– লিখেছেন সুশান্ত কর
।। সিলেটি উপভাষা এবং বরাক উপত্যকার ভয় ।।
বাংলার উপভাষা সিলেটি নিয়ে অসমের বাঙালি যত না চর্চা করেছে বিদগ্ধ অসমিয়া পন্ডিতেরা তার চেয়ে বেশি আলোচনা করেছেন। সেপ্টেম্বর ২০১০-এ প্রকাশিত ‘বাঙ্গালনামা’র দ্বিতীয় বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যাতে প্রকাশিত ‘প্রসঙ্গ সিলেটি ভাষা’ লেখাতে সঞ্জীব দেব লস্কর লিখেছেন, “ইতিমধ্যে সিলেট মদনমোহন কলেজের প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ প্রণব সিংহ, বরাক উপত্যকার জন্মজিৎ রায়, আবুল হোসেন মজুমদার, উষারঞ্জন ভট্টাচার্য কিছু কাজ করেছেন, একটি সম্পূর্ণ অভিধান, বলা চলে কোষগ্রন্থই রচনা করেছেন জগন্নাথ চক্রবর্তী, আর আবিদরাজা মজুমদারের আরেকটি অভিধানও প্রকাশের পথে। বর্তমান লেখকের এ দিকে মোটেই কোনো বিশেষ পাঠ বা অনুধ্যানই নেই।” সঞ্জীব যাদের নাম করেছেন তাদের মধ্যে প্রণব সিংহের সঙ্গে বর্তমান লেখকের পরিচয় নেই। বাকিরা প্রত্যেকেই গবেষক-অধ্যাপক তথা শিক্ষক এবং বহু গ্রন্থের লেখক বটে। উষা রঞ্জন অনুবাদ সাহিত্যে সাহিত্য একাদেমি পুরস্কারও পেয়েছেন এবং বর্তমান লেখকের শিক্ষক। কিন্তু সম্ভবত কেউই পূর্ণকালীন ভাষা গবেষক নন। কেবল মাত্র সম্প্রতি প্রকাশিত জগন্নাত চক্রবর্তীর অভিধান দেখায় গুণগত ভাবে প্রয়াসগুলো যাই হোক না কেন, পরিমাণগত দিক থেকে তাঁর ভাষা অধ্যয়ন বেশ সুগভীর এবং আন্তরিক। যদিও তিনি ‘বরাক বাংলা’ বলতে ঠিক কোনটিকে বোঝাতে চেয়েছেন সেই প্রশ্নটি অস্পষ্ট থেকেই গেছে। সঞ্জীব বরাক উপত্যকার বিদগ্ধ লেখক । তাঁর কথাতে নির্ভর করতে পারি ।
সঞ্জীব সঙ্গতকারণেই “…এ সময়ের কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে” অভিযোগ জানিয়ে লিখেছেন, “… এ উপভাষাকে একটা ভাষার স্খলন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতেও প্রয়াসী।” তিনি বেশ উৎসাহ ভরে লিখেছেন ,”… এখন শিল্প সংস্কৃতির রাজধানী কলিকাতায় জিন্স পরা ইলেকট্রনিক যন্ত্র হাতে নাগরিক ব্যান্ডের শিল্পীরা (দোহারঃ লেখক) দুনিয়ার যত বাঙাল কবির পদ গেয়ে আসর জমিয়ে রাখছে। সিলেটি হাসন রাজাকে তো কবিগুরু অনেক আগেই জগৎ সভায় প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছেন। …আমাদের ভাষাপৃথিবীর এই যে বিস্তৃতির সূচনা, এটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে বিভিন্ন ঔপভাষিক অঞ্চলের বাঙালিদের সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন।” কিন্তু এর পরেই লিখলেন, “এ অবস্থায় বরাক উপত্যকার বাঙালিরা সিলেটি ভাষা, অর্থাৎ উপভাষা নিয়ে অতি উৎসাহী হলে, এদের ভাষিক অস্তিত্বকে অস্বীকার করতে সদা সচেষ্ট এক শ্রেণির অসমিয়া নেতৃত্ব একটা বিশেষ মওকা পেয়ে যেতে পারেন।” এই শেষোক্ত মন্তব্য একটি ধোঁয়াসা তৈরি করে । এটি বরাক উপত্যকার বিদ্যায়তনিক মহলে একটি প্রতিষ্ঠিত অভিমত। এক গড়ে তোলা চিহ্ন বিশেষ। এই ভয়ের স্পষ্ট কারণ হলো সিলেটি আর অসমিয়ার মধ্যেকার মিলগুলো খুবই চোখে পড়বার মতো । তাতে করে সুনীতি চট্টপাধ্যায়ের ছাত্র বাণীকান্ত কাকতি বাদে প্রায় সমস্ত অসমিয়া ভাষাতাত্বিক সিলেটিকে অসমিয়া বলে চালিয়ে দেবার চেষ্টা করেন। এই তালিকাতে শেষতম সংযোজন ড০ উপেন রাভা হাকাচাম ।