মাসিক ‘বেণু’ পত্রিকার একটি বিশেষ সংখ্যা নিয়ে বসেছিলেন সুভাষচন্দ্র। যে কেউ দেখলে অবাক হয়ে যেত। বই খোলা অবস্থায় কোলের ওপর রাখা – অবিরাম ধারায় জল ঝরছে তাঁর চোখ দিয়ে। মেজদা শরৎচন্দ্র এসেছিলেন একটা খবর দিতে। ভাইকে দেখে খুব চমকে গেলেন। আলতো করে হাত রাখলেন কাঁধে। নিজেকে সামলে সুভাষচন্দ্র তাকালেন দাদা’র দিকে। তাঁর সপ্রশ্ন দৃষ্টির উত্তরে বললেন, “এবারের ‘বেণু’ পড়েছ? দীনেশের লেখা কয়েকটা চিঠি প্রকাশিত হয়েছে। মাত্র কুড়ি বছর বয়সে এত পরিণত! এ তো চিঠি নয়, জ্বলন্ত জীবন-দর্শন!” কিছুক্ষণ দুজনেই চুপচাপ। পত্রিকার কয়েকটা পাতা উলটে একজায়গায় থামলেন সুভাষ। বললেন, “দীনেশ তার বউদিকে লিখেছে –
‘ভারতবাসী আমরা নাকি বড় ধর্মপ্রবণ। ধর্মের নামে ভক্তিতে আমাদের পণ্ডিতদের টিকি নাকি খাড়া হয়ে ওঠে। তবে আমাদের মরণের এত ভয় কেন? বলি ধর্ম কি আছে আমাদের দেশে? যে দেশে মানুষকে স্পর্শ করিলে মানুষের ধর্ম নষ্ট হয়, সে দেশের ধর্ম আজই গঙ্গার জলে বিসর্জন দেওয়া উচিত। সবার চাইতে বড় ধর্ম মানুষের বিবেক। সেই বিবেককে উপেক্ষা করিয়া আমরা ধর্মের নামে অধর্মের স্রোতে গা ভাসাইয়াছি……এতে কি ভগবান আমাদের জন্য বৈকুণ্ঠের দ্বার খুলিয়া রাখিবেন, না খোদা আমাদের বেহস্তে স্থান দেবেন? যে দেশকে ইহজন্মের মত ছাড়িয়া যাইতেছি, যাহার ধূলিকণাটুকু পর্যন্ত আমার কাছে পবিত্র, আজ বড় কষ্টে তাহার সম্বন্ধে এসব কথা লিখিতে হইল।’