বা ঙা ল না মা

অলিন্দ যুদ্ধ – ঢাকার এক তরুণের গল্প

Posted by bangalnama on August 31, 2009


মাসিক ‘বেণু’ পত্রিকার একটি বিশেষ সংখ্যা নিয়ে বসেছিলেন সুভাষচন্দ্র। যে কেউ দেখলে অবাক হয়ে যেত। বই খোলা অবস্থায় কোলের ওপর রাখা – অবিরাম ধারায় জল ঝরছে তাঁর চোখ দিয়ে। মেজদা শরৎচন্দ্র এসেছিলেন একটা খবর দিতে। ভাইকে দেখে খুব চমকে গেলেন। আলতো করে হাত রাখলেন কাঁধে। নিজেকে সামলে সুভাষচন্দ্র তাকালেন দাদা’র দিকে। তাঁর সপ্রশ্ন দৃষ্টির উত্তরে বললেন, “এবারের ‘বেণু’ পড়েছ? দীনেশের লেখা কয়েকটা চিঠি প্রকাশিত হয়েছে। মাত্র কুড়ি বছর বয়সে এত পরিণত! এ তো চিঠি নয়, জ্বলন্ত জীবন-দর্শন!” কিছুক্ষণ দুজনেই চুপচাপ। পত্রিকার কয়েকটা পাতা উলটে একজায়গায় থামলেন সুভাষ। বললেন, “দীনেশ তার বউদিকে লিখেছে –

‘ভারতবাসী আমরা নাকি বড় ধর্মপ্রবণ। ধর্মের নামে ভক্তিতে আমাদের পণ্ডিতদের টিকি নাকি খাড়া হয়ে ওঠে। তবে আমাদের মরণের এত ভয় কেন? বলি ধর্ম কি আছে আমাদের দেশে? যে দেশে মানুষকে স্পর্শ করিলে মানুষের ধর্ম নষ্ট হয়, সে দেশের ধর্ম আজই গঙ্গার জলে বিসর্জন দেওয়া উচিত। সবার চাইতে বড় ধর্ম মানুষের বিবেক। সেই বিবেককে উপেক্ষা করিয়া আমরা ধর্মের নামে অধর্মের স্রোতে গা ভাসাইয়াছি……এতে কি ভগবান আমাদের জন্য বৈকুণ্ঠের দ্বার খুলিয়া রাখিবেন, না খোদা আমাদের বেহস্তে স্থান দেবেন? যে দেশকে ইহজন্মের মত ছাড়িয়া যাইতেছি, যাহার ধূলিকণাটুকু পর্যন্ত আমার কাছে পবিত্র, আজ বড় কষ্টে তাহার সম্বন্ধে এসব কথা লিখিতে হইল।’

দেখ, আজ এই দূর্দিনে দেশের তারুণ্যই আমাদের সত্য পথের দর্শন দিচ্ছে, আর প্রবীণরা চোখ বুজে আছে।” বলতে বলতে আরো কিছু পাতা উলটে গেলেন সুভাষ। অন্য একটা চিঠি খুলে বললেন, “ওর এক দিদিকে কি লিখেছে শোনো –

‘ভালবাসা পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় জিনিস…মানুষের বড় বড় কাজ দেখে আমরা অপরিসীম বিস্ময়ে অবাক হয়ে থাকি। ভাবি, এ কাজ সে করল কি করে? কিন্তু মূল খুঁজলে পাওয়া যাবে ভালবাসার প্রস্রবণ। তারই রসে সিঞ্চিত হয়ে মানুষ দিতে পারে হাসিমুখে আত্মবিসর্জন…ভালবাসার সাধনা করতে হয়। স্বার্থত্যাগ সে সাধনার প্রথম কথা। স্বার্থ আমাদের বড় জড়িয়ে ধরে, তাই কিছু করতে পারিনা।’

এই ছেলেগুলো আজ ভালবাসার সেই সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেছে বলেই দেশ আজ স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতে সাহস পাচ্ছে। আমরা সবাই যেদিন এই নিঃস্বার্থ ভালবাসার আগুনে নিজেদের স্বার্থকে বলি দিতে পারব সেদিনই দেশ সত্যিই স্বাধীন হবে। আমাদের প্রবীণ নেতারা এই তরুণদের বলেন অস্থিরমতি, বলেন এরা ভ্রান্ত পথের পথিক। এদের পরিণতিবোধ যদি অস্থিরচিত্তের প্রতিফলন হয় তাহলে সেই অস্থিরতা পুরো দেশের আজ একান্ত প্রয়োজন।” বলতে বলতে খোলা জানলা দিয়ে তাকিয়ে চুপ করে গেলেন সুভাষচন্দ্র। কিছুক্ষণ বসে থেকে আস্তে আস্তে উঠে গেলেন মেজদা শরৎচন্দ্র।

নিজের কাজের ফাঁকে ফাঁকে ভাইয়ের কথাগুলো তাঁকে নাড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছিল। সেই ১৯২৮ সালের বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের জন্মলগ্ন থেকেই সুভাষচন্দ্রের সাথে সাথে তিনিও এদের সাথে যুক্ত। বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের সাম্প্রতিকতম কর্মকাণ্ড এবং তার সাথে জড়িয়ে থাকা তিনটে ছেলে সত্যিই বাংলা তথা পুরো দেশকে বিস্ময়ে অবাক করে দিয়েছে। ঢাকার মুন্সীগঞ্জ জেলার যশলঙ গ্রামে ২০ বছর আগে ১৯১১ সালের ৬ই ডিসেম্বর দীনেশের জন্ম। কলেজে পড়ার সময়ই আগুনে ঝাঁপ দিয়েছিল এই ছেলেটি, আর তার ফলশ্রুতিস্বরুপ বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের ঢাকা শাখায় নাম লেখানো। খুবই অল্প সময়ের মধ্যে একনিষ্ঠ কর্মী হিসাবে সুনাম অর্জন করেছিল তারুণ্যে ভরপুর, দুঃসাহসী ছেলেটি। অপূর্ব সংগঠনীপ্রতিভাসম্পন্ন এই ছেলেটিকে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল মেদিনীপুরে যাওয়ার জন্য। সঙ্গে সঙ্গে ঢাকার পাট চুকিয়ে দীনেশ এসে ভর্তি হয় মেদিনীপুরের কলেজে। দীনেশের হাতেই জন্মলাভ করল বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের মেদিনীপুর শাখা। ইতিমধ্যে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের উচ্চস্তরের নেতারা প্ল্যান করেছেন এক দুঃসাহসিক অভিযানের। ব্রিটিশ দম্ভের প্রতীক কলকাতা শহরের বুকে রাইটার্স বিল্ডিং। ডালহৌসি স্কোয়ারে অবস্থিত ব্রিটিশের এই দুর্ভেদ্য দূর্গে এবার আঘাত হানার পরিকল্পনা করা হল। পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য বেছে নেওয়া হল তিনজন নির্ভীক তরুণকে। নেতৃত্বের দায়িত্ব দেওয়া হল বিনয় বসুকে। বিনয় তখন ডাক্তারির শেষ বর্ষের ছাত্র। গোয়েন্দা পুলিশের বড়কর্তা লোম্যানকে হত্যার অপরাধে ব্রিটিশ পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে বেলেঘাটায় রাজেন গুহ’র বাড়িতে আত্মগোপন করে আছে। মেজদার মনে আছে বিনয়ের সন্ধানে যখন পুলিশের তৎপরতা ভীষণভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল, তখন তিনি আর সুভাষ দুজনেই পরামর্শ দিয়েছিলেন বিদেশে চলে যেতে। কারণ চিরকাল গা ঢাকা দিয়ে থাকা সম্ভব না, আর বিনয়ের মত ছেলে ব্রিটিশ পুলিশের হাতে ধরা পড়া মানে দলের জন্য নিঃসন্দেহে বিরাট ধাক্কা। কিন্তু এই রাইটার্স বিল্ডিং অপারেশনের পরিকল্পনা শুনে বিনয় নিজেই দেশ ছেড়ে যেতে অস্বীকার করে। বিনয়ের সুযোগ্য সহকারী হিসাবে এই অভিযানে বেছে নেওয়া হয়েছিল দীনেশ গুপ্ত আর বাদল গুপ্ত’র নাম। অদ্ভুত সমাপতন, তিন তরুণ ঢাকার তিন পাশাপাশি গ্রামের ছেলে।

পরের দিন সকালে নিজের কর্মক্ষেত্রে যেতে যেতে গাড়িতে বসে শরৎচন্দ্র সেদিনের কেসের কাগজপত্র দেখতে দেখতে হঠাৎ অন্যমনস্ক হয়ে গেলেন। মনে পড়ছিল এই তো সেদিনের কথা যেদিন রাইটার্স বিল্ডিং অভিযানের পরিকল্পনা করা হয়। প্রধান লক্ষ্য ছিল কারাবিভাগের সর্বময় কর্তা কর্নেল সিম্পসন। জেলে থাকাকালীন সুভাষচন্দ্রের ওপর দৈহিক অত্যাচার করেছিলেন এই শ্বেতাঙ্গ। অনেক রক্ত সেদিন ঝরেছিল। ব্রিটিশ শাসনের এই দাম্ভিক অফিসারকে বুঝিয়ে দিতে হবে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের তরুণ স্কোয়াড কখনো এই অত্যাচার নীরবে মেনে নেবে না। নিজের রক্ত দিয়ে সেই ঋণ শোধ করতে হয়ছিল কারাবিভাগের কর্তাকে। গত বছর, ১৯৩০ সালের ৮ই ডিসেম্বর রাইটার্স বিল্ডিং শব্দমুখর হয়ে উঠেছিল এই তিনটি ছেলের অগ্নিবর্ষী রিভলভারের শব্দে। ব্রিটিশ দম্ভের ভিত্তি নড়ে উঠেছিল তিন তরুণের বিক্রমে। কর্নেল সিম্পসনের মত অনেককেই সেদিন এদের বীরত্বের কাছে মাথা নোয়াতে হয়েছিল। কেউ প্রাণ দিয়ে, আর কেউ পালিয়ে, প্রাণে বেঁচেছিল। অবশেষে ‘সুসভ্য’ ব্রিটিশ সরকার তিনজন রিভলভারধারী তরুণকে সামলানোর জন্য ডাক দিয়েছিল রাইফেলধারী গোর্খাবাহিনীকে। শুরু হল বিখ্যাত অলিন্দযুদ্ধ। দীনেশের পিঠে আঘাত লাগে। আহত অবস্থাতেও সে সমান বিক্রমে লড়াই করে। অবশেষে সেই চিরন্তন সমস্যা – কার্তুজ শেষ। বিনয় আর দীনেশের তাও একটা করে গুলি অবশিষ্ট ছিল কিন্তু বাদলের তাও ছিল না। পরিকল্পনামত একটা খালি ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে মুখে পটাশিয়াম সায়ানাইডের ট্যাবলেট দিয়ে দেয় তিনজন। বিনয় আর দীনেশ অবশিষ্ট একটা গুলিও চালিয়ে দেয় নিজেদের ওপর। তার ফলেই হয়তো সায়ানাইডের অ্যাম্পুল ভাঙা যায়নি। বাদল ঘটনাস্থলেই মারা যায়। অত্যন্ত আহত অবস্থায় বিনয় আর দীনেশকে নিয়ে যাওয়া হয় মেডিক্যাল কলেজে। সেখানকার উজ্জ্বল ছাত্র বিনয় জানত কি করে ব্রিটিশের চিকিৎসাকে অস্বীকার করা যায়। নিজের ক্ষতস্থানে আঙ্গুল চালিয়ে বিষাক্ত করে দিয়েছিল সে। অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হিসাবে আঘাত বিষাক্ত হয়ে কয়েকদিনের মধ্যেই মারা যায় বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স তথা বাংলাদেশের স্বাধীনতার এই যোদ্ধা। ধীরে ধীরে সুস্থ হওয়ার পর আলিপুর জেলে পাঠানো হয় দীনেশকে। যথাসময়ে বিচারপতি গার্লিক রায় দিলেন মৃত্যুদন্ডের। অনেক অ্যাপীল, আবেদনেও কোনো সাড়া দেয়নি ব্রিটিশ সরকার। তবে এ তো জানাই ছিল। দীনেশ কন্ডেমড সেলে থাকার সময়ে সুভাষচন্দ্র আলিপুর জেলে ছিলেন কিছুদিন আইন অমান্য আন্দোলনের সময়। সেইসময় জেলর ছিলেন মিস্টার সোয়ান। আইরিশ এই ভদ্রলোক ব্রিটিশ জেলের কর্মচারী হলেও সুভাষকে বিশেষ শ্রদ্ধার চোখেই দেখতেন। সুভাষ পরিকল্পনা করেছিলেন সরস্বতী পুজোর। জেলর তারও অনুমতি দিয়েছিলেন। এই সুযোগে কন্ডেমড সেলের বন্দি দীনেশকেও কিছুক্ষণের জন্য বাইরে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছিল। ৮ই ডিসেম্বর ১৯৩০ থেকে ৭ই জুলাই ১৯৩১ – কদিনই বা আর? ভোররাতে দীনেশের ফাঁসির সাথে সাথে যবনিকা পড়ে গেল স্বাধীনতার ইতিহাসের এক উল্লেখযোগ্য অধ্যায়ের। কন্ডেমড সেলে থাকার সময় নিজের পরিচিত মানুষদের বেশ কিছু চিঠি লিখেছিল দীনেশ, যা আজ তাঁর ভাইকে সমূলে নাড়িয়ে দিয়েছে। সত্যিই, মাত্র ২০ বছরের একটি তরুণের এই জীবনবোধ বিস্ময় সৃষ্টি করে বৈকি! দীনেশ তার একটা চিঠিতে লিখেছিল, “যার প্রাণ আছে, শ্রেয়কে বরণ করবার জন্য যার আছে শ্রদ্ধা – সে কি কখনো তার মহাশঙ্খের আহবান শুনে স্থির থাকতে পারে? কি শক্তি আছে সংসারের এই মিথ্যা মোহের যে তাকে আটকে রাখবে? তার আহবানে কি শক্তি আছে জানিনা –

শুধু জানি – যে শুনেছে কানে
তাহার আহবান গীত, ছুটেছে সে নির্ভীক পরাণে
সংকট-আবর্ত মাঝে, দিয়েছে সে বিশ্ব বিসর্জন,
নির্যাতন লয়েছে সে বক্ষ পাতি; মৃত্যুর গর্জন
শুনেছে সে সঙ্গীতের মত…”

রবীন্দ্রভক্ত দীনেশের পক্ষে কবির এই ‘আহবান গীত’ মর্মে উপলব্ধি করার ক্ষমতা অনেকের চেয়েই বোধহয় বেশি ছিল। সত্যিই তাই। এই দামাল ছেলেগুলো সে ‘আহবান গীত’ শুনেছে বলেই এদের নির্ভীক এবং দুঃসাহসিক পদক্ষেপ দেশমাতৃকাকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখাতে পারে। দীনেশের হাতে যে মেদিনীপুর তৈরি হয়েছিল সেখানকার ছেলেরা ইতিমধ্যেই দেখিয়ে দিয়েছে তাদের দীক্ষাগুরুর এই ফাঁসি তারা নীরবে মেনে নেবে না। মেদিনীপুরের কুখ্যাত জেলাশাসক পেডি’কে প্রাণ হারাতে হয়েছে দীনেশের সুযোগ্য ছাত্র বিমল দাশগুপ্ত’র হাতে। দীনেশের ফাঁসির তিনমাস আগেই ৭ই এপ্রিল ১৯৩১-এ এই অভিযান চালানো হয়। দীনেশের হাতে গড়া মেদিনীপুর আরো অনেক বলিদানের জন্য অবিচল চিত্তে প্রস্তুত। আর কত তরুণ তাজা প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতা আসবে কে জানে!

হঠাৎ তন্ময়তা ভেঙে গেল মেজদার। গাড়ি এসে থেমেছে কোর্টের দরজায়…কাগজপত্র গুছিয়ে এগিয়ে চললেন নিজের অফিসের দিকে। ভবিষ্যত ভারত যেন ভুলে না যায় এই ছেলেদের কথা যারা নিজের আদর্শের জন্য অবিচলচিত্তে প্রাণ দিচ্ছে। অনাগত ভবিষ্যতের জন্য, স্বাধীনতার জন্য, যারা আগুনে ঝাঁপ দিচ্ছে তাদের নামে রাস্তা, তাদের মূর্তিস্থাপন না করে দেশের মানুষ তাদের নিজেদের মনে স্থান দিক। স্বাধীন ভারতে এই ডালহৌসি স্কোয়ার পরিচিত হবে বিনয়-বাদল-দীনেশের নামে। কিন্তু শুধু একটা রাস্তার নাম না। দীনেশ যেন একটা জ্বলন্ত আদর্শরূপে বেঁচে থাকে বাংলার যুবসমাজের কাছে।

(শ্রী শৈলেশ দে’র লেখা “আমি সুভাষ বলছি”র প্রথম খণ্ড থেকে প্রাপ্ত অলিন্দযুদ্ধের শহিদ শ্রী দীনেশ গুপ্ত’র জীবনের বিভিন্ন উপাদান দ্বারা এই নিবন্ধ লিখিত। কিছু চিঠি এবং বইটিতে বর্ণিত কিছু ঘটনার আধারে এই রচনায় জেনেশুনে কোথাও ইতিহাসকে অতিক্রম করা হয়নি।)


লিখেছেন – অনসূয়া মিত্র

One Response to “অলিন্দ যুদ্ধ – ঢাকার এক তরুণের গল্প”

  1. DCMALLICK said

    THE LETTERS WRITTEN BY DINESH GUPTA TO HIS BAUDI AND HIS DIDI IS MORE ATTRACTIVE FROM THE UNIVERSAL FEELING POINT OF VIEW.

Leave a comment