বা ঙা ল না মা

নীরবতার সংলাপ

Posted by bangalnama on December 31, 2009


চমকে যাওয়ার মতোই তথ্য সব। মরিচঝাঁপি। নৈঃশব্দের অন্তরালে গণহত্যার এক কালো ইতিহাস – লিখেছিলেন জগদীশ মন্ডল। তৎকালীন দক্ষিণবঙ্গের এক সাংসদ শক্তি সরকারের সঙ্গে বারবার গিয়েছিলেন কাদামাটি আর সমুদ্রের নোনা জলের গন্ধ-মেশা হোগলা বনের দ্বীপে। তার পর সব চুপচাপ। বহু বছর কেটে গেল। ২০০৪-এ প্রকাশিত অমিতাভ ঘোষের বই ‘দ্য হাঙরি টাইড’ মরিচঝাঁপি দ্বীপে অল্পকাল-স্থায়ী কিছু ছিন্নমূল মানুষের কথা বৃহত্তর জনসমাজের কাছে নিয়ে এলো। সম্প্রতি দ্বিতীয়বার বইটি পড়বার সময় অনুভব করলাম স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা মানুষের জান্তব জীবনযন্ত্রণারও অধিক। এমনি একটা সময়ে “মরিচঝাঁপি ছিন্নদেশ, ছিন্ন ইতিহাস” পড়তে পড়তে মনে হল এ-সবই তো জানা ঘটনা, তিন দশক আগে আমাদের প্রজন্মের মানুষ জনকে যা সমূলে নাড়িয়ে দিয়েছিল। আবার নতুন মাত্রায় দেখা দিল মরিচঝাঁপি। বারবার ঘুরে আসে কতগুলো নাম। সঙ্গে আসে আত্মবিস্মৃতির গ্লানি। আমাদের বঙ্গভূমির বুদ্ধিজীবি মানুষ হয়তো এমন করেই বেঁচে আছেন। নিজের কাছে লুকিয়েও হয়তো বা। সুখে সমৃদ্ধিতে ভালই তো আছেন। কী দরকার রাজশক্তির বিরুদ্ধাচরণ করে। শিরদাঁড়া একটু সামনে নুইয়ে দিলেই যখন রাজভোগের কিঞ্চিৎ উচ্ছিষ্ট হাতে এসে যায়।


মরিচঝাঁপির অলস শান্ত দ্বীপে গোলাগুলি চলেছিল আজ থেকে প্রায় তিরিশ বছর পনেরো মাস আগে, নদীপারের কুমিরমারি অঞ্চলে। মরিচঝাঁপি থেকে কিছু খাদ্য আর পানীয় জল সংগ্রহ করতে এসেছিলেন নতুন বসতির উদ্বাস্তুরা। প্রস্তুত ছিল জ্যোতিবাবুর স্বরাষ্ট্রসচিব রথীন সেনগুপ্ত সাহেবের পুলিশবাহিনী। অন্তরালে অখন্ড ২৪ পরগণার পুলিশ সুপার অমিয় সামন্ত। গুলি চলল। বাঁচার স্বপ্ন শেষ হল না। মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন বেশ কিছু মানুষ। কেউ বললেন অনেক। অমিয় সামন্ত বলেন মাত্র দুজন। শরীরে গুলি নিয়েও বেঁচে থাকলেন দু’একজন। হয়তো এখনও তাঁদের সন্ধান পাওয়া যায়। দমদম এলাকায় মরিচঝাঁপি নামের আস্ত একটি কলোনিই গড়ে ওঠে পরবর্তী সময়ে। তবে সেই মরিচঝাঁপি পর্বের যাঁরা বেঁচে আছেন, তাঁরা আর মুখ খুলতে সাহস পান না। এসব তথ্য তুষার ভট্টাচার্যের বহুকষ্টে নির্মিত তথ্যচিত্রের অংশমাত্র। এই সেদিনও মরিচঝাঁপির প্রথম প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা বলত তারা কিছু জানে না। অবশ্যই ভয়ে, অনুমান করা যায়। তুষারবাবুর ছবি দেখে আর ওঁর সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় বিষাদগ্রস্ত হয়েছিলাম। সেই গভীর বিষণ্ণতা শুধুই ওঁর তথ্যচিত্রের বিষয়বস্তু-উদ্ভূত নয়। এ বিষণ্ণতা সর্বজনীন মানবতার ‘এভরিম্যানস ডেথ ডিমিনিশেস মি’ – প্রত্যেক মানুষের মৃত্যুই আমাকে ক্ষয় করে। ঠিক তখনই হাতে এল এই বই; খসড়া আকারে। এক মানবতাহীন বামপন্থী সরকারের কলঙ্কিত ইতিহাসের খোঁজ। গাঙচিল-এর প্রকাশনা; সম্পাদনা করেছেন মধুময় পাল। প্রকাশের আলোয় ওই কালের এক অসাধারণ দলিল। মরিচঝাঁপি ছিন্ন দেশ, ছিন্ন ইতিহাস


পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত উদ্বাস্তুরা, পিঁপড়ের সারির মতো, শুধু বেঁচে থাকার আর্তি সম্বল করে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকেছিল। এইসব ছিন্নমূল মানুষগুলির বাসস্থান কোথায় দেওয়া হবে? দন্ডক বনে না কালাপানির দেশ আন্দামানে? ভারি গোল বাঁধিয়েছিলেন বামফ্রন্টের নেতারা। নেতারা। পশ্চিমমঙ্গেই হবে এইসব বাঙালিদের পুনর্বাসন। গড়ে উঠেছিল অসংখ্য উদ্বাস্তু কলোনি। শুধু কলকাতা বা শহরতলির আশেপাশেই না। উত্তরবঙ্গের বহু জায়গায় স্থান হয়েছিল, অবশ্য ওঁদের নিজেদের চেষ্টাতেই। তবুও স্থান সংকুলান করা যায়নি। আন্দামান দ্বীপমালা কিছুতেই নয়। অতএব বাধ্য হয়েই বহু পরিবারকে সরকার পাঠিয়েছিল দন্ডকারণ্যে – পশ্চিম ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশের একাংশ (এখন যা ছত্তিশগড়) এবং অন্ধ্রের পাহাড়ি মালভূমি মিলিয়ে এই অঞ্চল। কেন্দ্রীয় সরকার দন্ডকারণ্য উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের হাতে দায় সঁপে দিয়েছিলেন এইসব তথাকথিত নিম্নবর্গীয় বাঙালি উদ্বাস্তুদের। উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রথম থেকেই লক্ষ্য ছিল সস্তা মজুরি অথবা যৎসামান্য ডোল দিয়ে উদ্বাস্তু মানুষগুলোকে খাটিয়ে কিছু নদীবাঁধ তৈরি করিয়ে জমি কিছুটা সেচ সেবিত করায়। চোলাই মদ তৈরি ছাড়া ওই সব অঞ্চলের মানুষদের জন্য অন্য কোনো ছোটশিল্পের উদ্যোগ ছিল না। দন্ডকারণ্যের পাথুরে জমি, শুকনো বাঁজা মাটি, আর অসহ্য খরায় তপ্ত বনভূমি বাসের যোগ্য ছিল না। ১৯৬৪ সালের পর থেকেই বেশ কিছু পরিবার দন্ডক বন ত্যাগ করে। তাঁদের হিসাব পাওয়া যায়নি। সম্ভবত তাঁদেরই একটা অংশ কুমিরমারি পেরিয়ে মরিচঝাঁপির প্রথম কিস্তির আগন্তুক। শৈবাল গুপ্ত, যিনি বেশ কিছুকাল দন্ডকারণ্য উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ছিলেন, তাঁর লেখাতে কিছু তথ্যের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। লেখাগুলি প্রকাশিত হয়েছিল ইকনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলির তিনটি সংখ্যায়। পরবর্তীকালে মরিচঝাঁপি থেকে পশুর মত বিতাড়িত হয়ে যাঁরা দন্ডকে ফিরে গিয়েছিলেন বলা হয়েছিল, তাঁদের অনেকেরই হদিস পাওয়া যায়নি। হয়তো তাঁদের কিছু মানুষ পুরনো নাম গোত্র হারিয়ে জনারণ্যে মিশে আছেন। হয়তো তাঁদের মুখ বন্ধ।


১৬ই মে ১৯৭৯, যেদিন মরিচঝাঁপিতে দন্ডকবন থেকে আগত উদ্বাস্তু বিতাড়ন শেষ হল, সেদিন আসলে কী ঘটেছিল? প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা প্রায় কারুরই নেই। সেই সব স্বপ্ন-দেখা এবং স্বপ্ন-ভঙ্গের শেষে কিছু মানুষ যাঁরা বেঁচে আছেন, তাঁদের খুঁজে বার করা প্রায় অসম্ভব কাজ। এই প্রসঙ্গে একটি গল্প মনে আসছে। গল্পটি পশ্চিমবাংলার এক নামী লেখকের। গল্পর কাঠামোটা উপস্থিত করা গেল। একদিন ঘর হারানো নিঃসম্বল একদল উদ্বাস্তু স্ত্রী-পুরুষ নিয়ে উত্তর কলকাতার এক বাগান বাড়ি দখল করে বসলেন নিম্নবর্গীয় নমঃশূদ্র নেতা। ঠিক যেন সতীশ মন্ডল- মরিচঝাঁপির উদ্বাস্তু নেতার আদলে কল্পিত। সঙ্গে ওঁর প্রায় কিশোর পুত্র। নানা মানুষের সঙ্গে ওঁর পরিচয়। তার মধ্যে এক উচ্চবর্গীয় মহিলাও। নিজের ছেলেকে ওই মহিলার জিম্মা করে ওঁদের চলে যেতে হয় সম্ভবত দন্ডক বনেই। তারপর অনেক বছর কেটে গিয়েছে। ওই ছেলে এখন যুবা। হয়তো ওর প্রতিভা ছিল অনেক। মনে করা যাক এক আশ্রমবাসিনী সুন্দরীর অসম প্রেমের অপ্রাপ্তি-অভিমানে তাড়িত হয়ে ও আশ্রয় নিয়েছে দক্ষিণ কলকাতার এক বস্তিতে। ততদিনে মস্তানিতে হাত পাকিয়েছে। এমনই একটা দিনে এক দলের সঙ্গে ওকে যেতে হয় মরিচঝাঁপি অপারেশনে। অপারেশনের দায়িত্ব বামফ্রন্টের বড় শরিকের। কেননা সেজ শরিক আরএসপির ঘাঁটি কুমিরমারি এবং সংলগ্ন এলাকা। ভোটের তাগিদে মরিচঝাঁপির দ্বিতীয়বার ছিন্নমূল মানুষগুলোর প্রতি একটা সহানুভূতি আরএসপির ছিলই।


মরিচঝাঁপি দ্বীপ তখন ঘিরে ফেলেছে পুলিশের লঞ্চ এবং অসংখ্য নৌকো। অপারেশনের পুরো দায়িত্ব জ্যোতি বসুর উত্তর দক্ষিণের দুই ম্যান ফ্রাইডের। পেছনে পুলিশ কর্তা আর কলকাতায় বসে সরাষ্ট্র সচিব। অনাহারি, তৃষ্ণার্ত, তবু বাঁচবার স্বপ্নে মশগুল মানুষগুলো হোগলার ছাউনি-ঘেরা ঘরে। সারাদিনের পরিশ্রমে জোগাড় করা চাল কাঠের আগুনে ফুটছে। টগবগ শব্দ হচ্ছে। এই শব্দ উনুনের চার পাশে বসা বাচ্চাগুলোর কানে বিজয়ী অশ্বখুরের ধ্বনি তুলছে- এই বর্ণনাটুকু জ্যোতির্ময় দত্তের। ঠিক তখনই দলীয় মস্তানরা নিঃশব্দে ঘরে ঘরে আগুন লাগিয়ে দিল। মরিচঝাঁপির আকাশ রাঙা হয়ে উঠল। আগুনলাগা ঘরের চালগুলো শিশু, বৃদ্ধ মানুষগুলোকে গ্রাস করল। ওই যুবা প্রতিবাদী উদ্বাস্তু নেতাকে খুন করে ফিরে এল অন্য মস্তানদের সঙ্গে। তার মনেও পড়ল না, সর্বগ্রাসী আগুনের আলোয় নিজের পিতাকেই সে হত্যা করে গেল। এই গল্পটি এক সার্থক উপন্যাসের প্রক্ষিপ্ত অংশ। অনুমান করা যায়, ঔপন্যাসিকের সর্বসমক্ষে বলতে না পারা কথার এক শব্দহীন উচ্চারণ।


তখন আনন্দবাজারে কর্মরত সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় গিয়েছিলেন মরিচঝাঁপিতে। নদী সমুদ্র ঘেরা মরিচঝাঁপি দ্বীপে ন্যূনতম জীবনধারণের প্রয়োজনেই কুমিরমারি থেকে পানীয় জল, চাল ইত্যাদি আনতে হত। ছোট ছোট কাঠের ডিঙি বানিয়ে উদ্বাস্তুরা তাঁদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ করতেন। কিন্তু মাঝে মাঝেই অলক্ষ্যে থাকা রাজনৈতিক প্রভুদের নির্দেশে রাজ্য পুলিশ ডিঙি ডুবিয়ে ওঁদের শুধু ভাতে মারাই নয়, জীবনহানিও ঘটাত। বলাই বাহুল্য এই নৌকাডুবিগুলো দেশি বা আন্তর্দেশীয় আইন-বিরোধী কাজ। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সবই দেখেছিলেন। আনন্দবাজার পত্রিকায় ১৯৭৮ সালে তা ছাপা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, পঞ্চাশটা নৌকো ভর্তি কাঠ নিয়ে মরিচঝাঁপির মানুষজন দ্বীপে ফিরছিলেন। মাঝদরিয়ায় সেই নৌকোগুলো ডুবিয়ে দেওয়া হয়। কাঠ তো গেল নদীগর্ভে। আর মানুষগুলো? কারা ওই নৌকো ডোবালো? মেলেনা উত্তর। পঞ্চাশটা নৌকো ডোবানোর স্বীকৃতি এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে উদ্দেশ্য করে কিছু জ্ঞানগর্ভ কথাবার্তা সুনীলবাবু বলেছিলেন। কিন্তু যা আশ্চর্যের তা হল মরিচঝাঁপিতে সিপিএম যে নৃশংস অত্যাচার চালিয়েছে, একজন সংবেদনশীল সাহিত্যিক হয়েও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার ধিক্কারে মুখর হননি। তাই হয়তো বিবেকের তাড়নায় ‘পূর্ব-পশ্চিম’ উপন্যাসে প্রক্ষিপ্ত হলেও অসাধারণ মমত্বে উপরে উল্লিখিত গল্পটি ঘটনার আদলে ফুটিয়ে তুলেছিলেন। আনন্দবাজারে উনি প্রতিবেদন লিখলেন ‘পশ্চিমবঙ্গীয় বাঙালির উদ্বাস্তুদের ব্যাপারে তিতিবিরক্ত। মোটামুটি যাঁদের সহানুভূতি আছে, তাঁরাও মনে করেন, উদ্বাস্তুদের দায়িত্ব নেবে ভারত সরকার।‘ এই লেখাটিরও মূল্য যে কম ছিল না সেকথা না বললে নিশ্চয়ই অবিচার করা হবে। তবু জিজ্ঞাসা থেকে যায়, দন্ডক থেকে কেন নতুন স্বপ্নে বুক বেঁধে নীল আকাশের নীচে, নদী-জলের সোঁদাগন্ধ নিয়ে এবং ঝড়, জল, সাইক্লোনের বিপদ মাথায় করে মরিচঝাঁপির কাদামাটি আর হোগলা বন সাফ করে উদ্বাস্তুরা ঘর বাঁধতে চেয়েছিল, এ প্রশ্ন কি মানুষের দন্ডমুন্ডের কর্তাদের মনে একবারও উঁকি মারেনি?


বরুণ সেনগুপ্ত আনন্দবাজার পত্রিকায় তাঁর রাজনৈতিক প্রতিবেদনে লিখলেন- ‘আমার প্রশ্ন, আজ যাঁরা পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন, সেই দলগুলোই, অর্থাৎ সিপিএম, ফরওয়ার্ড ব্লক এবং আরএসপি-ই কি দীর্ঘ কুড়ি বছর ধরে বলে আসেননি যে পূর্ববঙ্গের শরণার্থীদের পশ্চিমবঙ্গের বাইরে পাঠাবার কোনও প্রয়োজন নেই? তাঁদের নেতারাই কি দীর্ঘদিন ধরে প্রচার করেননি যে, পশ্চিমবঙ্গেই এদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার মতো পর্যাপ্ত জমি আছে? তাঁরাই কি সর্বতোভাবে উদ্বাস্তুদের বোঝাবার চেষ্টা করেনি যে, আন্দামান বা দন্ডকারণ্যে যাওয়া মানে তাঁদের সর্বনাশ হয়ে যাওয়া? আজ সতীশ মন্ডল (মরিচঝাঁপিতে আসা দ্বিতীয়বার ছিন্নমূল সর্বহারা মানুষগুলোর নেতা) যখন সেই কথাই বলছেন তখন তাঁকে চক্রান্তকারী বলা হচ্ছে কেন?’ কারণ একটা ছিলই। হয়তো ওই বঞ্চিত, লাঞ্ছিত লোকগুলো ভবিষ্যতে সিপিএম-এর ভোটব্যাঙ্কে অন্যের থাবার কারণ হয়ে উঠত। আর দ্বিতীয় কারণ ভারতীয় অরণ্য আইন রক্ষার ছলনা। আজ যেমন নয়াচর নিয়ে প্রোমোটারি করার অদম্য প্রচেষ্টা চলছে, তেমনি মরিচঝাঁপি রেখে দিয়ে ভবিষ্যতের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।


অথচ মরিচঝাঁপি কেমন ছিল সেই ১৯৭০ দশকের শেষ পাদে? প্রায় ১২০ বর্গমাইল ব্যাপ্ত মরিচঝাঁপি সুন্দরবনের সুন্দরী গড়ানের বনভূমি। আর এদিকে কুমিরমারি বাগনার বিস্তৃত অংশ। এখানে সেখানে নারকেল গাছ। জলকাদায় ভরা জমিতে হোগলা আর শীর্ণকায় ছোট গাছগাছড়া। মাঝের উঁচু জমির অংশে সবুজ ঘাস। উপরে নীল আকাশ। ভরা বর্ষায় মাটির সোঁদাগন্ধ। ঝড় আর বাতাস, বন্যা আর সমুদ্রের বানভাসি আশঙ্কায় ভরা সেই প্রায় নির্জন মরিচঝাঁপির দিনরাত। এসবের কথা আশ্চর্য মায়াময়তায় ফুটে উঠেছে অমিতাভ ঘোষের ‘দ্য হাঙরি টাইড’ উপন্যাসে। তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের শরিক দলগুলো নিজেদের প্রাক কথন আর রাজনৈতিক উত্থানের কথা ভুলে না গিয়ে, পুলিশকর্তা আর ক্যাডারদের না নামিয়ে যদি দ্বীপটি মনুষ্যহীন না করতেন, তবে ওই মরিচঝাঁপিই আজ সমৃদ্ধিতে ভরভরন্ত হয়ে উঠতো। আমরা কমবেশি পরের কাহিনী জানি মাত্র। যে বিপদসঙ্কুল বাতাবরণে একদা জঙ্গল কেটে বসতি গড়ে উঠেছিল, সেখানকার অধিবাসীরা আজ মোটামুটি ভালই আছেন প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে। পশ্চিমবঙ্গের কোস্টলাইন সুরক্ষায়ও তাঁরা একটা মানব দেওয়াল তৈরি করে রেখেছে।


মরিচঝাঁপির উদ্বাস্তু আগন্তুকরা আসার অল্পদিনের মধ্যেই জায়গাটা সাফসুতরো করে বাসযোগ্য করে তুলেছিল। বেশ কিছু নলকূপ বসিয়েছিল। তবে নোনা জলের জন্য সেই অতি অগভীর যন্ত্রগুলো কার্যকর হয়ে ওঠেনি। দরকার ছিল সরকারি সাহায্যের। কিন্তু বামফ্রন্ট সরকার তো প্রথম থেকেই বাম। তাই রায়মঙ্গল এবং আরও দু’টি নদী পেরিয়ে ওঁদের পানীয় জল এবং খাদ্য আনতে হতো। দ্বীপে ছোট ছোট গাছ ছাড়াও কিছু মোটা বেড়ের বড় গাছ ছিল। ঝড়ের কবল থেকে ওইগুলিই দ্বীপটিকে সুরক্ষা দিতে পারত। কিন্তু জীবিকার প্রয়োজনে কিছু গাছ কেটে ওঁরা ডিঙ্গি নৌকো বানিয়েছিলেন। মাটির রাস্তা ঘাট প্রস্তুত করেছিলেন। ছাউনি দিয়ে স্কুলবাড়িও তৈরি হয়েছিল। গোলমালটা লাগল ঠিক এমন সময়েই। শুরু হয়ে গেল মিথ্যাপ্রচার। বড় বড় পুলিশ কর্তার আগমন ঘটল। ফিসফিস প্রচার শুরু হলো – বিদেশী কোনও বড় শক্তি এইসব খেতে-না-পাওয়া চর্মসার মানুষগুলোকে অর্থ, অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করছে। বড় বড় পিচের রাস্তা তৈরী করে সমুদ্র পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। বাংলাদেশের সাহায্যে আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ সুন্দরবন-সংলগ্ন মরিচঝাঁপি থেকে তার সম্প্রসারণের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। অতএব বোঝাই গেল নিরন্ন হাঘরে উদ্বাস্তুদের মরিচঝাঁপির মেয়াদ শেষ। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তার পুলিশ বাহিনী দিয়ে প্রায় ঘিরে ফেললো দ্বীপটিকে। নেতৃত্ব দিলেন অমিয় সামন্তদের মতো পুলিশের বড় কর্তারা। খাদ্য, পানীয় জল নিয়ে যাওয়া বন্ধ করলেন। তার আগেই জনতা দলের নেতারা, যেমন কাশীকান্ত মৈত্র এবং আরও কয়েকজন, গোপনে মরিচঝাঁপি ঘুরে যাচ্ছেন। কখনও তাদেরও ফাটকে পুরছে পুলিশ। আনন্দবাজার-এর সাংবাদিক সুখরঞ্জন সেনগুপ্ত কাছ থেকে এই সব দেখছেন। বিএসএফ-এর কর্তাদের আনুকূল্যে বারবার মরিচঝাঁপি যাওয়ার সূত্রে জেল-এ যাওয়ার হাত থেকে বেঁচে এসে আনন্দবাজার পত্রিকায় দিনের পর দিন রিপোর্ট লিখেছেন। ওইগুলিই এখন আমাদের রেকর্ডেড ইতিহাস। মরিচঝাঁপির পূর্বাপর সম্পূর্ণ এক ইতিহাস লিখে সুখরঞ্জন সেনগুপ্ত পরবর্তী মানুষের কাছে, যাঁরা একদিন গণহত্যার পুঙ্খানুপুঙ্খ ইতিহাস লিখবে তাঁদের কাছে, স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। মধুময় পাল মশাই, তাঁর এই মূল্যবান বই-এ সুখরঞ্জন সেনগুপ্তের বিপুল তথ্যসম্পদে ভরা প্রবন্ধটি লিখিয়ে নিয়েছেন। শৈবাল কুমার গুপ্ত মরিচঝাঁপি পর্বের কারণ-সংক্রান্ত ব্যাপারে অসাধারণ পশ্চাৎপট প্রস্তুত করেছেন ওঁর নিজের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে। পান্নালাল দাশগুপ্ত মরিচঝাঁপির উদ্বাস্তুদের নিয়ে কখনও যুগান্তর পত্রিকা এবং নিয়মিতভাবে কম্পাস পত্রিকায় লিখে গিয়েছেন। দন্ডক-এর আর দন্ডক থেকে পলায়নপর উদ্বাস্তুদের সমস্যার স্থায়ী সমাধানে উনি বারবার গিয়েছেন ওই সব এলাকায়। আর পশ্চিমবাংলার উদ্বাস্তুরা যেহেতু ওড়িশার প্রান্তিক মানুষ বা দন্ডকের ভারপ্রাপ্ত কিছু কর্তাদের কাছ থেকে অসহযোগিতার সম্মুখীন হয়েছে, পান্নালালবাবু ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় পুনর্বাসন দফতরের আমলাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু কিছু লাভ হয়নি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তখন নানাভাবে অপপ্রচার এবং কৃত্রিম অসহায়তার দোহাই পারছেন। বিধানসভায় বিতর্কের উত্তরে জনতা দলের সদস্য ও নেতা কাশীকান্ত মৈত্রকে জনতা দলের জোট কেন্দ্রীয় সরকার এবং তার প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই-এর কাছে যেতে বলছেন।


১৯৭৮-এর নভেম্বর মাস নাগাদ অখন্ড চব্বিশ পরগণার পুলিশের ‘সামন্ত’তন্ত্র ব্যারিকেড তৈরি করল। যাতে মরিচঝাঁপির মানুষজন বাগনা, কুমিরমারি ইত্যাদি অঞ্চল থেকে পানীয় জল আর খাদ্যসংগ্রহ করতে না পারেন। হাইকোর্ট মানবাধিকার রক্ষার্থে পুলিশের এই বেআইনি কাজের বিরুদ্ধে রায় দিল। তখন খাদ্যপানীয় সংগ্রহের দেরি ঘটিয়ে আস্তে আস্তে মানুষগুলোর শক্তিক্ষয় করিয়ে দেওয়া হয়। হোক না আদালত অবমাননা। তারপর এল সেই ভয়ংকর দিন। মে মাসের এক গভীর রাতে দু’শো পুলিশ আর সাধারণ নৌকোয় দু’হাজার ক্যাডার দিয়ে ঘিরে ফেলা হলো মরিচঝাঁপি। আগুন দেওয়া হলো বাড়িগুলোতে। উদ্বাস্তু বোঝাই কিছু নৌকো ডুবিয়ে দেওয়া হলো। আর কিছু শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, উদ্বাস্তু নেতাকে ধরে বেঁধে আনা হল হাসনাবাদ রেলওয়ে স্টেশনে। কিছু আগুনে পোড়া মানুষ নদীর কুমীর-কামটের পেটে গেলেন। শোনা যায় ব্যাপক গুলি চলেছিল অন্ধকারে। সমস্ত বুক পুড়ে যাওয়া ফণিবালা এবং আরও কিছু আধপোড়া ধ্বস্ত মানুষের সন্ধান পেয়েছিলেন সুখরঞ্জন সেনগুপ্ত ঝাড়গ্রামের কাছে দুধকুন্ডিতে। এই সবই তিনি প্রত্যক্ষদর্শী রিপোর্টার হিসেবে লিপিবদ্ধ করে মানুষের গোচরে নিয়ে এসেছেন।


আর একটা কথা না বললে হৃদয়ের গভীর উচ্চারণের অনুরণন পাওয়া যাবেনা। মধুময় পাল তাঁর প্রকাশিতব্য সংকলনে শ্রী অমিয়কুমার সামন্ত- তৎকালীন অখন্ড চব্বিশ পরগণার পুলিশ সুপার-এর একটি লেখা সংগ্রহ করেছেন। মধুময় তাঁর ভূমিকায় – ‘সত্যেরে লও সহজে’তে- আমাদের এবং এই প্রজন্মের মানুষদের হৃদয় খুঁড়ে দিয়ে মন্তব্য করেছেন- ‘যাঁরা অবরোধের দেওয়াল খাড়া করেন, সত্য বলার এক্তিয়ার তাঁদের থাকেনা।‘ কেন না মরিচঝাঁপি কান্ডের ব্যাখ্যানে সামন্তমশাই বলেছিলেন ‘বিভিন্ন লেখায় পুলিশি নির্যাতন সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তা ‘মিথ্যাচার’। শুধু এই তথ্যভিত্তিক সংকলনেই নয়, ‘দি স্টেটসম্যান ফেস্টিভ্যাল’ সংখ্যায় মরিচঝাঁপি সংক্রান্ত লেখায় একই কথা বলেছেন সামন্ত। একটা সুখবর অবশ্য আছে। মরিচঝাঁপির মামলাটা সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে উঠেছে। দেখা যাক জীবিত পুলিশ অফিসাররা কী এফিডেভিট দেন। আর সেই স্বপ্নভঙ্গ-হওয়া বারবার-ছিন্নমূল দন্ডক-ফেরত মরিচঝাঁপির মানুষগুলো, যারা শেষ পর্যন্তও মরে বেঁচে ছিল, তাঁদের কী হলো? শঙ্খ ঘোষের লেখা দিয়ে শেষ করি-


‘ট্রেনের থেকে ঝাঁপ দিয়েছো ধান শিয়রে।
গলার কাছে পাথরবাঁধা বস্তামানুষ।
মাটির থেকে উঠছিল তার মাতৃভূমি
বুকের নীচে রইলো বিঁধে বৃহস্পতি।’


এইরকম একটা ইতিহাসলব্ধ সংকলনের দরকার ছিল। এটা সময়ের দাবী।


সূত্রঃ মরিচঝাঁপি, ছিন্ন দেশ ছিন্ন ইতিহাস
সম্পাদনাঃ মধুময় পাল, গাঙচিল ২০০৯


লিখেছেন – অমিয় চৌধুরী
[তিরিশ বছর পর প্রকাশিত মরিচঝাঁপির ছাইচাপা পড়া ইতিহাস। ২৭শে ডিসেম্বর ২০০৯, সংবাদ প্রতিদিন পত্রিকায় ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত শ্রী অমিয় চৌধুরীর প্রতিক্রিয়ার অংশবিশেষ লেখকের অনুমতিক্রমে বাঙালনামায় প্রকাশিত হল।]

26 Responses to “নীরবতার সংলাপ”

  1. basu acharYa said

    “সংবাদ প্রতিদিন পত্রিকায় ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত” – 🙂

    ‘new york times’-er pataY hitler theke stalin sobai nindito hon. 🙂 dronacharjo ghosh theke charu majumdaar jader hateY khun holen, 49 shale latika-pratibha-amiya’der rakta niYe jara bohubajar’er boro rastar opore dolpurnima palon kore banglar sramik-krishak’ke awrdhochandra dekhalen, tarai aaj ‘morichjhapi-r’ kobor khnure haar-mangsho bar korechhen. 🙂 “sotYo Seleucus, ki bichitro ei desh!” 🙂 ‘pratidin’ ke shoto koti pronam. sei sathe ‘bangalnama’ ke selaam, thoori, raktim selaam. bhabishyat’er dolpurnimate madol-e na holeo, baya te theka debar “অনুমতি” apnadero jutbe. 🙂

    • bangalnama said

      basu acharYa, আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

      The Silence of Marichjhapi

      Marichjhapi – Uncovering the Veil of Silence

      http://www.thesouthasian.org/archives/2009/marichjhapi_and_the_revenge_of.html

      দন্ডক -> মরিচঝাঁপি উদ্বাস্তু সেটলমেন্টের কার্যকারণ, পটভূমিকার জন্য এই তিনটি লেখা পড়তে পারেন।

      আর “সংবাদ প্রতিদিন” এখানে অবান্তর। বাঙালনামায় প্রকাশিত লেখাটির কন্টেন্ট নিয়ে আপনার কিছু বক্তব্য থাকলে অবশ্যই বলুন। আমরা উৎকর্ণ।

      • basu acharYa said

        “দন্ডক -> মরিচঝাঁপি উদ্বাস্তু সেটলমেন্টের কার্যকারণ, পটভূমিকার জন্য এই তিনটি লেখা পড়তে পারেন।”

        prio bandhu,
        apnar jonne ek koli Rilke:

        we cannot know his legendary head
        with eyes like ripening fruit. And yet his torso
        is still suffused with brilliance from inside,
        like a lamp, in which his gaze, now turned to low,

        gleams in all its power. Otherwise
        the curved breast could not dazzle you so, nor could
        a smile run through the placid hips and thighs
        to that dark center where procreation flared.

        Otherwise this stone would seem defaced
        beneath the translucent cascade of the shoulders
        and would not glisten like a wild beast’s fur:

        would not, from all the borders of itself,
        burst like a star: for here there is no place
        that does not see you. You must change your life.

        “আর “সংবাদ প্রতিদিন” এখানে অবান্তর। বাঙালনামায় প্রকাশিত লেখাটির কন্টেন্ট নিয়ে আপনার কিছু বক্তব্য থাকলে অবশ্যই বলুন। আমরা উৎকর্ণ।”

        khub alpo buddhi manush ami; ki ba jani content ba form er byapare! 🙂 sudhu eitukui jani je ek roosh harmad ekoda bolechhen: “mohan biplobider mrittiyur por prithibir somosto pratikriyashilra tnar murti gore kulungi te shajiye rekhe nirjib putule parinato kore ebong sei putul dekhiye nijeder khomotaye ashar path prashasta kore.” 🙂 ‘syphilis’ akranto manushtir kotha jodio ekhane lekha abantar–‘nibirjer’ santan kamonar moto. 🙂

    • Arup Chakraborty said

      1970 er Bardhaman eer Snaibari te Pronob Sai, Moloy Sai, Jiten Roy er rakta niye CPIM er Harmad der dolpurnima palon ke srenisongram er bulir arale somorthon kari Basur mukhe ekhon sunte hochhe “49 shale latika-pratibha-amiya’der rakta niYe jara bohubajar’er boro rastar opore dolpurnima palon” niye kotha… “sotYo Seleucus, ki bichitro ei desh!”

      Khun khun -i hoy, kono tai somorthonjoggyo noe.

      • basu acharYa said

        sudhu matro bandhubar arup’er janye: 🙂

        “we have to take the risk of violence to shake off the great calamity of slavery” – ‘collected works of [awhingsho] mahatma gandhi, volume: 26, pg: 160.’ 🙂
        ^
        |
        |
        mantabyo nishproyojon. 🙂

        ps. ektu miliye nio. smriti’r cheye boro bishwasghatak aar kei ba achhe!

  2. Somnath said

    ‘sudhu eitukui jani je ek roosh harmad ekoda bolechhen: “mohan biplobider mrittiyur por prithibir somosto pratikriyashilra tnar murti gore kulungi te shajiye rekhe nirjib putule parinato kore ebong sei putul dekhiye nijeder khomotaye ashar path prashasta kore.”’

    ar biplabira ki koren? marichjhnapi-udwastu andolon niye goto tin doshok biplabira ki korechhen? tanrai ki byaparTike upekkha-obg\oggar andhokaare Dhele protikriyashil-der bhobishyot rosod torir poth proshosto koren ni?

    • basu acharYa said

      “tanrai ki byaparTike upekkha-oboggar andhokaare Dhele protikriyashil-der bhobishyot rosod torir poth proshosto koren ni?”

      haan, roshod tule diYechhen biplobirai. fole aaj ‘amra’ tule dile khoti ki? 🙂 ekta golpo sunben? shunun tahole: janaiko [oti]harmad rashtrer rokkha kortar hatey dhora pore raktashunyo hoye pore achhen sskm hashpatal’er outdoor-e. samajshebi lekhika [porobortikale ‘magsayasay’ prapto buddhijibi] bole uthlen: “khun korechhe to o. besh korechhe oke oi bhabe rekhechhe. hnuh, biplob hocchhey!” ei manushgulo ke aaj morichjhapi niye sarab hote dekhe jante icchhey kore “o didi, morichjhapi’r kobor khnora haar er koto dawr jacchhey?!”

      ki ar boli… retail store er satti awbhab nei. 🙂

  3. Somnath said

    adbhut to! amra na bolleo jeno pratidin and co. bose thakbe . ebong kotha seTao naa.
    kothaTa hochchhe pratidin bolchhe bole amra bolbona keno? ar, amra na bolle to aro aro roshod tule dewa habe basu.

    jemon holocaust-er roshod, fundamentalism-er roshod ekcheTiya bhabe americar haate tule dewa hochche..

    • basu acharYa said

      “o didi, morichjhapi’r kobor khnora haar er koto dawr jacchhey?!” 🙂 kon samay kaar hatey roshod ta uthchhe… jedin 235, sedin kothay chhilo ‘morichjhapi’? tokhon jara mukher fyana tule chitkar korchilo, tader samparke pratidin-dainaik bajar der motamot ki chhilo? 🙂 hungry tide ta kyano “dwitio bar” porte lage etao bojhen na bhai! 🙂

      “apnar kaam hobe idhar ka maal udhar, udhar ka maal idhar”
      “mane! dalal!”
      “dalal ta jodi apnar pasand na hoy tahole ekta bhalo naam asse, bolben ‘middleman'”

      “amra” to ar sudhu “amra” noyee. 🙂 pratidin ‘metro cash & carry’, “amra” tar franchise. 🙂

  4. Somnath said

    daamTa jara addin kome jete diyechhilo, tader ki egulo bola saaje?

    • basu acharYa said

      saje na to. tarai to bolchhe jara sei 235 er din mukher “fyana” tule chillacchilo. 🙂 khuni ghrinYo, kintu khun howa manusher haar niye jara byabsha koren ebong sei byaboshai’der gorgorar theke jara du taan maren, tader samparke bolar moto shabda je amar abidhan-e nei. 🙂

  5. আকাশ said

    বাসুর বক্তব্যটা কি ? এইসব করে বাঙালনামা দক্ষিনপন্থী শক্তির হাত শক্তিশালী করছে তাই মরিচঝাপি থেকে নন্দীগ্রাম সর্বত্র নিশ্চুপ থাকতে হবে । তাতে যে বাম-পন্থারই আখেরে ক্ষতি তা বুঝতে বাসুর মত পন্ডিত হতে হয় না । অথবা পন্ডিত বলেই বোঝে না ।

    • basu acharYa said

      “thakte de, amay thakte de na..apon mone..” – 🙂

      sotyo’r srenibhitti thake. 🙂 nothing above class- eta amar biswas. ar ei lekha ‘pratidin’ ei muhurte keno bar korechhe ami jani. ar bangalnama keno bar korechhe tao jani. tafat-tao jani. tobe ‘unconsciousness’ er karane jodi sreni khotigrastha hoy, tahole condemn korbo, ebong korchi. ‘bangalnama’ ebong tar sathe jukta sokolkei.. nijekeo. 🙂

  6. basu acharYa said

    final statement: ami cpi-m er apologist noyee. naya-samshodhanbadi bojjat’der defend kora amar kaaj nay. ami AGEO morichjhapi’te howa cpi-m [left front]-er santrash’ke CONDEMN korechhi, ebong AAJO kori. prashna’ta sekhane noy. samaj ekta jotil byabostha [system]. tar egiye jawar niyomta ar jai hok arithmetic progression’er moto noy. ar tai, samaj-e emon ekekta samay ashe jokhon kharap ar khub kharap’er madhye bechhe nite hoy. 31 shaal’er social-fascist [social-democrat]-der sathe 1934 shale ‘popular front’ keno tairi korte hoy? karan’ta ar kichui na: biplobbhiru social democrat’der theke fascism [imperialism at it’s ugliest form] onek BESHI bhoyabaho. ar ei crisis er muhurte cpi-m er karmibahini ar netritter opor bishwas rakhte parchhe na, tritio paath er byapare tara utsahi hoye uthchhe. ei abasthaye darja bandha korata sectarianism. mone rakhben: “ei sob shoktir sathe oikyabadhyo hobar moto mone prasharata amader rakhte hobe. moner prasharata communist’der guun.” 🙂

  7. আকাশ said

    বাসুর এইকথা নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই , যে ‘প্রতিদিনে’র একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে । এমন কি ,যারা ইমারজেন্সির সময় ইন্দিরার সাথে দেখা করেছিলেন তারাও আজ গণতন্ত্রের ঠিকেদার সাজছেন ।

    কিন্তু ,তাদের রাজনীতিকে উন্মোচন করার সাথে মরিচঝাপি বা নন্দীগ্রামের গণহত্যার বিরোধীতা করার কোনো বিরোধ নেই । আর সেটা করতে গেলে গণহত্যার রাজনীতির বিরোধীতার সামনের সারিতেও বামেদেরই থাকতে হবে । না পারলে চেষ্টাটা চালিয়ে যেতে হবে ।

    আরো কিছু বলা যেত , কিন্তু কথায় কথা বাড়ে ।

  8. Ashis Majumder said

    I liked this article. I’ve posted this article in Facebook, please excuse me i didn’t ask you for your permission. Thank you and best regards.

  9. মাহবুব লীলেন said

    এই ইতিহাসটা একেবারেই জানা ছিল না
    আজ সকালে উঠেই জানলা আর ভাবছি কতটা যে অন্ধকার আর কতটা যে লজ্জা লুকিয়ে আছে আমাদের আশেপাশে

Leave a comment