বা ঙা ল না মা

সৈয়দ মুজতবা আলী’র লেখা নিয়ে – স্মৃতির কথা-সিন্দুক থেকে

Posted by bangalnama on May 4, 2009


চার বছর বয়সে ছবি ছাড়িয়ে বইয়ের অক্ষরগুলোর সাথে যে টান তৈরী হয়ে গিয়েছিল বাবার আর নিজের উৎসাহ মিলে, তার মধ্যে অনেক লেখকেরই লেখা পাকাপাকি জায়গা করে নিয়েছে হৃদয়ে।


সাত-আট বছর বয়স যখন, তখন বাবার কাছেই শোনা এক জার্মান মেয়ের কথা – সে আমারই সমবয়সী হবে প্রায় (কিন্তু আমার বয়স তো থেমে নেই; গল্পে তার বয়স আমার জন্মের আগেও যা ছিল বইয়ের পাতায় এখনো তাই-ই রয়েছে!), নাম মারিয়ানা। ওই বয়সেই তার বিশেষণ কিনা – ‘হান্টারওয়ালী’! আরো শুনেছিলাম – এক ভিনদেশী ‘ভবঘুরে’র সাথে তার কথাবার্তা, তারপর মারিয়ানার মা-বাবার কথা, ঠাকুরমা-ঠাকুরদার কথা, মারিয়ানার আদরের অ্যালসেসিয়ান কার্ল-এর কথা।


তখন একইসাথে যেসব লেখা পড়ছি, তার তুলনায় এই গল্পগুলো একেবারেই অন্যরকম লাগত। সে গল্পের সব কথাই যে বুঝতাম তা নয়, তবে ধীরে ধীরে মন ভরে যেতে লাগল ওই লেখায়। বইয়ের নামই – ‘ভবঘুরে’, লেখক – সৈয়দ মুজতবা আলী।

3281579089_661caf1731


এত মুগ্ধতা সত্ত্বেও বারো বছর বয়সে পা দেবার আগে মুজতবা’র আর কোনো বই পড়বার ব্যাপারে বিশেষ উৎসাহ জাগেনি। তারপরে কোনো এক গ্রীষ্মের ছুটিতে পড়বার মত কোনো বই পাওয়া যায় কিনা দেখতে গিয়ে পুরোনো বইয়ের আলমারীতে আবিষ্কার করলাম সৈয়দ মুজতবা আলী’র – এক নয়, দুই নয়, এগারোটি খণ্ড (যা আমার শৈশবের রঙ-পেনসিল-স্কেচপেনের অত্যাচার থেকে বাঁচাবার জন্য কিছুটা আড়ালেই রাখা ছিল)!


সেই সময় ছোটোগল্প, কি প্রবন্ধ’র চাইতে উপন্যাসই বেশী পড়তে চাইতাম বলে শুরু করেছিলাম ‘দেশে-বিদেশে’ দিয়েই।


প্রথম প্যারাগ্রাফ পড়লেই মনে হতে পারে বাঙলার সাথে প্রচুর বিদেশী শব্দের সহাবস্থান যাতে, সেই লেখাকে ঠিক কিভাবে নেওয়া যেতে পারে? কিন্তু এখানেই থমকাবেন না; একটি পাতা পুরো পড়ে তারপর মতামত জানান। মতামত জানাবার বদলে যদি বলেন – “দাঁড়াও, আগে পুরো বইটা পড়ি।” তবে তো কথাই নেই; আপনি দ্বিতীয় খণ্ডে চলে যেতে চাইবেন প্রথম খণ্ড শেষ করামাত্রই।


কিছুদূর এগোলেই বোঝা যায় মুজতবা’র লেখায় বাঙলার কালচার ও সাহিত্যের সাথে মিশে গিয়েছে ইউরোপীয় নানা দেশের কালচার এবং সাহিত্য, আর তাতে উপযুক্ত অনুপাতে যোগ হয়েছে অভারতীয় প্রাচ্যদেশীয় বিষয়ও।


‘দেশে বিদেশে’তেই লেখক শুরু করেছেন এক অনিচ্ছুক দূরদেশযাত্রীর সুর নিয়ে, কিন্তু তাই বলে কেবল নীরস বর্ণনা দিয়ে যাননি। পাঠান, পঞ্জাবী, শিখ-দের আকৃতি-প্রকৃতি, কথাবার্তা নিয়ে মুজতবা’র অবজার্ভেশন তাঁর অনবদ্য কলমে ভারী সুখপাঠ্য হয়ে উঠেছে। বাসের ড্রাইভার সর্দারজী’র দাড়ি দেখে তাঁর মনে পড়ে তেয়োফিল গতিয়ের-এর এক উপন্যাসের কথা, যেখানে ফরাসীদেশে দাড়ি কামাবার প্রচলন শুরু হওয়ায় এক মহিলার আক্ষেপ মুজতবা’র ভাষায় শুনুন – “চুম্বনের আনন্দ ফরাসীদেশ থেকে লোপ পেল। শ্মশ্রুঘর্ষণের ভিতর দিয়ে প্রেমিকের দুর্বার পৌরুষের যে আনন্দঘন আস্বাদন পেতুম ফরাসী স্ত্রীজাতি তার থেকে চিরতরে বঞ্চিত হল। এখন থেকে ক্লীবের রাজত্ব। কল্পনা করতেও ঘেন্নায় সর্বাঙ্গ রী রী করে ওঠে।”


এক বই থেকেই আরো অনেক কথা উল্লেখ করা যায়; আহমদ আলী, মুহম্মদ জান, রমজান খান – এদের সঙ্গে লেখকের বাক্যালাপ যেমন একটি উদাহরণ। তাতে আড্ডার টান সুস্পষ্ট। সেইসব কথায় চলে আসে রাজনীতি, ইংরেজ। রয়েছে পেশওয়ার থেকে খাইবার পাস-যাত্রার বর্ণনা; সেখান থেকে জালালাবাদ হয়ে কাবুল পৌঁছনো ও পথে বাস-ড্রাইভার সর্দারজী এবং আফগান সরকারী বেতার-বিভাগের এক কর্মচারী’র সঙ্গে নানান গল্প চলে, যার মধ্যে রয়েছে এক হতভাগ্য নিরপরাধ কয়েদী’র মর্মস্পর্শী কাহিনী আর তার সেই উক্তি – “মা খু চিহল ও পঞ্জম হস্তম” তা যে পড়েছে সে-ই শুধু বুঝবে!


আর উদ্ধৃতি তুলে দিচ্ছি না এই লেখা থেকে – প্রবল ইচ্ছে হলেও। এরপরেই এসেছে একটি দেশের শাসনব্যবস্থা গড়ে উঠবার পরিপ্রেক্ষিত এবং সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, যার নাম আফগানিস্তান।


কাবুল-এ বিভিন্ন দেশের এমব্যাসী আর অ্যামবাসাডর-দের সাথে হরেক রকম আলোচনাও রীতিমত উপাদেয়। কখনো গানের আসরে এক ওস্তাদের সেতারের সাথে গান শুনে মন্ত্রমুগ্ধ লেখক, মীর আসলম, দোস্ত মুহম্মদ … আবার কখনো ফরাসী এমব্যাসী-তে বগদানফ, লাফোঁ, ভ্যাঁসাঁ, পোলিশ মহিলা মাদাম ভরভচিয়েভিচি, ইতালীয় সিন্নোরা দিগাদো, দোস্ত মুহম্মদ-এদের সঙ্গে লেখকের তর্ক-বিতর্কে ভরপুর মজলিশ।


আর শেষে উল্লেখ করতেই হয় কাবুলের রাজ-পরিবারের নানা টানাপোড়েন-এর কথা এবং লেখকের পরিচারক আবদুর রহমান-এর কথা। দ্বিতীয় খন্ডের শেষে যখন আবদুর রহমানের লেখক-কে নিজের গ্রাম পানশির-এ নিয়ে যাবার ইচ্ছে অপূর্ণ-ই থেকে যায়, তখন গলার কাছটা একটু দলা পাকিয়ে ওঠে যেন।

*********


‘চাচা কাহিনী’ মুজতবা’র আরেকটি অসাধারণ সৃষ্টি। এখানেও আঁকা হয়েছে সাধারণ মানুষের ছবি – তার আবেগ, জীবন-যন্ত্রণা, ভালবাসা, দ্বিধা, বিশ্বাস, তিক্ততা – সবকিছু মিলে-মিশে একরকমের ন্যাচারাল কোলাজ তৈরী হয়েছে ‘হিন্দুস্তান হাউস’-এ চাচা’র আড্ডায়। এই বইয়ের অধিকাংশ লেখাই চাচা’র বয়ানে, আর বাকি কয়েকটি লেখকের নিজের বর্ণনায়। সমালোচক-দের মতে চাচা’র ‘আমি’ দিয়ে বলা গল্পগুলো তুলনামূলকভাবে উৎকৃষ্টমানের; সে তর্কে না গিয়ে একথা বলা যেতেই পারে যে গল্পগুলিতে প্রত্যেকটি চরিত্র এত স্বাভাবিক ও সুন্দরভাবে অঙ্কিত হয়েছে যে বইটি শেষ করার পরেও তারা মনের কোণায় মৌরসীপাট্টা গেড়ে বসেছে!


স্বয়ং চাচা এবং তার শ্রোতৃমণ্ডলী অর্থাৎ – পুলিন সরকার, শ্রীধর মুখুজ্যে, সূর্য রায়, মদনমোহন গোস্বামী (গোঁসাই), গোলাম মৌলা এবং গল্পগুলিতে – হিম্মৎ সিং, ক্লারা ফন ব্রাখেল (যার সেই আদরের গালি: “ডু ক্লাইনার ইডিয়ট!”), কর্নেল ডুটেনহফার (হের ওবের্স্ট), সিবিলা, য়ুডাস টাডেয়াস-এর তীর্থের বৃত্তান্ত ও গ্রেটে’র করুণ কাহিনী, এক জার্মান পরিবারের সাথে চাচা’র সম্পর্ক ও সেই পরিবারের বড় ছেলে অস্কারের তুমুল খামখেয়ালীপনা পাঠকের কল্পনায় বিচিত্র এক অনুভূতি’র সৃষ্টি করে।

*********


বিভিন্ন সংবাদপত্র ও পত্রিকায় নানারকমের চলতি ঘটনা ও বিষয় নিয়ে যেরকম টীপ্পনী ও সরস-তীর্যক মন্তব্যপূর্ণ কলাম লেখা হয়; মুজতবা আলী’র ‘পঞ্চতন্ত্র’, ‘ময়ূরকন্ঠী’, ‘সত্যপীরের কলমে’, ‘চতুরঙ্গ’, ‘ধূপছায়া’, ‘বড়বাবু’, ‘রাজা উজীর’, ‘টুনি মেম’, ‘কত না অশ্রুজল’ – এই প্রকারেরই কিছু উল্লেখযোগ্য রচনা – যেগুলির মধ্যে দিয়ে তাঁর ভাষাজ্ঞান, রসবোধ ও স্বচ্ছ মানসিকতার প্রতিফলন ঘটেছে।


একজন পাঠক হিসেবে এই বইগুলির মধ্যে আমার সবথেকে প্রিয় ‘কত না অশ্রুজল’। প্রথমদিকের কিছু লেখা পড়ে মনে হয়েছিল, ছোট-বড় সব যুদ্ধেই যাদের জীবনে সবথেকে বেশী দুর্যোগ ডেকে আনে, তারা কোনো নামজাদা রাজনৈতিক নেতা নয় – নিতান্তই সাধারণ মানুষ। পত্রলেখকদের প্রত্যেকেই জানে তাদের মৃত্যু আসন্ন – তারই মধ্যে কেউ আশাবাদী, কেউ বিরহী বিষণ্ণ প্রেমিক, কেউ মৃত্যুর আর বিলম্ব নেই জেনেও কিশোরবয়সের স্বাভাবিক ডোন্ট-কেয়ার ধরণে তখনো ইয়ারকি দিতে উদ্যত। এক-একটা চিঠি পড়লে একইসাথে চোখে জল এবং মুখে হাসি এনে দেয়।


ভ্রমণকাহিনীসুলভ রচনা ‘জলে-ডাঙায়’ – বইতে পল ও পার্সী, আবুল আসফিয়া এবং অন্যান্য যাত্রীদের সাথে লেখকের জাহাজে ভ্রমণ আর প্রতিটি পর্বে ঘটনা’র পর ঘটনা, রকমারি চরিত্র, যাত্রাপথে নানারকম নিয়ম-কানুন (ভাষান্তরে রুলস অ্যান্ড প্রোটোকলস!) তাদের সব প্রকারের একসেনট্রিসিটি নিয়েই বর্ণিত হয়েছে।


হেলথ-সার্টিফিকেটের বিকল্পে ফর্ম ভরতে গিয়ে তাতে লেখা প্রশ্নাবলী পড়ে পাঠকবৃন্দের বিভিন্ন ফর্মের উত্তর লেখাকালীন ফ্রাস্ট্রেশন-এর কথা মনে পড়ে গিয়ে হাসি পাবার সম্ভাবনা যথেষ্টই।

*********


তিনটি স্বতন্ত্র উপন্যাসে মুজতবা’র লেখনীতে বেজেছে প্রবন্ধ, যাত্রাপথের বিবরণ, আর্টিকল – ইত্যাদির চাইতে বেশ অন্যরকম একটা সুর। ‘শবনম’, ‘তুলনাহীনা’ ও ‘শহর-ইয়ার’ – এই তিন উপন্যাসেই মূল চরিত্র নারী এবং নারীত্বের ডিফারেন্ট ম্যানিফেস্টেশন।


উপন্যাসত্রয় যাদেরকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সেই তিনজন নারী যথাক্রমে – শবনম, শিপ্রা রায় এবং শহর-ইয়ার … এরা স্বাধীনচেতা, ব্যক্তিত্বময়ী, শিক্ষিতা – এক অর্থে ইন্টেলেকচুয়াল-ও বটে। একই সঙ্গে তারা প্রেমকে পরিপূর্ণভাবে অনুভব করতে, প্রকাশ করতে এবং নিজের আদর্শ পালনের পথে প্রেমকে বাধা হিসেবে না দেখে তাকেও আপন মোটিভেশনেরই অংশ করে নিতে পারার মত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্নও।


শবনমে’র শেষ কথাগুলি, তার অনুরোধ; সামাজিক ও রাজনৈতিক দর্পণে শিপ্রার অভিজ্ঞতার প্রতিফলনে যে উপলব্ধি শিপ্রা, তার প্রেমিক কীর্তি এবং পাঠকদেরও হয়; শহর-ইয়ারে’র মধ্য দিয়ে এক নারীর আপাতদৃষ্টিতে সব থেকেও তার একাকীত্ব, আদর্শজনিত মানসিক দ্বন্দ্ব – তার থেকেই জন্ম নেয় শহর-ইয়ারে’র যে পরস্পরবিরোধী ভাবমূর্তি – প্রতিটি ক্ষেত্রেই লেখককে অভিভূত করে দেয়। তাঁর কলমে সেই বিস্ময়ের সুর যেন বারে বারেই উদ্ধৃত রবীন্দ্রনাথের গান-কবিতা’র সুরের সঙ্গে সমস্বরে বেজে উঠেছে।

*********


যদিও এই অধমের এসব ব্যাপারে জ্ঞান নিতান্তই কম; তবু মনে হয় মুজতবা’র লেখা পড়ে এই ইম্প্রেশন জন্মাতে বাধ্য যে তাঁর লেখা থেকে এক অনুরাগী, কিন্তু তা-সত্ত্বেও সমালোচক ভক্ত-ছাত্রের চোখ দিয়ে রবীন্দ্রনাথকে চেনা থেকে শুরু করে ধর্মসাহিত্যের তুলনামূলক আলোচনা, সেই সাথে ইতিহাসের দৃষ্টিকোণ থেকে বিভিন্ন পলিটিক্যাল ইস্যু, ন্যাশনাল ও ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারেস্ট-এর মধ্যে সম্পর্ক-দ্বন্দ্ব-সমীকরণ, হিউম্যান রিলেশনস-এর গতি-প্রকৃতি – এর প্রতিটিই সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলিতে উৎসাহী ব্যক্তিদের, গবেষণাকারীদের এবং নবীন পাঠকমন্ডলীর কাছে এখনো একইরকম গুরুত্ব পাবার যোগ্য।


কিছু জায়গায়, বিশেষ করে উদাহরণস্বরূপ ব্রিটেন-আফগানিস্তানের ও আমেরিকা-ইরাকের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্কের বর্ণনা পড়ে হঠাৎই ধাক্কা লাগে – এ যেন ‘history repeats itself’ – আপ্তবাক্যটিকেই সজোরে সমর্থন করছে!


অন্যান্য কিছু লেখা এই আলোচনার বাইরে থেকে গেল – ‘অবিশ্বাস্য’, ‘প্রেম’-এর মত উপন্যাস এবং ‘পরিবর্তনে অপরিবর্তনীয়’, ‘বিদেশে’, ‘বাঙলাদেশ’, ‘উভয় বাঙলা’-র মত কিছু নিবন্ধ-সংকলন।


তাই বলে এই লেখাগুলো মোটেও হেলা-ফেলা করবার মত লেখা নয়!


খুবই ভালো লাগবে যদি এই লেখা পড়ে মুজতবা’র সাথে তেমন পরিচিত নন, সেরকম পাঠকরাও উৎসাহিত হন তাঁর লেখা আরো বিশদভাবে পড়তে।

*********

sayeed-mujtaba-ali1

''আমার ছবি তুলতে গিযে তাদের তিনখানা লেনস্ বার্সট করলো, আমার শ্যাটারিং সৌন্দর্য সইতে না পেরে। ... ফোটো হোলো না। অইল পেন্টিং-ওলা বলেন, কালো হলেও চলতো তা সে মিশই হোক না। কিন্তু এ যে বাবা খাজা রঙ। কালো কালির উপর পিলা মসনে। তার উপর কলাইয়ের ডালের পিছলে পড়া, না-সবুজ, না-নীল না-কিছু। আমার প্যালেট লাটে।'' - সৈয়দ মুজতবা আলী

লেখক মুজতবা’র পাশাপাশি এখানে ব্যক্তি মুজতবাকে নিয়ে বিশেষ আলোচনা করা হয়নি এখনো। তাঁর অগ্রজ সৈয়দ মুর্তাজা আলী’র কথানুসারে তৎকালীন শিলহট্ট বা সিলেট জেলা’র অন্তর্ভুক্ত (পরে যা আসামে’র কাছার জেলা’র অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।) করিমগঞ্জে সৈয়দ সিকান্দার আলী ও আমতুন মন্নান খাতুন-এর কনিষ্ঠ পুত্র সৈয়দ মুজতবা আলী’র জন্ম।


ছাত্রজীবনে অসহযোগ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সিলেটের অশান্ত রাজনৈতিক পরিবেশ থেকে মুজতবা ঘটনাক্রমে পড়তে আসেন শান্তিনিকেতনে; যেখানে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতিতে মুজতবা’র স্নাতক-স্তরের পড়াশুনা আরম্ভ হয়। তারপরে আলীগড়ে সাময়িকভাবে পড়াশুনা, কাবুল-যাত্রা, কাবুল থেকে দেশে ফিরে তারপর জার্মানী গিয়ে পড়াশুনা করে বন ইউনিভার্সিটি থেকে ‘The origin of the Khojas and their religious life to-day’ – বিষয়ে গবেষণা করে পি.এইচ.ডি. ডিগ্রীলাভ। ১৯৩২ খ্রীষ্টাব্দে মুজতবা জার্মানী থেকে দেশে ফিরে আসেন। (প্রসঙ্গতঃ ১৯৩৯ খ্রীষ্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ অফিসিয়ালি শুরু হয়, তার ঠিক আগে জার্মানী’র টালমাটাল পরিস্থিতির আভাস কিছুটা হলেও মুজতবা’র লেখায় মেলে।)


এরপর ইউরোপ-কায়রো-গুজরাত-কলকাতা – নানা জায়গায় তাঁর শিক্ষাজীবন ও কর্মজীবন কেটেছে, কোনো এক মুসাফিরের মতই ভ্রাম্যমান জীবন যেন। দেশভাগের পরে বাঙলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তান) অধ্যাপনাকালীন কিছু লেখার জন্য তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিরাগভাজন হন; যেসমস্ত কারণে তিনি সেখান থেকে চলে এসে ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন ১৯৪৯ খ্রীষ্টাব্দে। ভারতেও পাটনা, দিল্লী, শান্তিনিকেতন – বিভিন্ন স্থানেই তাঁর বাকি কর্মজীবন অতিবাহিত হয়। ১৯৭১-এ বর্তমান বাঙলাদেশ-এর সৃষ্টি হলে তিনি ফিরে যান এবং সেখানেই ১৯৭২-এ তাঁর মৃত্যু হয়।


*এই লেখাটি লিখতে মুজতবা আলী রচনাবলী’র সহায়তা নেওয়া হয়েছে প্রভূত পরিমাণে।


১ম খণ্ড – পঞ্চতন্ত্র-১ম পর্ব, ময়ূরকন্ঠী, দ্বন্দ্বমধুর
২য় খণ্ড – ধূপছায়া, পঞ্চতন্ত্র-২য় পর্ব, চতুরঙ্গ
৩য় খণ্ড – টুনি মেম, রাজা উজীর
৪র্থ খণ্ড – বড়বাবু, কত না অশ্রুজল, হিটলার
৫ম খণ্ড – অবিশ্বাস্য, শবনম, প্রেম, দু-হারা
৬ষ্ঠ খণ্ড – তুলনাহীনা, শহর-ইয়ার
৭ম খণ্ড – জলে-ডাঙায়, ভবঘুরে ও অন্যান্য, মুসাফির
৮ম খণ্ড – পরিবর্তনে অপরিবর্তনীয়, বিদেশে, বাঙলাদেশ, উভয় বাঙলা
৯ম খণ্ড – দেশে-বিদেশে-১ম খণ্ড, চাচা কাহিনী-১ম খণ্ড, সত্যপীরের কলমে, বিবিধ
১০ম খণ্ড – দেশে-বিদেশে-২য় খণ্ড, চাচা কাহিনী-২য় খণ্ড, পূর্ব-পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা, অপ্রকাশিত রচনা, দিনলিপি ও পত্রাবলী
১১শ খণ্ড – বিচিত্রা, ভাষা সংস্কৃতি সাহিত্য, রায় পিথৌরার কলমে, অপ্রকাশিত পত্রাবলী।


লিখেছেন – মানালি রায় (ঝিঙ্কা)

2 Responses to “সৈয়দ মুজতবা আলী’র লেখা নিয়ে – স্মৃতির কথা-সিন্দুক থেকে”

  1. Rezwan said

    অনেক ধন্যবাদ লেখাটির জন্যে। এককালে মুজতবা আলী রচনা সমগ্রের অধিকাংশ পড়েছিলাম। আশায় আছি সেগুলো আবার হাতে পাবার। এবার আরও তাড়িয়ে পড়ব। আপনার লেখার মাধ্যমে স্মৃতি রোমন্থন হলো বেশ।

  2. ARATRIKA said

    MANALI …..seiously hats off 🙂 khub anondo peyechhi lekhata pore .

Leave a comment