বা ঙা ল না মা

নিষিদ্ধ নামের সন্ধানে – ২

Posted by bangalnama on October 22, 2008


(প্রথম কিস্তি এখানে পড়ুন..)

অনুবাদক সরোজ দত্ত

কবিতা অনুবাদ করার ক্ষেত্রেও সরোজ দত্ত কোনো এক্সপেরিমেন্টেশনের মধ্যে যাননি। সহজ-সরল ভাবে করেছেন গোটা কাজটা। প্রয়োজনের ভাষাকে গ্রহণ করেছেন অনুবাদের শরীর-নির্মাণের জন্যে। ভাষার অ্যরাবেস্ক তৈরি না করেও যে কবিতাকে মনগ্রাহী করে তোলা যায়, তার প্রমাণ ছড়িয়ে আছে তাঁর করা অনুবাদগুলোর মধ্যে। আগেই বলেছি, সরোজ দত্ত বিষয়ের দিকে নজর দিয়েছেন অনেক বেশি তাঁর কন্টেন্ট নিয়েই কারবার। অন্যদের মত আঙ্গিক নিয়ে অতটা ভাবেননি। নিজের সৃষ্টির রসে মজে যাবার চেয়ে পলিটিকাল কমিটমেন্টকে দেখেছেন অনেক বড় করে। অনুবাদ করার জন্যেও তাই বেছে নিয়েছিলেন মায়াকভস্কি, পরভেজ শাহিদি, ইকবাল, ভাসপারভ, চেন ঈ প্রমুখদের। তাঁর প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল কম্যুনিকেট করা এবং তিনি তা করেছেন সাফল্যের সাথে। এরমধ্যে যেটা শিক্ষণীয়, তা হল, উনি কোনভাবেই কবিতার নান্দনিক মূল্যকে ছোট করেননি; আবার নান্দনিক নির্মাণের স্বার্থে বিষয়বস্তুকেও জলাঞ্জলি দেননি। সমতা বজায় রেখেছেন কন্টেন্টকে প্রাধান্য দিয়ে। কখনো কখনো কবিতার টাইম অ্যান্ড স্পেস ভেঙ্গেছেন, কিন্তু তা বিষয়বস্তুর সাথে সঙ্গতি রেখেই আরো ভালভাবে বললে, বিষয়বস্তুকে আরো গভীরভাবে অনুভব করার জন্যে। গদ্য অনুবাদের ক্ষেত্রেও এই একই দৃষ্টিভঙ্গীর প্রকাশ দেখতে পাওয়া যায়।

চোদ্দ-পনেরো বছর বয়স থেকে বাড়ির হাতে-লেখা পত্রিকা মঞ্জরীতে কবিতা লেখা শুরু করেন সরোজ দত্ত। ওই পত্রিকার সম্পাদকও ছিলেন তিনিই। মৌলিক কবিতা লেখায় অনেকটা সময় অতিবাহিত করার পর তিনি শুরু করেন কবিতা অনুবাদ করা। পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি পর্যায়ে তিনি প্রায় চব্বিশটি কবিতা অনুবাদ করেন। সেই সময়ে সরোজ দত্ত ছিলেন বাংলার কম্যুনিস্ট পার্টির মুখপত্র দৈনিক স্বাধীনতার সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য এবং নিউজ এডিটর। স্বাধীনতা পত্রিকাতেই মূলতঃ এইসব অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। আজও কম্যুনিস্ট ভেটেরানদের মুখে মুখে ঘোরে সরোজ দত্তর করা ভাসপারভ বা পাবলো নেরুদা বা প্যাট্রিক লুয়াম্বা বা মাও-সে-তুঙের কবিতার অনুবাদ। সারাজীবন ধরে সরোজ দত্ত সেইসব কবিতাই লিখেছেন, বা অনুবাদ করেছেন, যা সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্খার দলিল। তাঁর সাহিত্যিক জীবন এবং রাজনৈতিক স্বত্তা একটাই বিন্দুতে এসে মিলেছে – যার নাম বিপ্লব!

অনুবাদ কবিতায় সরোজ দত্ত খুব একটা ছন্দের ব্যবহার করেননি। তাঁর যে গুটিকয়েক লেখা ছন্দবদ্ধ, তার মধ্যে মায়াকভস্কির ‘Our March(1917)’ কবিতা সর্বাধিক গুরুত্ত্বপূর্ণ। গোটা কবিতাটাই অনুদিত হয়েছে ছয়মাত্রার কলাবৃত্ত ছন্দে। রাজীব চৌধুরি এই কবিতার নির্মাণ সম্পর্কে বলেছেন …ছয়মাত্রার দুটো করে পূর্ণপর্ব এবং দুইমাত্রার একটা করে অতিপর্ব নিয়ে এই (কবিতার) গঠন। এরমধ্যে কিছু কিছু পংক্তি আবার দলবৃত্ত রীতি অনুযায়ী মাত্রাবিভাজনেও অসংগতিপূর্ণ নয়। সুতরাং মাত্রাবৃত্ত বা কলাবৃত্তে অনুদিত কবিতার রন্ধ্রে রন্ধ্রে রয়েছে দলবৃত্তের পদসঞ্চার। এই কবিতার ভাষান্তরের সময় কবি নজর দিয়েছেন অর্থের ব্যঞ্জনায়। দুটো কবিতা পাশাপাশি রেখে পড়লে ব্যাপারটা অনেকখানি পরিষ্কার হবে। মায়াকভস্কির কবিতার ইংরাজি অনুবাদের সঙ্গে আমরা প্রায় সকলেই পরিচিত, তাই নীচে শুধু সরোজ দত্তর করা বঙ্গানুবাদটাই (অক্টোবর ১৯১৭) দিলাম

কাঁপে রাজপথ বিদ্রোহী পদভারে

চরণে দলিত দম্ভের চূড়া যত-

আমরা চলেছি উদ্দাম জলধারা

মহাপ্রলয়ের মহাঝঞ্ঝার মত।

অশ্বের মত ছুটে চলে দিনগুলি

বছরবিলীন বিষাদ-আঁধার মাঝে-

গতির দেবতা চাবুকে চালায় রথ,

আমাদের বুক দামামার মত বাজে।

কার পতাকায় আছে এত গাঢ় লাল?

কে পারে বিঁধিতে বুলেটে মোদের প্রাণ?

নেই আমাদের রাইফেল নেই সোনা;

কিবা এসে যায়? কন্ঠে রয়েছে গান।

সবুজ আগুনে প্রান্তর জ্বলে ওঠে,

ফেটে পড়ে দিন আলোর আঘাত লেগে-

রামধনু, তুমি বাঁকাও তোমার ধনু

তুরঙ্গদল উধাও ঝড়ের বেগে।

লক্ষ তারায় বিক্ষত নভপট,

কিবা আসে যায়? কে থামায় এই গান?

জানি একদিন এ আকাশ নেব জিনে

নরজীবনেই স্বর্গে জিনিব স্থান।

গাও গান গাও পান করো প্রাণভরে।

রক্তে নাচুক বহ্নি চমৎকার-

তুমুল ছন্দে স্পন্দিত হোক বুক

কঠিন বর্মে উঠুক ঝনাৎকার।

অনুবাদ সাহিত্যে মুন্সীয়ানা কার কতটা, সেটা খুব ভালভাবে না হলেও অল্পবিস্তর ঠিক করা যায় একই কবিতার দুই বা তিনটি অনুবাদের তুলনামূলক আলোচনার মধ্যে দিয়ে। এইক্ষেত্রে একটা কমপ্যারেটিভ স্টাডি, স্বল্পাকারে হলেও, করা যেতে পারে সরোজ দত্ত এবং বিষ্ণু দের মধ্যে। এঁরা দুজনেই মোটামুটিভাবে কন্টেম্পোরারি এবং কবি-অনুবাদক হিসাবে সাহিত্যমহলে শ্রদ্ধেয়।

ধরা যাক মাও-এর ‘The Swimming’ কবিতাটি। ইংরাজি অনুবাদের শুরু থেকে শেষঅব্দি লক্ষ করলে দেখা যাবে যে বিষ্ণু দে তাঁর অনুবাদের অ্যাস্থেটিক ভ্যাল্যু নিয়ে এতটাই চিন্তিত হয়ে পড়েছেন, যে ক্রমশঃ জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠেছেন। অপরপ্রান্তে সরোজ দত্ত কবিতার কাব্যগুণকে বজায় রেখেছেন, কিন্তু কোনভাবেই মূল বক্তব্যকে দুর্বধ্য করে তোলেননি। একটা ছোট উদাহরণ দিলেই ব্যাপারটা স্পষ্ট হবে। কবিতার একেবারে শেষে আছে

The mountain goddess if she is still there

Will marvel at a world so changed.

বিষ্ণু দের অনুবাদ অনুযায়ী

দেবী তো সুখেই থাকেন ওইখানে,

তবে কিনা এই দুনিয়া বদলে অবাক মূর্তিবৎ।

সরোজ দত্তর উপস্থাপনা অনেক সোজাসাপটা

আর যদি এখনো সেখানে থেকে থাকেন

পাহাড়ের দেবী

তাহলে চমকে উঠবেন তিনি

এ কি! এত পাল্টে গেছে তাঁর দুনিয়া!

আঙ্গিকগত দিক থেকে বিষ্ণু দের লেখা অনেক বেশি সমৃদ্ধ। গোটা কবিতাটা তাই উনি ছয়মাত্রার কলাবৃত্ত ছন্দে অনুবাদ করেছেন। শব্দের ব্যবহার চূড়ান্তভাবে নান্দনিক। একথাও বললে অত্যুক্তি হয় না, যে ফর্মের দিক থেকে বিষ্ণু দে সরোজ দত্তর থেকে সহস্র যোজন এগিয়ে। কিন্তু তাঁর বঙ্গানুবাদের সাথে যদি ইংরাজি অনুবাদ মেলানো হয়, তাহলে দেখা যাবে তা নিতান্তই একটি অক্ষম ট্রান্সলেশন। কবিতার মূল বিষয়বস্তুকে বিষ্ণু দে অনুবাদে প্রকাশ করতে ব্যার্থ হয়েছেন। গোটা কবিতা পড়লে এও দেখা যাবে যে তিনি মূল কবিতার ক্রিয়াপদেরও পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। অনুবাদকের এই স্বাধীনতা থাক্তেই পারে, কিন্তু প্রশ্ন হল, কন্টেন্ট আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে না তো? খেদের সাথে বলতে হয়, হচ্ছে! বিষ্ণু দের অনুবাদ গ্রীক নাটকের মত ধ্রুপদী, কিন্তু তাতে মূল কবিতার নাট্যগুণ এবং বিষয়গুণ উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মূল কবিতার আঙ্গিক থেকে সরে গিয়েও-তারমধ্যে নিজস্ব বৈশিষ্ঠ্য বজায় রেখেও তাই সরোজ দত্ত উজ্জ্বল হয়ে উঠেছেন। তিনি মাও-এর মত প্রাচীন চিনা কবিতার স্বরভঙ্গী (শুই তিয়াও তাও) কে অনুসরণ করেননি, কিন্তু কোনভাবে তা ক্ষুণ্নও করেননি। বাঙালি পাঠকের কাছে মাও-এর কবিতার নির্ভুল কম্যুনিকেশন একমাত্র ঘটেছে তাঁর হাত দিয়েই। সেই অনুবাদের শব্দ নিতান্তই সাধারণ, কিন্তু কন্সট্রাকশন হিসাবে দেখলে তা অসামান্য ডাইনামিক।

জটিল ফর্মালিস্ট ট্রীটমেন্ট কিভাবে কন্টেন্টকে গ্রাস করে এবং তার সাথে কবিতাকে সাধারণের মাঝখান থেকে দূরে ঠেলে দেয়, তার আরো উদাহরণ দেওয়া যায় এই একই কবিতা থেকে। ইংরাজি অনুবাদে আছে

It was by a stream that the master said-

Thus do things flow away!

বিষ্ণু দে অনুবাদ করেছেন

কে যেন নদীর পারানি কহিল কিবা,

পারানি জনের অমনি ওরে ধরণ।

সরোজ দত্ত লিখেছেন

এই নদী দেখেই তো একদিন ঋষি বলেছিল,

এ যেন সারা প্রকৃতি বয়ে চলেছে!

উপরিযুক্ত কনফ্যুসিয়ান মিথের অনুবাদ করতে গিয়ে বিষ্ণু দে অকারণ জটিলতার সৃষ্টি করেছেন বিকৃ্ত করেছেন কবিতার সারবস্তুকে। শব্দের খেলায় মেতে উঠেছেন তিনি, কিন্তু মূলের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারেননি। অন্যদিকে সরোজ দত্তর অনুবাদ অনেক সহজবোধ্য, সাবলীল, স্পষ্ট এবং একই সাথে শৈল্পিক। আরো একটা ব্যাপার লক্ষ করার মত ইংরাজি অনু্বাদে আছে, “It was by a stream that the master said…”। সরোজ দত্ত অনুবাদ করেছেন, এই নদী দেখেই তো একদিন ঋষি বলেছিল…। লক্ষ করলে দেখা যাবে, উনি ঋষির সাথে বলেছিল শব্দটি ব্যবহার করেছেন বলেছিলেন নয়। কারণটা আদৌ সাধারণ নয়। এই শব্দ ব্যবহারের মূলে রয়েছে তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শ। চীনা কম্যুনিস্টরা বরাবর কনফ্যুসিয়সকে একজন দুর্বৃত্ত হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। সংশোধনবাদীদের অভিযুক্ত করেছেন আধুনিক কনফ্যুসিয়স বলে। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে, একটি ভ্রাতৃপ্রতিম কম্যুনিস্ট পার্টির কর্মী সরোজ দত্ত কোনভাবেই সেই এলিটিস্ট ভাববাদী দার্শনিককে আপনি-আজ্ঞে সম্বোধন করতে পারেননি।বলেছিলেন শব্দ ব্যবহার করলে হয়তো কবিতার পংক্তিটা পড়তে বা শুনতে অনেক ভাল লাগত, কিন্তু কম্প্রোমাইজ করেননি সরোজ দত্ত। আসলে, একজন কম্যুনিস্ট কখনো পলিটিক্সকে বাদ দিয়ে প্রোটোকল নিয়ে ব্যাস্ত থাকেন না। তিনিই বা এর বিপরীতে যান কি করে!

সরোজ দত্তর মতবাদিক আবেগের স্পর্শ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে তাঁর অনুবাদগুলোর মধ্যে। কবিতার মূল বজায় রেখে কিভাবে অনুবাদকে একইসাথে বৈপ্লবিক এবং নান্দনিক মাত্রা দেওয়া যায়, তা বার্টল্ট ব্রেখটের ‘Questions from a Worker Who Reads’ কবিতার অনুবাদটা পড়লেই বোঝা যাবে। মূল কবিতার (ইংরাজি অনুবাদ) একেবারে শুরুতে ব্রেখট লিখেছেন

Who built Thebes of the seven gates?

সরোজ দত্তর অনুবাদটা হয়েছে একটু অন্যরকম

কারা গড়েছিল থেবেস নগরীর সাত-সাতটি প্রবেশদ্বার?

কবিতার মূল অর্থের দিক থেকে জোরটা দেওয়া উচিত নগর নির্মাণের উপরে, কখনই প্রবেশদ্বারের উপর নয়। প্রশ্ন জাগে, সরোজ দত্তর মত একজন চৌখশ ট্রান্সলেটর কি করে এমন একটা ভুল করলেন? এটা কি তাড়াহুড়োতে ঘটে যাওয়া কোন প্রমাদ না ইচ্ছাকৃত ভুল? নগরীর প্রবেশদ্বার বা সিংহদরজা একটা বিশেষ শ্রেণী বা ক্লাসকে রিপ্রেজেন্ট করে। সেই শ্রেণীভুক্তরা উৎপাদনের উপকরণের মালিকানা নিজেদের আওতায় রাখে, ফলতঃ উৎপাদক শ্রেণী তার উৎপন্ন বস্তুর উপর কোনো কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। উৎপাদকের রক্তে-ঘামে অপ্রেসররা ফুলে ফেঁপে ওঠে। বৃহৎ মানুষদের নির্মাণের পেছনের কারিগররা হলেন সেই নামহীন অসংখ্য মানুষ, যারা সমাজে সর্বাধিক দিয়েও সামাজিকভাবে পরিত্যক্ত। প্রবেশদ্বারের উপর জোর আরোপ করে সরোজ দত্ত সম্ভবত শ্রেণীবিভক্ত সমাজে যুগ যুগ ধরে চলে আসা প্রোডিউসার-কনজিউমার সম্পর্কের anti-egalitarian রূপটাই ধরতে চেয়েছেন।

কবিতার এক জায়গায় ‘great Rome’ শব্দের অনুবাদ করতে গিয়ে যখন শঙ্খ ঘোষ বা বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মত প্রথিতযশা কবিরা মোহনীয় রোম বা সার্বভৌম রোম ব্যবহার করেছেন, তখন সরোজ দত্ত লিখেছেন সাম্রাজ্যিক রোম!! একটা শব্দের মধ্যে দিয়ে রোমান সাম্রাজ্যের সামগ্রিক রাষ্ট্রচরিত্র ব্যাখ্যা করে দেওয়ার ব্যাপারটা ব্যক্তিমতাদর্শের নির্দিষ্ট প্রকাশ। এই একই কবিতার শেষ স্তবকের আগের স্তবকে আছে

Every page a victory.

Who cooked the fest for the victors?

Every ten years a great man.

Who paid the bill;

এই অংশের অনুবাদে সরোজ দত্তর বলিষ্ঠতা কলমের সাথে সাথে বৈপ্লবিক আবেগের মাত্রা সপ্তম অক্টেভ স্পর্শ করেছে

ইতিহাসের পাতায় বিজয়কাহিনী,

কিন্তু বিজয়োৎসবের খরচ জুগিয়েছে কারা?

প্রতি দশ বছর অন্তর একজন মহাপুরুষের আবির্ভাব,

কিন্তু কাদের গাঁটের শেষ কানাকড়ি টেনে নিয়ে

তৈরি হয়েছিল, সেই মহা আবির্ভাবের পথ?

সরোজ দত্তর মৌলিক কবিতার মত, তাঁর অনুবাদও রেভল্যুশনারি স্পিরিটে ভরপুর। বেছে বেছে সেইসব কবিতাই ট্রান্সলেট করেছেন যার সামাজিক-রাজনৈতিক মূল্য আছে আছে নতুন মানুষের মূল্যবোধ গঠন করার চাবিকাঠি। টেকনিকাল দিক থেকে বিচার করলে দেখা যাবে, কিছু বিচ্যুতি সত্তেও (যা পৃথিবীর সব অনু্বাদকর্মেই বর্তমান), সরোজ দত্ত একজন কবিতা অনুবাদক হিসাবে বাংলা সাহিত্যে একটা বিশেষ আসনের দাবিদার। তিনি হয়তো বিশাল কিছু আলাদা নন অন্যান্য সেরা অনুবাদককদের থেকে, তিনি হয়তো স্রোতেরই একটা অংশমাত্র কিন্তু তবু সেই বিরল প্রজাতির কবি-অনুবাদক, যাঁর কলমে আন্তর্জাতিক সাহিত্য হয়ে উঠেছে বাংলার ঘরের সম্পদ।

কবিতা অনুবাদের ক্ষেত্রে আরো খানিকটা গভীরে ঢুকলে মন্দ হত না, কিন্তু বেশি লেখার অবকাশ নেই, কারণ শীঘ্রই আমাদের প্রবেশ করতে হবে গদ্য অনুবাদের জগতে এবং সেখান থেকে একলাফে পৌঁছে যেতে হবে তাঁর প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক কার্যকলাপের প্রাঙ্গণে। আজকে সরোজ দত্ত কে যত না কবি হিসাবে মনে রাখা হয়েছে, তারচেয়ে ঢের বেশি মানুষ তাঁকে মনে রেখেছেন একজন বিপ্লবী হিসাবে, সিপিআই(এম এল)-এর পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য কমিটির সম্পাদক হিসাবে, একজন শহীদ হিসাবে।

(ক্রমশঃ…)

রচনা বাসু আচার্য্য

[বাংলা হরফে প্রতিলিখন প্রিয়াঙ্কা রায়]

6 Responses to “নিষিদ্ধ নামের সন্ধানে – ২”

  1. […] নিষিদ্ধ নামের সন্ধানে – ২ […]

  2. andromeda said

    Series jome gyachhe. jaake bole ‘jome kheer’ 🙂

    Saroj Dutta r jeeban o kaajer opor chomotkar bohumatrik commentary aste aste dana bnadhchhe! Kudos to Basu. porer kistir apekkhay roilam. 🙂

  3. akash said

    priyo jara tader amra debota banabo etai mone hoye swabhabik. kintu ,probondhyo tar protipadyo jodi hoye ,Saroj Dutta r onubad khomotar bichar -tobe bolte hoye se bichar aro koyekjoner proti obichar korei kora hoyeche .

    ami lekhatar sesh line tar sathe sompurno ek mot ,tar cheye boro maper kobi hoyeto aro oneke chilen .kintu sob miliye puro jibon ta emon kobita ar kojoner hoye utheche ?(khub cliched sonale ami nachar )
    tobe ar lekha ta aro ektu bichar-soho hole bhalo lagto .tobuo ,onake niye lekha chapanor jonnye lal selam .

  4. akash said

    ei phanke Saroj Dutta ke niye ekta sotti golpo likhe rakhi. ei sotti golpo ta jini amaye bolechilen, tini 68-69 theke rajniti korten,ekhono koren.

    tokhon chari dike murti bhanga r andolon cholche,ar onarao Netaji r ekta murti bhenge phelechen,tokhono obdhi Subhash Bose er murti keu bhangeni,Party o er phole somalochonar mukhe porche,orao confused je kajta thik korlen ki na .

    e prosongye bole rakha bhalo ,party kintu murti bhangar andolon suru koreni ,eta chilo ekdom sotosfurto andolon ,sombhoboto China y red guard der karjo kolap eder utsahito korechilo,party sudhu ghotona ta suru hobar por setake sompurno somorthon janiyechilo,jar mul hota chilen Saroj babu.

    ta ei confusion obosthay ora oder confusion er kotha ek meeting e Saroj babu ke bollen-tokhon saroj babu-i party r pokkho theke chatra der sathe jogajog maintain korten ,tate Saroj Babu naki onader samurai er talwar er golpo bolen.

    sei talwar naki emon sukkho hoto je karur gola borabor chole geleo matha ta dhor theke alada hoto na ,uni sei golpo ta bole oder bolen je apnara ( ei songbodhon ta lokkhoniyo )mundu to katiya i phelchen ,ebar sudhu toka debar pala .

    er por i deshabrati te beroy subhash bose ke niye or probondho.ei chilen Saroj Dutta ,biplab er spirit ke .jubak der lorai ke party r samoyik labh khoti diye jini bichar korten na …

    (ekhane eto boro post kora uchit holo kina jani na ,tobe golpo ta mone pore gelo ,tai likhe phellam ,ar Saroj Dutta r udhdhriti teo mone hoye khanik bhul holo nijo gune maf kore deben )

  5. basu said

    sd er muri bhanga niye lekha thakbe 4th kisti te. takhon bola jabe na hoy 🙂
    jaihok bhari sundar golpo, ebong ghatana ta thik, karan ei galpata amio sunechhi.. 🙂
    tobe saroj dutta ke bujhte gele samay ta aar bharater communist andoler pechhoner diker itihaash ta jana darkar, nahole konotai daraye na. bhowani sen to saroj dutta — ekta tana line tana jaye. jaihok, sei sob likhbo chaturtha kisti te.. 🙂

  6. basu said

    anubad khomotar khetre kothao saroj dytta ke “alada” kore dekhano hoy ni, just boal hoyechhe je anubad er khetre tini mul sroter madhye thekeo srteni chetona ke gurutta diyechhen, ebong simple and positive communication ke agradhikar diyechhen. eta amder baki ‘formalist’ kobira korte poaren ni, even samar sen moshai-o na. ashole moja ta holo, SAROJ DUTTA ELITISM NAMOK NAPUNGSHAKATAR DHAR DHAARTEN NA!:)

Leave a comment