বইটি মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশের রাজনীতির একটি ব্যক্তিগত জবানী এবং আবশ্যিকভাবে সমালোচনামূলক, যে সমালোচনার তীর থেকে লেখক স্বয়ং নিজেকেও বাদ রাখেন নি। উপসংহারে তিনজনের ফাঁসি চাওয়া হয়েছেঃ লেখকের নিজের, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, লেখক নিজে একজন মুক্তিযোদ্ধা, আওয়ামী লীগের দীর্ঘসময়ের ওপরতলার নেতা, শেখ হাসিনার একদা ঘনিষ্ঠ সহচর এবং বর্তমানে (বইটি প্রকাশের সময় ১৯৯৯) শেখ হাসিনা কর্তৃক বাংলাদেশ রাষ্ট্রে অবাঞ্ছিত ঘোষিত।
সামগ্রিক ভাবে বইটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঘটনাবলী বিশ্লেষণের চেষ্টা করলেও, সম্ভবত লেখকের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থানের ফলশ্রুতি হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় প্রয়োজনের থেকে বেশী গুরুত্ব দিয়ে শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত জীবনের কাঁটাছেড়া করেছে, অবশ্য লেখকের মতে নিজের পাশের লোকের প্রতি কেউ বিশ্বস্ত না হ’লে দেশের প্রতিও হয় না। শেষ পর্বে লেখকের আওয়ামী লীগ বিরোধিতার রূপান্তর ঘটেছে হিন্দু-বিরোধিতায়, বাংলাদেশের হিন্দু মানেই বাংলাদেশকে ভারতে ফিরিয়ে আনতে চায়, এ জাতীয় বক্তব্যগুলি ভারতের সংখ্যাগুরুর বয়ানের সঙ্গে যে সামঞ্জস্য রাখে সেটাও কম আকর্ষণীয় নয়। কিন্তু, এইসবের বাইরেও বইটি মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের রাজনীতির একটি ব্যাক্তিগত ভার্সন হয়ে উঠেছে, লেখকের রাজনৈতিক ভূমিকার জন্যেই যা প্রধানতঃ ঐতিহাসিক গুরুত্বের দিক থেকে অবশ্যপাঠ্য, বিশেষতঃ সমগ্র বাঙালীজাতি ইতিহাসের অন্য ভার্সনগুলিকে একান্তভাবে বিশ্বাস ক’রে যখন প্রায় সমস্ত সমালোচনার ঊর্ধ্বে রেখে শেখ মুজিবকে শতাব্দীশ্রেষ্ঠ বাঙালীদের একজন বলে মেনে নিয়ে থাকে।