বা ঙা ল না মা

আমোদিনীর হেঁশেল – দ্বিতীয় পর্ব

Posted by bangalnama on August 31, 2009


(প্রথম পর্বের পর)

“নসনের বাবার মাথায় আইজ়কা আবার কি ক্যারা ঢুইক্যা গেল!”—আমোদিনীর চোখেমুখে আতঙ্কের প্রকাশ।

আজ ওনার স্বামী বাজার থেকে একগুচ্ছ পাকা কলা নিয়ে এসেছেন। আবার! শুধু পাকা নয়- এক্কেবারে বেশি পাকা। যেগুলোকে ‘বাজা’ কলা বলা হয়। কলার খোসাগুলো কালো হতে লেগেছে। ভেতরগুলো ল্যাশপ্যাশে। দোকানদার খদ্দের না পেয়ে, অনুকূল বাবুকে অনেকগুলো কলা খুব শস্তা দামে বিক্রি করে দিয়েছেন। অনুকূল বাবু খুব খুশি, কারণ এই পাকা কলা দিয়ে ওনার প্রিয়তম কলার বড়া বানানো যাবে।

খুব খুশি মনে বাড়ির দিকে চলেছেন – বাজারের থলিতে এক বিশাল গুচ্ছ কলা।

বাড়ি এসেই আমোদিনীর বকা খেয়ে ওনার মনটা দমে গেল। মুখ কাচুমাচু করে বাজারের ঝোলাটা রান্নাঘরের পাশে রেখে দেন। আমোদিনী গজ্গজ্ করতে করতে থলের থেকে কলা গুলো বার করলেন। এত গুলো কলা! বড়া বানাতে অনেক তেল খরচা হবে যে! আট জন সন্তানের জন্যে কত গুলো বড়া বানাতে হবে! তার উপর গণু, নসন, পাখি, ননি, গৌরী – সবাই কলার বড়া ভালবাসে। মাথা নেড়ে শুরু করলেন বড়া বানাতে।

অনুকূল দাশগুপ্তের প্রিয় কলার বড়া


কি কি লাগবেঃ
বাজা কলা – থ্যাতলানো (১ পেয়ালা)
চালের গুঁড়ো বাটা (রাত্রে চালটা ভিজিয়ে রেখে, পরের দিন বাটতে হবে) – ১/২ পেয়ালা (ময়দা দিলেও হবে, কিন্তু চালের গুঁড়োতে বেশি মুচমুচে হয়)
সাদা তেল – ১/৪ পেয়ালা
নারকেল তেল – ২-৩ ছোট চামচ
চাইলে একটু চিনি প্রয়োজন মত ব্যবহার করা যেতে পারে, কিন্তু আমোদিনী আলাদা করে চিনি দিতেন না। কলার আপন মিষ্টত্বই যথেষ্ট মনে করতেন।


প্রণালীঃ
কলা আর চালের গুঁড়োকে একটা পাত্রে ভালো করে মিশাতে হবে। কড়াইতে তেল মাঝারি আঁচে গরম করে, কয়েক ফোঁটা নারকেল তেল দিয়ে, কলার মাখা তেলে দিয়ে ভাজতে হবে। এক পিঠে লালচে রঙ হলে বড়াগুলো উল্টাতে হবে। বড়াগুলো বাঁশের ঝাঁকাতে তুলে রাখলে, তেলটা ঝরে যাবে (কিম্বা কাগজের উপর রাখলেও চলবে)।

চিত্র ১ ঃ অনুকূল দাশগুপ্তের প্রিয় কলার বড়া

চিত্র ১ ঃ অনুকূল দাশগুপ্তের প্রিয় কলার বড়া


আমার আসলে বড়াগুলো একটু পোড়া পোড়া হলে বেশি ভাল লাগে – কারণ আমার মতে, এতে কলার মিষ্টত্বটা বেড়ে যায় মনে হয় – চিনিটা caramelise করে যায়। কিন্তু কারুর আবার এটা তেতো লাগে। যাতে আপনাদের ভালো লাগে – সেভাবে বানাবেন।


গ্রীষ্মকালে আমোদিনীর আর একটা রান্না খুব মুখরোচক ছিল। কেউ কেউ কারসাজি করে অন্যদের কাছ থেকে তাদের অংশ কেড়ে নেওয়ার তালে থাকত। ছোট ভাই-বোনদের মনের মধ্যে একটা ঘেন্না সৃষ্টি করলে, তারা তাদের ভাগের খাবারটা ছেড়ে দেবে। ব্যাস! শুরু হয়ে যেত তাদের উপর অত্যাচার। “ইস্! দেখনা- একদম আমাশা’র মতন দেখতে!”—ইত্যাদি।। ছাওলপান’রা যখন ওয়াক তুলতে ব্যস্ত, বড়গুলো বাটি ভরা আমের পায়েস কেড়ে গব্গব্ করে খেয়ে ফেলত।

আমের পায়েস


কি কি লাগবেঃ
দুধ – ২ লিটার
চিনি- ১ পেয়ালা (প্রমাণ সাইজের ২৫০ মিলি.)
ভালো চাল, যেমন গোবিন্দভোগ বা বাসমতি – ২ মুঠো (এর চাইতে বেশি দেওয়া ভালো হবে না; পায়েস না হয়ে দুধভাত হয়ে যাবে!)
পাকা আম, ল্যাংড়া বা আলফানসো জাতীয় – ১ পেয়ালা, কাটা আর বাটা (আজকাল টিনে পাওয়া যায় যেমন, mango puree-ও ব্যবহার করা যাবে)। এ ক্ষেত্রে চিনির পরিমাণটা কম করতে হবে।


প্রণালীঃ
দুধটা একটা বড় এবং তলা-ভারী পাত্রে দিয়ে ফুটিয়ে নিতে হবে। এই সময়ে খুব নজর রাখতে হবে যাতে দুধ উথলে না পড়ে বা বাসনের তলায় লেগে, পুড়ে না যায়। বেশ ঘন ঘন নাড়তে হবে।


একবার দুধ ফুটে এলে, আঁচটা কমিয়ে দিয়ে, চিনি আর চাল দিয়ে, রাঁধতে হবে বেশ কিছুক্ষণ।

মাঝে মধ্যেই নাড়তে হবে, নইলে পায়েসটা বাসনের তলায় লেগে পুড়ে যেতে পারে।

পায়েসটা ঘন হয়ে এলে, আঁচের থেকে নামিয়ে একটু ঠান্ডা করে নিয়ে, আম-বাটা বা puree-টা পায়েসের সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। পায়েসটা বেশি গরম অবস্থায় থাকাকালীন আম দিলে দুধ কেটে যেতে পারে – তাই একটু ঠান্ডা করা প্রয়োজন; তবে বেশি ঠান্ডা হলে আবার আমে-পায়েসে ভাল ভাবে মিশ্রণ হবে না- আলগা থেকে যাবে।

এ বার আমের পায়েস পুরোপুরি ভাবে ঠান্ডা হলে পরিবেশন করা যাবে।

চিত্র ২ ঃ আমের পায়েস

চিত্র ২ ঃ আমের পায়েস

এই রুপোর বাটিটা আমোদিনীরই বাটি। পাশে কাঁসার হাতাটা ওনার জা, তরলা দাশগুপ্তর হেঁশেলের।

নীচে পাতা একটি কাঁথার কাজ করা আসন। আগেকার দিনে পুরানো শাড়ির পাড় থেকে সুতো টেনে এই ধরনের কাঁথার কাজ করা হতো।


সবাইকে শারদীয়ার আগাম শুভেচ্ছা জানাই। রান্নাগুলো বানিয়ে কেমন লাগল জানাবেন কিন্তু!


(চলবে)


লেখা ও ছবি – দেবলীনা সেন

2 Responses to “আমোদিনীর হেঁশেল – দ্বিতীয় পর্ব”

  1. brishti said

    আমোদিনীর হেঁশেল থেকে টুকে আমের পায়েসটা বানিয়েই ফেল্লাম ।
    সব্বাই বল্ল ‘বেশ হয়েছে’:)
    কৃতিত্বটুকু দেবলীনা সেন এর ই…। ধন্যবাদ পৌঁছে দিলাম যথাস্থানে !

Leave a comment