বা ঙা ল না মা

তেভাগা সংগ্রামের স্মৃতিকথা

Posted by bangalnama on September 13, 2010


– লিখেছেন মণি সিংহ


১৯৪৬-৪৭ সালে ডিসেম্বর, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি মাসে তখনকার পূর্ববঙ্গ (বাংলাদেশ) ও পশ্চিমবঙ্গে যে তেভাগা সংগ্রাম হইয়াছিল তা ছিল যেমন বিরাট, তেমনি জঙ্গী। ৬০ লাখ দুঃস্থ ভাগচাষী হিন্দু, মুসলমান, উপজাতি মেয়ে-পুরুষ জীবনকে তুচ্ছ করিয়া ঐ সংগ্রামে ঝাঁপাইয়া পড়িয়াছিলেন। বাংলার মাটি হিন্দু, মুসলমান উপজাতি মেয়ে-পুরুষ কৃষকের রক্তে লালে লাল হইয়া পৃথিবী বিখ্যাত এক কৃষক আন্দোলনের ইতিহাস সৃষ্টি হইয়াছে। সারা পৃথিবীতে যতগুলি বিরাট বিরাট কৃষক আন্দোলন আজ পর্যন্ত হইয়াছে বাংলার তেভাগা আন্দোলন তাহার অন্যতম। ইহা আজ আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত। এই আন্দোলনের ফলশ্রুতি হিসাবে পশ্চিমবঙ্গে ভাগচাষ প্রথার আমূল পরিবর্তন হইয়াছে। বাংলাদেশে আজও ভাগচাষ প্রথা বিলোপ হয় নাই সত্য, কিন্তু বাংলাদেশের জনসাধারণের সঙ্গে দুঃস্থ কৃষক সমাজ বাংলাদেশে স্বাধীনতা সংগ্রাম করিয়া যুগান্তকারী বিজয় অর্জন করিয়াছে। বাংলাদেশে অভ্যুদয় হইয়াছে এক স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্রের। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে গরিব কৃষক সমাজের অবদান অপরিসীম।


বাংলাদেশে জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত। সামন্ততান্ত্রিক অবশেষগুলি বিশাল কৃষক সমাজের মুখোমুখি দাঁড়াইয়া থরথর করিয়া কাঁপিতেছে, কারণ আমাদের রাষ্ট্রের লক্ষ্য সমাজতন্ত্র।


প্রকৃতির অমর সৃষ্টি বাংলা। নদীমাতৃক বাংলা। ঊর্বর ভূমির লাঙলের ফলায় প্রকৃতির অকৃপণ দান। এমনি প্রাণোচ্ছল পরিবেশেও চাষী নিপীড়িত, নির্যাতিত আর বঞ্চিত হইয়াছে। কিন্তু চাষী এই নিপীড়ন মুখ বুজিয়া সহ্য করে নাই। শিখার মতো জ্বলিয়া উঠিয়াছে। বীরের মতো লড়াই করিয়াছে। সেই শিখা সময়ে সময়ে স্তিমিত হইয়াছে সত্য, কিন্তু ঐ জ্বলন্ত শিখাকে কোনোদিন চিরতরে নিভানো যায় নাই। অনুকূল বাতাসে তাহা আবার জ্বলিয়া উঠিয়াছে।


১৯শ শতকে রংপুর, পাবনা, যশোর, ময়মনসিংহ, প্রভৃতি জেলায় কৃষকরা বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের ঐতিহ্য রাখিয়া গিয়াছেন। তাঁহাদের উত্তরসূরী হিসাবে বাঙলার কৃষকরা সংগ্রামে আগাইয়া আসিয়াছেন। সচেতন ও সংগঠিতভাবে সংগ্রাম পরিচালনা করিয়াছেন। জয় ও পরাজয়ের মধ্য দিয়া তাঁহাদের যাত্রা অটুট আছে। ত্রুটি-বিচ্যুতি সত্ত্বেও তেভাগার সংগ্রাম ছিল ঐ গতিধারার একটি সংগঠিত যোগফল।


আন্দোলনের সূচনা–


১৯৪৬-৪৭ সালে বাঙলার প্রাদেশিক কৃষক সভা ও কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে তেভাগা সংগ্রাম শুরু হয়। আন্দোলনের আওয়াজ ছিল, ‘ইনক্লাব জিন্দাবাদ’, ‘নিজ খোলানে ধান তোল’, ‘আধির বদলে তেভাগা চাই’। মোট উৎপন্ন ফসলের দুই ভাগ পাইবে ভাগচাষী, এক ভাগ পাইবে মালিক। পূর্ব প্রথা অনুযায়ী ধান উঠিত জোতদারের খোলানে- এবার উঠিবে ভাগচাষীর বাড়িতে। সংঘবদ্ধভাবে শৃঙ্খলার সহিত ধান কাটা হইবে, কেউ আলাদা ভাবে ধান কাটিবে না। এই সব ব্যবস্থা শৃঙ্খলার সহিত পালন করিতে হইবে। একদল মেয়ে-পুরুষ ভলান্টিয়ার ধান কাটিবে, আর একদল ভলান্টিয়ার লাঠি, বল্লম, তীর, ধনুক নিয়ে পাহারা দিবে। প্রত্যেক তেভাগা আন্দোলনের কেন্দ্রে শক্তিশালী ভলান্টিয়ার বাহিনী গঠিত হয়। মেয়ে ভলান্টিয়ার আর পুরুষ ভলান্টিয়ার দল ছিল ভিন্ন ভিন্ন। ১৯৪৯-৫০ সাল টংক আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে কৃষক ভলান্টিয়াররা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেন — হাজং ভলান্টিয়াররা কিছু রাইফেল পুলিসের নিকট কাড়িয়া নেন, কিছু আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহ করেন আর পঞ্চাশ-ষাটটি গাদা বন্দুক হাজং কারিগররা নিজেরাই তৈরি করেন। ১৯৪৬-৪৭ সালে তেভাগা বা টংক আন্দোলনে কৃষক ভলান্টিয়াররা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেন নাই।


বর্গা বা ভাগচাষীদের মধ্যে ছিল হিন্দু, মুসলমান আর উপজাতি কৃষক। জোতদার ছিল হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের লোক।


বাংলাদেশের সব জেলাতে তেভাগা আন্দোলন গড়িয়া তোলা সম্ভব হয় নাই। যেসব জেলায় ভাগচাষীদের অর্ধদাসের মতো জোতদাররা ব্যবহার করিতেন বা শোষণ ও জুলুম ছিল মাত্রাতিরিক্ত সেই সব জেলাই ছিল সংগ্রামের পীঠস্থান। এই পটভূমিকায় পূর্ব বাংলার দিনাজপুর, রংপুর, যশোর, পাবনা, ময়মনসিংহ জেলায় তেভাগা আন্দোলন গড়িয়া উঠে। পশ্চিম বাংলায় যে সব জেলায় তেভাগা আন্দোলন গড়িয়া উঠে সে জেলাগুলি হইতেছে জলপাইগুড়ি, চব্বিশ পরগণা, মেদিনীপুর, মালদহ প্রভৃতি। তেভাগা আন্দোলনের ব্যাপকতা ছিল দিনাজপুর জেলায়, বিশেষ করিয়া ঠাকুরগাঁ মহকুমায়। দিনাজপুর জেলাই ছিল তেভাগা আন্দোলনের মূল কেন্দ্র। দিনাজপুর জেলার ৩০টি থানার মধ্যে ২২টি থানায় তেভাগা আন্দোলন সীমাবদ্ধ ছিল। যশোর জেলার নড়াইল মহকুমায় তেভাগা আন্দোলনের ছিল মূল ঘাঁটি। পাবনা জেলার একটা অংশে তেভাগা আন্দোলন গড়িয়া উঠিয়াছিল। ময়মনসিংহ জেলায় মাত্র চারটি এলাকায় তেভাগা আন্দোলনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।


জোতদার-পুলিশের মিলিত হামলা —


শত শত কৃষক ভলান্টিয়ার অতি শৃঙ্খলার সহিত যৌথভাবে ধান কাটিয়া ভাগচাষীদের বাড়িতে তুলিতেছিল। এই অভিনব ব্যবস্থা দেখিয়া জোতদারের দল নীরব দর্শক হইয়া বসিয়া থাকে নাই। প্রথমদিকে জোতদারের দল নানারূপ গুজব ছড়াইয়া কৃষকদের নৈতিক শক্তি ভাঙিয়া দিতে চেষ্টা করে। পরবর্তী ধাপে তাহারা গুন্ডাবাহিনী লেলাইয়া দেয়। গুন্ডার দল কৃষক ভলান্টিয়ারের লাঠির ঘায়ে ধরাশায়ী হইয়া যে যেদিকে পারিত পলাইয়া যাইত। পরে জোতদাররা আমদানি করিল বন্দুক। সশস্ত্র কৃষকদের রক্ত রাঙা চোখ দেখিয়া তাহারা আর আগাইতে সাহস করে নাই। রংপুরে ডিমলা থানার খগাখড়ি বাড়িতে পাঁচটা বন্দুক লইয়া অতর্কিত আক্রমণ করিয়া কৃষক নেতা তন্নারায়ণকে হত্যা করে ও বাচ্চা মামুদকে শুরুতর জখম করে। এর প্রতিবাদে হাজার হাজার কৃষকের যে ঐতিহাসিক মিছিল হইয়াছিল তাহা আজও জনসাধারণ স্মরণ করিয়া থাকে। ১৯৪৭ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে নালিতাবাড়ির নিকটে জোতদার বিনোদ পাল গুন্ডা লেলাইয়া ভাগচাষী সর্বেশ্বর ডালুকে হত্যা করে। ইহা টংক এলাকার মধ্যে। এখানে ঐক্যবদ্ধ কোনো তেভাগা সংগ্রাম হয় নাই। জোতদারদের কলাকৌশল যখন ঐক্যবদ্ধ কৃষক সংগ্রামের কাছে খান খান হইয়া গেল তখন তাহারা সরকারের শরণাপন্ন হয়। কায়েমী স্বার্থের ধারক বাহক সরকার বিন্দুমাত্র ইতঃস্তত না করিয়া দিকে দিকে রাইফেলধারী পুলিশ পাঠাইতে থাকে। তাহারা তুলনাহীন অত্যাচার চালাইতে থাকে। অনেক জায়গায় প্রতিরোধের মুখে সশস্ত্র পুলিশকে প্রাণ লইয়া পালাইয়া আসিতে হয়। রাজবংশী মেয়ে ভান্ডনী পুলিশের এক জমাদারের বন্দুক ছিনাইয়া তাহাকে সারা রাত এক ঘরে আটকাইয়া রাখে। সশস্ত্র বাহিনীর শক্তিবৃদ্ধি হইতে থাকে। সশস্ত্র বাহিনী দিনাজপুর জেলার পতিরাম থানার খাঁপুরে কৃষক নেতা চিয়ারশাই সমেত ছাব্বিশজনকে হত্যা করে। ১৯৪৭ সালে জানুয়ারি চিরির বন্দরে (দিনাজপুর) শিবরাম (সাঁওতাল) ও নিঃস্ব কৃষক সমিরউদ্দিনকে গুলি করিয়া হত্যা করে। বিভিন্ন জেলায় বাড়িঘর ভাঙিয়া ফেলে, মেয়েদের ধর্ষণ করে। সারা প্রদেশে ৩,১১৯ জনকে গ্রেফতার করে। এই নৃশংস অত্যাচারের কোনো অজুহাত ছিল না, কারণ কৃষকরা কোনো জোতদারের বাড়ি আক্রমণ করে নাই বা কাহাকেও হত্যা করে নাই। শুধু কায়েমী স্বার্থবাজদের স্বার্থরক্ষা করার জন্য সরকার ঐরূপ বর্বর নির্যাতন চালাইয়াছিল। সরকার রক্তের বন্যায় ডুবাইয়া দিয়া তেভাগা সংগ্রামকে সাময়িক ভাবে স্তব্ধ করিয়া দিতে সমর্থ হয়।


তেভাগা সংগ্রামের বৈশিষ্ট্য–


তেভাগা সংগ্রামের কতকগুলি বিশেষ দিক আছে, বিশেষত্ব আছে। ১৯৪৬-৪৭ সালে মুসলিম লীগের জোয়ারে মুসলিম জনসাধারণের প্রায় সবাই মুসলিম লীগের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রভাবে বিভ্রান্ত শুধু তাই নয়, ১৯৪৬ সালের আগস্ট মাসে কলিকাতায় এবং অন্যান্য স্থানে যে বীভৎস সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয় তাহার ক্ষত তখনও বাংলাদেশ হইতে শুকাইয়া যায় নাই। এই অবস্থার পটভূমিকায় কৃষক সমিতি নিঃস্ব ও গরিব মুসলিম কৃষকদের এক বড় অংশকে তেভাগা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করাইতে সমর্থ হয়। শুধু তাহারা সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন নাই, চিয়ারশাই-এর মতো কৃষক নেতা ও সমিরউদ্দিনের মতো নিঃস্ব কৃষক তেভাগা সংগ্রামে শহীদ হইয়াছিলেন। এই সময়ে মুসলিম লীগের সাম্প্রদায়িক জিগিরে মুসলমান সমাজে প্রায় সমস্ত শিক্ষিত ব্যক্তি পাকিস্তানের সমর্থক হইয়া পড়েন। অপরদিকে পূর্ববঙ্গে হাতে গোনা যায় এইরূপ মুসলিম শিক্ষিত সম্প্রদায় হইতে আগত কয়েকজন নেতা কৃষক আন্দোলনের প্রতি আকৃষ্ট হন। এঁরা হইতেছেন হাজী মহম্মদ দানেশ (দিনাজপুর), মোহাম্মদ ইয়াকুব মিয়া (কুমিল্লা), মুন্সি জহিরউদ্দিন (ময়মনসিংহ), আলতাব আলি (ময়মনসিংহ), আবদুল কাদের (বগুড়া), কছিম মিয়া (গাইবান্ধা), নূর জালাল (যশোর)। এই সব শিক্ষিত ব্যক্তি ছাড়াও বিভিন্ন অঞ্চলে সংগ্রামের মধ্য দিয়া মুসলমান কৃষকদের মধ্যেও কৃষক নেতা গড়িয়া উঠেন, ইঁহাদের মধ্যে চিয়ারশাই, নিয়ামত আলি, জমসেদ আলি চাটি, বাচ্চা মামুদ (রংপুর), মরহুম সাবির মন্ডল, আতাবউদ্দিন, মজিদ মিয়া (ময়মনসিংহ)-র নাম উল্লেখযোগ্য। রাজবংশীদের মধ্যে কৃষক সমাজ হইতে আগত বহু নেতা ছিলেন। রাজবংশীদের মধ্যে প্রথম সারির নেতা হইতেছেন কম্পরাম সিং (রাজশাহী জেলে ১৯৫০ সালে গুলি করিয়া হত্যা করা হয়), রূপনারায়ণ রায় (নকশালপন্থী, ২৩ মার্চ ‘৭৩ সালে হত্যা করা হয়), আভরণ সিং, রাম সিং (দিনাজপুর), তন্নারায়ণ, দীনদয়াল, কালাচাঁদ (রংপুর)। হাজংদের মধ্যে প্রথম সারির নেতা হইতেছেন ললিত সরকার, বিপিন গুণ, পরেশ সরকার, কাঙাল দাস সরকার, গজেন্দ্র রায়, প্রসন্ন সরকার (ময়মনসিংহ)। শিক্ষিত হিন্দু মধ্যবিত্ত সমাজ হইতে আগত একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যক্তি সে সময় কৃষক আন্দোলন গড়িয়া তুলিতে অগ্রসর হইয়া আসেন।


দ্বিতীয় বিশেষত্ব হইতেছে মেয়েদের বিরাট অংশ এই তেভাগা সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ‌ইঁহারা শুধু যে ভলান্টিয়ার ছিলেন তাই নয়, ইঁহাদের মধ্যে দুর্ধর্ষ ও কৌশলী নেত্রী সৃষ্টি হইয়াছিল। তেভাগা বা টংক আন্দোলনে শুধু সংখ্যার দিক হইতেই নহে, সংগ্রামে তাঁহারা অসাধারণ বীরত্ব দেখাইয়া শহীদ হইয়াছেন। ইঁহারা হইতেছেন — রাসমণি, শঙ্খমণি, রেবতী প্রভৃতি। দিনাজপুরের সংগ্রামে ছিলেন রাজবংশী কৃষক বধূ জয়মণি। এইরূপ এক নেত্রী ছিলেন দিনাজপুরের দীপশ্বরী। লাঠি উঁচাইয়া তিনি অন্যান্য ভলান্টিয়ারদের সঙ্গে পুলিশদের আক্রমণ করেন। পুলিশ পিছু হটিয়া পলায়ন করে। দিনাজপুরের আরো অনেকের নাম করা যায়, যেমন — শিখা বর্মণ, মাতি বর্মণী, জয় বর্মণী। কৃষক আন্দোলনের একজন দুর্ধর্ষ নেত্রী ছিলেন সরলাদি, নমশূদ্র কৃষক। যশোর জেলার নড়াইল মহকুমায় গুয়াখোল গ্রামে ছিল তাঁহার বাড়ি। নড়াইলে তেভাগা আন্দোলন গড়িয়া ওঠে। তাহার কেন্দ্র ছিল বাকড়ি গ্রাম। সরলাদির যেমন ছিল সাহস তেমনি ছিল গায়ের জোর। পুরুষরাও তাঁহার কাছে হার মানিত। সরলাদি ২৫০-৩০০ মেয়ের একটি ঝাঁটা বাহিনী সংগঠিত করিয়াছিলেন। ঝাঁটার মুখে দুই দুইবার পুলিশ বাহিনীকে মাফ চাহিয়া সরিয়া পড়িতে হইয়াছিল। যশোরের তেভাগা আন্দোলনের ভলান্টিয়াররা ঢাল-সড়কি নিয়া গ্রাম পাহারা দিত, অনেক সময় পুলিশ ইহাদের ব্যূহ ভেদ করিতে ব্যর্থ হইয়া চলিয়া যাইত। পুলিশ সরলাদিকে ধরিবার জন্য বহুবার চেষ্টা করিয়াছে কিন্তু প্রতিবারই চতুরতার সহিত ফাঁকি দিয়া পুলিশ বেষ্টনী ভেদ করিয়া তিনি চলিয়া গিয়াছেন। সরলাদি আজ আর বাঁচিয়া নেই, কিন্তু তাঁহার বিস্ময়কর কাহিনী সেখানের কৃষকরা এখনও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে।


ময়মনসিংহ জেলার কৃষক আন্দোলনের মূল ভিত্তি ছিল টংক আন্দোলন, যার লক্ষ্য ছিল টংক প্রথার উচ্ছেদ। ময়মনসিংহ জেলার উত্তরে গারো পাহাড়ের পাদদেশে পূর্বে ও পশ্চিমে ইহার বিস্তার ছিল ৭০ মাইল। মুসলিম গ্রাম দশাল হইতে ১৯৩৭ সালের ডিসেম্বর মাসে এই আন্দোলন শুরু হয়। কয়েকটি পর্যায়ে এই আন্দোলন চলিয়া অবশেষে ১৯৫০ সালে জমিদারী দখল আইনের মাধ্যমে টংক প্রথা উচ্ছেদ হয় — আন্দোলনের হয় সমাপ্তি। এই সংগ্রামে ৬০ জন মেয়ে-পুরুষ হাজং, ডালু কৃষক শহীদ হন। বিচিত্র এই আন্দোলন, মহান তাহার আবেগ। সাম্রাজ্যবাদ আর সামন্তবাদ উচ্ছেদের দৃঢ়সংকল্প লইয়া কৃষক বধূ-মাতা-কন্যা ও সন্তানেরা সংগ্রামে আগাইয়া আসেন। এই আন্দোলনে যাঁহারা শহীদ হইয়াছেন তাঁহাদের অধিকাংশেরই কোনো টংক জমি ছিল না। দেশপ্রেমের এই অমর কাহিনী আজ দেশব্যাপী অনেকেরই অজানা। এই স্বল্প পরিসরে আমি রক্ত ও অশ্রুর সেই কাহিনী আলোচনা করিব না।


সাফল্য ও ব্যর্থতা —


১৯৪৬ সালে আবার পুনরায় টংক আন্দোলনের সঙ্গে সঙ্গে ময়মনসিংহ জেলার নেত্রকোণার সিংহের বাংলা গ্রামে, নেত্রকোণার রামেশ্বরপুরে, কিশোরগঞ্জে চাতল ও টংক এলাকার মধ্যে হালুয়াঘাটের এক অংশে কৃষক সমিতি ও কমিউনিস্ট পার্টির মিলিত নেতৃত্বে তেভাগা আন্দোলন শুরু হয়। রামেশ্বরপুরে জোতদার যেমন হিন্দু ও মুসলমান, তবে মুসলমানরাই ছিলেন সংখ্যায় বেশি। এখানে আন্দোলনের জোরে আমরা একটি আপস সিদ্ধান্তে আসিয়া পৌঁছিতে পারি – তাহা হইতেছে মালিক পাইবে সাত আনা, ভাগচাষী পাইবে নয় আনা। থলুয়াঘাট যেহেতু টংক এলাকার মধ্যে এবং আমাদের সংগঠন ছিল শক্তিশালী, তাই সাংগঠনিক শক্তির প্রভাবে ছয় আনা মালিক এবং দশ আনা ভাগচাষী এই সমঝওতায় পৌঁছাইতে কোনো বেগ পাইতে হয় নাই। দেশ ভাগাভাগির পর জোতদারেরা সব চুক্তি বাতিল করিয়া দিলেন। কারণ প্রকৃতপক্ষে জোতদাররা হইলেন স্বাধীন, আর দুঃস্থ চাষীরা হইলেন পরাধীন। কমিউনিস্ট পার্টি ও কৃষক সমিতির উপর নির্যাতন অচিরে নামিয়া আসিল – নেতারা সব আত্মগোপনে চলিয়া গেলেন। ফলে কোনো প্রতিকার করা সম্ভব হইল না। তেভাগা আন্দোলন আরম্ভ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ময়মনসিংহ জেলার লীগ নেতারা প্রমাদ গুণিলেন। কমিউনিস্টরা এমন এক আওয়াজ তুলিয়াছে যাতে হ্যাঁ করিলেও বিপদ না করিলেও বিপদ। অনেক মাথা খাটাইয়া মরহুম গিয়াসুদ্দিন পাঠান এই সময়ে চাতলে উদয় হইলেন। গিয়াসুদ্দিন পাঠান চাতলে একটি সভা ডাকিলেন। তাঁহার বক্তৃতার মর্ম হইতেছে, শুনেন মিয়ারা – আমরা কিছুদিনের মধ্যেই পাকিস্তান আনিতেছি। পাকিস্তান কী? মুসলমানের সেই বাদশাহী জমানা। তখন তেভাগাতো তুচছ, আপনারা চৌভাগা পাইবেন। কয়েকটা কমিউনিস্টের কথার ফাঁদে পড়িয়া জেলখাটার বন্দোবস্ত হইয়াছে, ছাড়েন ইহাদের পাল্লা। আইন মোতাবেক চলেন ললিত বাগচীর ধান ললির বাগচীর বাড়ি দিয়া আসেন। প্রতিক্রিয়াশীল লীগ নেতার কথা অসচেতন মুসলিম ভাগচাষীদের মধ্যে যাদুর ন্যায় কাজ করিল। ভাগচাষীদের বাড়িতে জমা করা ধান ভাগচাষীরা মাথায় করিয়া ললিত বাগচীর বাড়িতে পৌঁছাইয়া দিল। তেভাগা আন্দোলন চাতলে হইল ব্যর্থ। আমরা ভাগচাষী মুসলমান কৃষকদের শ্রেণী সচেতন করিয়া তুলিতে পারি নাই। ফলে আমাদের আন্দোলন অঙ্কুরেই বিনষ্ট হইয়া গেল। নিস্ব ভাগচাষীর শ্রেণী সংগ্রামের সংঘাতে এই দুই পরস্পর বিরোধী সাম্প্রদায়িক নেতার অপূর্ব মিলন ইতিহাসে জ্বলন্ত স্বাক্ষর বহন করিয়া আছে। মুসলিম লীগের ভাঁওতা, শক্তির মদমত্ততা জনসাধারণের সংগ্রামের ধাক্কায় চূর্ণ-বিচূর্ণ হইয়া ধুলায় মিশিয়া গেছে।


সিংহের বাংলায় আমরা লাভ করিতে পারি নাই সত্য, কিন্তু একটি ক্ষুদ্র ঘটনা আমাদের মনে আজও জ্বলজ্বল করিয়া ভাসিতেছে। এখানে মালিকরা ছিলেন হিন্দু তালুকদার আর ভাগচাষীরা ছিলেন হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের কৃষক। কিন্তু মুসলমান ভাগচাষীরা সংখ্যায় ছিলেন বেশি। এই ভাগচাষীরা ছিলেন খুবই গরীব। অন্যান্য সব জায়গার মত এখানে সশস্ত্র পুলিশ আমদানি করা হইয়াছে। গ্রামের মধ্যে টহল দিয়া ভাগচাষীর মনে ভীতির সঞ্চার করিয়াছে। জেল-জুলুমের ভয় দেখাইয়াছে। পুলিশ টহল দিয়া গ্রামে উথাল-পাথাল করিয়াছে। শুধু তাই নয়, ভলান্টিয়ারদের মারপিটও করিয়াছে। নিত্যানন্দ নামে আমাদের এক কর্মীকে পুলিশ বেদম প্রহার করে। নিত্যানন্দ ছিল এই গ্রামের জনপ্রিয় কর্মী। নিত্যানন্দের প্রহারের সংবাদ শুনিয়া গ্রামবাসী বিক্ষুব্ধ হয়। কিন্তু কোনো প্রতিবাদ মিছিল বাহির করা সম্ভব হয় নাই কারণ এখানের সংগঠন ছিল দুর্বল। ভাগচাষী মুসলমানদের মেয়েরা গরিব হলেও পর্দানসীন। তাহারা হাজং রাজবংশী বা নমশুদ্র মেয়েদের মতো আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন না, পর্দার আড়ালে থাকেন। কাজেই ওদের মানসিক অবস্থা সম্পর্কে আমরা ছিলাম সম্পূর্ণ অজ্ঞ। নিত্যানন্দকে গরুপিটানোর জন্য ইহারাও বিক্ষুব্ধ হইয়া এমন কান্ড করিতে পারেন তাহা আমরা স্বপ্নেও কোনোদিন ভাবি নাই। এই সময় দুইজন সশস্ত্র পুলিশ খুব দাপাদাপি একটি গরীব কৃষকের বাড়ির এক গাছতলায় বসিয়া বিশ্রাম করিতেছিল। এমন সময় দুইটি মুসলমান যুবতী বধূ দুইটি দা হাতে রণমূর্তির বেশে বাড়ি হইতে বাহির হইয়া আসিল। তাহারা সামাজিক রীতিনীতি ভুলিয়া গেল, উচ্চৈস্বরে চিৎকার করিয়া নিজেদের ভাষায় বলিল – ওকে লানজীক রুচকা, আমাজেক নুতেকে মারছ কেন? এই দাও দিয়া তরারে জব করিয়া ফালবাম। যুবতীদ্বয়ের দা আর রণমূর্তি দেখিয়া পুলিস পুরূষদ্বয় যে যেদিকে পারিল রাইফেল দুইটি ফেলিয়া ভোঁ দৌড়ে পলাইয়া গেল। তাহাদের আর পাত্তা পাওয়া গেল না। যুবতী দুইটি হয়তো এই অবস্থার জন্য প্রস্তুত ছিল না, তাহারা হতভম্ব সইয়া সেখানে দাঁড়াইয়া রহিল। ঐ সময়ে ঐ অঞ্চলের মুন্সি সরকারের এক খয়ের খাঁ লোক ঐ রাস্তা দিয়া যাইতেছিল। সে সরকারী রাইফেল পড়িয়া থাকিতে দেখিয়া দুই কাঁধে দুই রাইফেল ঝুলাইয়া চার মাইল দূরে শহরের থানায় রাইফেল জমা দেওয়ার জন্য উপস্থিত হইল। মুন্সি ভাবিয়াছিল, সরকারের এত বড় একটা কাজ করিল, তাতে সে প্রশংসা তো পাইবেই, ইনামও পাইতে পারে। হায়! হিতে হইল বিপরীত, দারোগা মুন্সিকে উত্তমভাবে ধোলাই দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। উপকার হইল, তাহার বৃটিশ ভাগ্য চিরতরে টুটিয়া গেল।


ছিদ্রান্বেষীদের কুৎসার জবাবে —


আমাদের মূল কথা হইল যে অবিভক্ত বাংলায় ১৯৪৬-৪৭ সালে কমিউনিস্ট পার্টি ও কৃষক সভা যে তেভাগা সংগ্রাম পরিচালনা করিয়াছিল সে সংগ্রাম যুগ যুগ পশ্চাৎপদ ও শোষিত কৃষকদের, এমন কি কৃষক নারীদের মধ্যে এক নতুন জীবনের সঞ্চার করিয়াছিল।


কিন্তু বাংলাদেশে এমন লোকও আছেন যাঁহারা কমিউনিস্ট পার্টির ঐ অবদান স্বীকার করার চাইতে পার্টির ত্রুটি খুঁজিতেই ব্যস্ত। উদাহরণস্বরুপ, জনাব বদরুদ্দিন ওমরের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বাংলাদেশের কৃষক বইটির কয়েকটি মন্তব্যের উল্লেখ করা যায়।


তেভাগা সংগ্রামের কথা বলিতে গিয়া বদরুদ্দিন ওমর সাহেব লিখিয়াছেন, কৃষক সভা কর্তৃক অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক আহ্বান দেওয়া সত্ত্বেও তেভাগা আন্দোলনকে সত্যিকার সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী গণ আন্দোলনের পথে চালনা করা তাঁদের দ্বারা সম্ভব হয়নি। এরফলে অনেক সময় বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা যায় যে কৃষকরা যেখানে সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত, সেখানে মধ্য শ্রেণী থেকে অনেক নেতা ও কর্মী কৃষকদের সংগ্রামের পথ থেকে সুকৌশলে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় নিযুক্ত থেকেছেন।


এঁদের মধ্যে অনেকে সে সময় তেভাগা আন্দোলনের বিরুদ্ধে বক্তব্য উপস্থিত করতে গিয়ে বলেন যে কৃষকরা অবিপ্লবী শ্রেণী, শ্রমিকরা হল আসল বিপ্লবী। কাজেই কৃষক আন্দোলনের পরিবর্তে পার্টির উচিত শ্রমিক আন্দোলনেই সর্বশক্তি নিয়োগ করা। (ঐ পুস্তক পৃঃ ১২২-২৩)।


ইহাই হইল তেভাগা সংগ্রামে কৃষক সভার নেতৃত্ব সম্পর্কে ওমর সাহেবের সমালোচনা। কিন্তু ওমর সাহেবের এই সমালোচনার মূলেই ভুল। তেভাগা সংগ্রাম ছিল সামন্তবাদী শোষণ ব্যবস্থার সংস্কারের সংগ্রাম। কমিউনিস্ট পার্টি ও কৃষক সভা সে দৃষ্টি নিয়াই সে সংগ্রাম পরিচালনা করিয়াছিল। কমিউনিস্ট পার্টি ও কৃষক সভার নেতৃত্ব সে সংগ্রামে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী বিপ্লব বা ক্ষমতা দখলের সংগ্রামের পথে চালনা করার চিন্তাও হইত বাতুলতা মাত্র। তাই কমিউনিস্ট পার্টি ও কৃষক সভা সে পাগলামির পথে যায় নাই। তাহারা সঠিক ভাবেই সংগ্রামকে সামন্তবাদ-বিরোধী সংগ্রাম রূপেই পরিচালিত করিয়াছিল।


কিন্তু ওমর সাহেব তেভাগা সংগ্রামের মূল দাবি, তদানিন্তন রাজনৈতিক পরিস্থিতি, প্রভৃত বাস্তব অবস্থার বিচার না করিয়াই কৃষক সভা তেভাগা সংগ্রামকে সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী গণ আন্দোলনের পথে চালনা করিতে ব্যর্থ হইয়াছে বলিয়া সমালোচনা করিয়া তাঁহার বিজ্ঞতার পরিচয় দিতে চাহিয়াছেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ইহাতে তেভাগা সংগ্রাম সম্পর্কে তাঁহার অজ্ঞতাই প্রমাণ পাইয়াছে।


ইহা ছাড়া মধ্য শ্রেণী হইতে অনেক নেতা ও কর্মী সুকৌশলে কৃষকদের সংগ্রামের পথ হইতে সরাইয়া নেওয়ার চেষ্টা করিয়াছে, প্রভৃতি যেসব মন্তব্য ওমর সাহেব করিয়াছেন সেগুলি হইল উদ্ভট, মনগড়া কথা ও কুৎসা। তেভাগা সংগ্রামের নেতা ও কর্মীরা ছিলেন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক, নিষ্ঠাবান ও ত্যাগী কর্মী ও নেতা। তাঁহারা ব্যক্তিগত স্বার্থ তুচ্ছ করিয়া কৃষকদের সাথে থাকিয়া সংগ্রাম করিয়া গিয়াছেন ও বহু নির্যাতন ভোগ করিয়াছেন। এই সব দেশপ্রেমিকের বিরুদ্ধে ওমর সাহেবের ওইসব কুৎসা তাঁহার অন্ধ কমিউনিস্ট বিদ্বেষের পরিচায়ক।


তেভাগা সংগ্রাম যে সফল হ্য় নাই তার কারণ অন্যত্র। তখন দেশ ভাগাভাগি আসন্ন হইয়া উঠিয়াছিল। সেই পটভূমিতে সারা দেশে ব্যাপক সাম্প্রদায়িক বিভেদ বিরাজ করিতেছিল। উপরন্তু কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ এই উভয় দলই ছিল তেভাগা সংগ্রামের ঘোরতর বিরোধী। তাই সমগ্র রাজনৈতিক অবস্থাটাই ছিল প্রতিকূল। এই অবস্থা মুসলিম লীগ সরকার অমানুষিক অত্যাচার করিয়া তেভাগা সংগ্রামকে সাময়িকভাবে হইলেও দমাইয়া দিতে সমর্থ হইয়াছিল।


কিন্তু তেভাগার ন্যায়সংগত দাবিকে মুসলিম লীগ সরকার উপেক্ষা করিতে পারে নাই। তেভাগা সংগ্রামের ফলে বেঙ্গল বর্গাদার বিল আনা হয়। এই বিল কলিকাতা গেজেটে ১৯৪৭ সালের ২২ জানুয়ারি প্রকাশিত হয়। বর্গাদার বিলের মর্মবস্তু ছিলঃ বর্গাদার উচ্ছেদ করা চলিবে না। বর্গাদাররা দুই ভাগ পাইবে এবং মালিক পাইবে এক ভাগ। এই বর্গাদার বিল প্রকাশ হইবার পর পূর্ববঙ্গের জোতদার শ্রেণী মারমুখ হইয়া তখনকার বাংলা দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপর এমন চাপ সৃষ্টি করেন যে ঐ বর্গাদার বিল আইন পরিষদে আর কোনোদিন উঠিল না। বর্গাদার বিল আইন পরিষদে উঠিলে মন্ত্রিত্বের পতন হইত অনিবার্য। কাজেই মরহুম সোহরাওয়ার্দি সাহেব আইন পরিষদে ঐ বিল আর উত্থাপন করেন নাই। আঁতুড় ঘরেই ঐ বিলের মৃত্যু হয়। জোতদার শ্রেণী অতীতের মতন এখনো প্রগতিশীল ভূমি সংস্কারের প্রধান অন্তরায়। এরূপ বাধা ও দ্বন্দ্ব অতিক্রম করিয়া প্রগতি তাহার পথ করিয়া নিবেই।

_______________________________________________
*লেখক তেভাগা আন্দোলন এবং বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতা।
(পুস্তক সাহায্য : গ্রামবাংলার পথে পথে – সত্যেন সেন/ Agrarian in Bengal (1946-47) Sunil Sen। পুনর্মূদ্রণঃ তেভাগা সংগ্রাম রজত জয়ন্তী স্মারকগ্রন্থ সৌজন্য প্রাপ্ত)
‘নানারঙে’ পত্রিকায় প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়।

Leave a comment