format below :
Somnath said
maskolai-ke ingriji-te ki bale?
Andromeda said
maskalai sambhabato urad dal. amader barite Beuli’r daal o boley.