বা ঙা ল না মা

কৈফিয়ৎ

Posted by bangalnama on July 6, 2009


গত বছর … অগস্টের মাঝামাঝি, উঠিল বাজনা বাজি … হই হই করে ব্লগষ্ঠ প্রজেক্ট-বাঙালনামা। দেখতে দেখতে বছর ঘুরতে চলল। সিনিকের মুখে ছাই দিয়ে ব্লগারিদ্্মিক প্রসারণে অগ্রসর অত্যুৎসাহী (মন্দ লোকে বলে হুজুগে) বাঙালকুল; এ’জন্য অবশ্য-ধন্যবাদার্হ আমাদের পাঠক, লেখক, শুভানুধ্যায়ীরা। ওদিকে কবি বলেছেন, দাঁড়াও পথিকবর, তিষ্ঠ ক্ষণকাল, ফ্রম টাইম টু টাইম। পথ চলবার দস্তুরটি ‘চরৈবেতি’ হলেও মাঝেমধ্যে ঘাড় ঘুরিয়ে পশ্চাতে দৃষ্টিপাত করার অভ্যেস কেই বা কবে ছাড়তে পেরেছে! যেমন ছাড়তে পারেনি আগামী নিয়ে আকাশকুসুম জল্পনা। অতএব, ঘুরেফিরে আমাদেরও সেই যাহা-পাই-আর-যাহা-চাই-এর হিসেব নিকেশ।


ফিরে দেখা
প্রথমেই বলার, এই কয়েক মাসে আপনাদের সাড়াজাগানো উৎসাহ পেয়ে আমরা সত্যিই অভিভূত। বাঙালীর তারকাখচিত ইতিহাসের পাতা থেকে পুরবীয়াদের মুখগুলো প্রদীপের আলোয় আরো একবার ভালো করে দেখে নেওয়ার অজুহাতে আমরা পেয়েছি ইলা মিত্র, সরোজ দত্ত, তুষার রায়, উস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁ, হুমায়ুন আহমেদ, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, ঋত্বিক ঘটক, সত্যজিৎ রায়, সৈয়দ মুজতবা আলী, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, তসলিমা নাসরিন, অমিতাভ ঘোষ, এমনকি দ্বিতীয়/তৃতীয় প্রজন্মের বাঙাল চন্দ্রিল ভট্টাচার্য্য ও কিরণ দেশাই-এর জীবন ও কাজ নিয়ে লঘু/গুরু/গুরুতর, এককালীন/ধারাবাহিক – নানান স্বাদের একগুচ্ছ প্রবন্ধ। ঈদ বা একুশের বইমেলা নিয়ে নস্টালজিয়া, নেহাতই শৈশবের স্মৃতি-উস্কে-দেওয়া মানুষ ও মুহূর্তের সেলিব্রেশন, উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া দেশভাগ-দেশত্যাগের গল্প, ‘ঢাকাই কুট্টি’দের ঘিরে মিথ, মা-ঠাকুমা-বাপ-পিতেমো’র জীবনসংগ্রামের ইতিহাস — আবেগের টুকরো গুলোর জিগ্স-পাজ়লের মধ্যে অদৃশ্য glue-এর মত বাঙাল আইডেন্টিটির সাক্ষ্য বহন করেছে স্মৃতিচারণামূলক লেখাগুলো। অঙ্কনের দাদামশায় অশীতিপর সেতারবাদক গোপীমোহনের অ-সরলরৈখিক জীবনবৃত্তান্তে, গোরা রায়-বর্ণিত জর্জ বার্কারের ঘটিত্ব-বাঙালত্ব নিয়ে মানসিক টানাপোড়েন ও তৎপরবর্তী নির্বাণ-লাভে, সাইক্লোন সিডরের ধ্বংসলীলা-শেষে মহাশ্বেতার বাবা’র উইকিম্যাপিয়া খুলে পাবনার ফেলে আসা ছোট গ্রামটি খঁুজে পাওয়ার আকুলতার মধ্যে আমাদের কনফিউজ্ড্ আরবান প্রজন্মের শিকড়-সংক্রান্ত বিভ্রান্তি ও যাবতীয় ধোঁয়াশার সাময়িক স্যালভেশন ঘটেছে। পরবের দিনে, বাঙালনামার পাতায় ঢাকা ও বারাক-উপত্যকার ভাষা আন্দোলনের শহীদদের কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেছি আমরা। প্রাপ্তি বলতে ব্যাস্, এটুকুই।


খোয়াবনামা
এ-যাবৎকাল পাঠক ও অনুগ্রাহীদের সঙ্গে মত বিনিময় করে (ও অবসর সময়ে মাথা চুলকে), যে বিষয়গুলো বিভিন্ন প্রকার (জন্ম, বসবাস ও উত্তরাধিকার-সূত্রে) বাঙালদের কাছে সার্বজনীন ভাবে চিত্তাকর্ষক ও আবেগসঞ্চারক বলে চিহ্নিত, সেগুলোর একটি খসড়া প্রস্তুত করা যেতে পারে — আগামী দিনে, প্রিয় খাদ্যের এই সূচী থেকে যথাসাধ্য পঞ্চব্যাঞ্জনাদি পরিবেশন করার আশা নিয়েই। সে তালিকা ও কর্মসূচীর একটি রূপরেখা দেওয়া যাকঃ


১। পোস্ট-কলোনিয়াল উপমহাদেশের বাঙালী তথা বাঙালের ইতিহাসে প্রধান দিকনির্ণায়ক ঘটনাগুলি। যথা, বঙ্গভঙ্গ (১৯০৫), দেশভাগ (১৯৪৭), ভাষা-আন্দোলন (১৯৫২, ১৯৬১), মুক্তিযুদ্ধ (১৯৭১) ও কম্যুনিস্ট আন্দোলন (‘৪৬-এর তেভাগা থেকে ‘৭০ দশকের নক্সালবাড়ির উত্তরাধিকার)। এই বিভাগে, বিভিন্ন পুরনো পত্রপত্রিকা থেকে মণিমুক্তাদি পুনরুদ্ধার করে নথিভুক্ত করা ও বিষয়গুলির উপর প্রামাণ্য তথ্য, সুখপাঠ্য লেখাপত্র (পুরনো ও নতুন) একত্রিত করে একটি আন্তর্জালিক সংগ্রহ গড়ে তোলার দুঃসাহসিক খোয়াব রয়েছে।


২। বাঙাল ও বাঙালের কীর্তি। এক কথায়, পদ্মাপারের সন্তান-সন্ততিদের ‘হল অফ ফেম’ নির্মাণ — যে ওরিজিন্যাল উদ্দেশ্যটি নিয়ে বাঙালনামা প্রকল্পের জন্ম হয়েছিল। এই বিভাগে জীবনীমূলক প্রবন্ধ ছাড়াও বই, ছবি, সিনেমা, সাহিত্যকর্ম ইত্যাদি বিবিধ কীর্তির ধারাবিবরণী ও সমালোচনাধর্মী লেখা ভগবানের-প্রতি-ভক্তের-নৈবেদ্য’র মতই রাখা হবে।


৩। বাঙাল সংস্কৃতি – উত্তরাধিকার, ভগ্নাবশেষ, প্রতিফলিত নস্টালজিয়া। এই সেকশনটি পাঁচমেশালি। চিতলের মুইঠ্যা থেকে ভাষাতত্ত্ব, পপ-কালচার থেেক ইস্টবেঙ্গল, বরিশাল টু বাঘাযতীন — সবের — এক কথায়, পোলাপানের বাঙালত্বজনিত প্রগল্ভতার যাবতীয় উদ্গিরণের, ঠাঁই হবে এখানে।


আপাততঃ উক্ত কর্মসূচীটি মাথায় রেখে আশু ভবিষ্যতে এই সাইট-টি গুছিয়ে তুলে আরেকটু বিষয়ভিত্তিক কাঠামো দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আরো একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে, খানিকটা নিয়মিত হয়ে ওঠার। পরীক্ষামূলকভাবে, এই মাস থেকে চালু হল আমাদের মাসিক সংকলন। যদি সময়ানুবর্তীতার পরীক্ষায় ডাহা ফেল মারি, অনিয়মিত প্রকাশনে আবার ফিরে যাওয়ার পথ খোলাই রইল। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে, অর্ডার েথকে ডিসর্ডার অভিমুখে যাবার প্রাকৃতিক বিধান অগ্রাহ্য করেই আমাদের এই ঘর সাজানোর প্রয়াস। ন্যালাক্ষ্যাপারাই যুগে যুগে সংসারী মানুষের মানসলোকে যুগাবতার রূপে সমাদৃত, নিয়ম-শৃঙ্খলার পথে হঁেটে কেই বা কবে বড় লোক হতে পেরেছে! তবে এটা তাপগতিতত্ত্বের কোনো অমোঘ সুত্রের অবমাননা নয়, কারণ আমরা বিপুলা পৃথিবীর ক্ষুদ্র অংশমাত্র, কোনো ক্লোজড সিস্টেম নই। ফলতঃ, সহ-বাঙালদের খাতিরে আমাদের অন্দরটি পরিপাটি করে তোলায় কোনো বিজ্ঞানঘটিত বাধা নেই।


সবশেষে, বলাই বাহুল্য, আপনাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ছাড়া বেশীদূর এগোনো বা এই মোমেন্টাম ধরে রাখা সম্ভবপর নয়। তাই, দলে দলে যোগ দিন, লেখা পাঠান, নথিপত্র পাঠান, চিঠি লিখুন, মতামত দিন (bangalnama@gmail.com-এ, ফুলের তোড়া বা ইঁটের টুকরো – সব চলবে)। পাশে থাকুন।

2 Responses to “কৈফিয়ৎ”

  1. brishti said

    আসো বাহে,কুন্ঠে সবাই……!!

  2. abhisek said

    OH! Ami mughdho.
    Abar Asibo Phire Bangalnamai.
    Dhonobad.
    (BhogoHoriManna i elish khabar anondo pelam Bangalnama dekhe)

Leave a comment