বা ঙা ল না মা

Archive for the ‘হাস্যরস’ Category

অন্নদাশঙ্করের ছড়া ঃ জব্দিবে কে শব্দীকে?

Posted by bangalnama on December 22, 2010


– লিখেছেন অরণ্য লাহিড়ী

“তেলের শিশি ভাঙল বলে
খুকুর ‘পরে রাগ করো
তোমরা যে সব বুড়ো খোকা
ভারত ভেঙ্গে ভাগ করো!
তার বেলা?”


অন্নদাশঙ্কর রায় এই ছড়াটা লেখেন ১৯৪৭ সালে। ছড়াটিকে প্রায় প্রফেটিক বলা চলে, কারণ এটা লেখার পরেই দেশভাগ হয়। লোকমুখে প্রচলিত হতে হতে এটি পরে প্রবাদতুল্য হয়ে ওঠে। সলিল চৌধুরীর সুরে গানও হয়। এই তো সেদিন ক্যালকাটা ইয়ুথ কয়েরের গোল্ডেন জুবিলী(২০০৯)তে, কয়েরের ছোটরা গেয়ে শোনালো। অন্নদাশঙ্করের নিজের যদিও ছড়াগান সম্বন্ধে কিছু বিরুপতা ছিল। ‘হিতে বিপরীতও হতে পারে’- এই ছিলো তাঁর সাবধান বাণী, সুরের যদি বেশী জটিলতা বা কারিকুরি থাকে তবে সুরের ভারে ছড়া হারিয়ে যেতে পারে।


তাঁর ‘সেতুবন্ধন’ (১৯৯৪) প্রবন্ধে দেশভাগ নিয়ে অন্নদাশঙ্কর লিখেছেনঃ–
“ভারতভাগ আমার কাছে অপ্রত্যাশিত ছিলো না। কিন্তু বাংলাভাগ ছিলো আমার কাছে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত। ঘটনাটা একবার ঘটে যাওয়ার পর তাকে মেনে নেওয়া ছাড়া অন্য গতি ছিল না। বুদ্ধি দিয়ে মেনে নিলে কী হবে, অন্তর দিয়ে মেনে নিতে পারি নি। হৃদয়ে যে বেদনা ছিলো, সে বেদনা এখনও রয়েছে।”


এই বেদনা থেকে উৎসারিত হয়েছে বাংলা শিল্প-সংস্কৃতির ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য অনেক উপন্যাস, গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, গান, নাটক ও ফিল্ম। কিন্তু চারটি অব্যর্থ লাইনে এমন অনবদ্যভাবে দেশভাগের অযৌক্তিকতাকে মনের ভেতরে গেঁথে দিতে আর কিছু পেরেছে কি? ‘বুড়ো খোকা’ ও ‘ধেড়ে খোকা’দের এই ‘ভাঙ্গাভাঙ্গির হরির লুট’কে এরকম চমতকার একটা অল্টারনেটিভ পার্স্পেক্টিভে যে দেখা যায়, আর দেখলে যে দেশভাগের তথাকথিত রাজনৈতিক অনিবার্যতার তত্ত্ব খন্ডন করতে যে কোন পন্ডিতী কচকচির দরকার পড়ে না, তা ছোট বড় সব পাঠকের কাছেই অতি সহজে বোধগম্য হয়ে ওঠে। শুধু তাই না, পুরো ছড়াটার সহজ সরল শব্দগুলোর মধ্যে এমন একটা দুলকি চাল ও অন্ত্যমিল যে মনের মধ্যে তা স্থায়ী ছাপ ফেলে যায়, কিছুতেই ভোলা যায় না।

বাকি অংশটি এখানে পডু়ন…

Posted in কবিতা, দেশভাগ, সাহিত্য, হাস্যরস | 2 Comments »

সৈয়দ মুজতবা আলী’র লেখা নিয়ে – স্মৃতির কথা-সিন্দুক থেকে

Posted by bangalnama on May 4, 2009


চার বছর বয়সে ছবি ছাড়িয়ে বইয়ের অক্ষরগুলোর সাথে যে টান তৈরী হয়ে গিয়েছিল বাবার আর নিজের উৎসাহ মিলে, তার মধ্যে অনেক লেখকেরই লেখা পাকাপাকি জায়গা করে নিয়েছে হৃদয়ে।


সাত-আট বছর বয়স যখন, তখন বাবার কাছেই শোনা এক জার্মান মেয়ের কথা – সে আমারই সমবয়সী হবে প্রায় (কিন্তু আমার বয়স তো থেমে নেই; গল্পে তার বয়স আমার জন্মের আগেও যা ছিল বইয়ের পাতায় এখনো তাই-ই রয়েছে!), নাম মারিয়ানা। ওই বয়সেই তার বিশেষণ কিনা – ‘হান্টারওয়ালী’! আরো শুনেছিলাম – এক ভিনদেশী ‘ভবঘুরে’র সাথে তার কথাবার্তা, তারপর মারিয়ানার মা-বাবার কথা, ঠাকুরমা-ঠাকুরদার কথা, মারিয়ানার আদরের অ্যালসেসিয়ান কার্ল-এর কথা।


তখন একইসাথে যেসব লেখা পড়ছি, তার তুলনায় এই গল্পগুলো একেবারেই অন্যরকম লাগত। সে গল্পের সব কথাই যে বুঝতাম তা নয়, তবে ধীরে ধীরে মন ভরে যেতে লাগল ওই লেখায়। বইয়ের নামই – ‘ভবঘুরে’, লেখক – সৈয়দ মুজতবা আলী।

বাকি অংশটি এখানে পডু়ন…

Posted in ঔপন্যাসিক, পূর্ব পাকিস্তান, ফিরে দেখা, বই আলোচনা, বাঙাল, সাহিত্য, সিলেট, হাস্যরস, Reviews, Travelogue | Tagged: , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , | 2 Comments »

কুট্টি

Posted by bangalnama on January 21, 2009


“কুট্টি রেসে গিয়ে বেট্‌ করেছে এক অতি নিকৃষ্ট ঘোড়া। এসেছে সর্বশেষে। তার এক বন্ধু — আরেক কুট্টি — ঠাট্টা করে বললে, ‘কি ঘোড়া (উচ্চারণ অবশ্য ‘গোরা’ — আমি বোঝবার সুবিধের জন্য সেগুলো বাদ দিয়েই লিখেছি) লাগাইলায় মিয়া!  আইলো সক্কলের পিছনে?’

কুট্টি দমবার পাত্র নয়। বললে, ‘কন্‌ কি কত্তা! দ্যাখলেন না, যেন বাঘের বাচ্চা — বেবাকগুলিরে খ্যাদাইয়া লইয়া গেল!’

কুট্টি সম্প্রদায়ের সঙ্গে পুব-পশ্চিম উভয় বাঙলার রসিকমন্ডলীই একদা পরিচিত ছিলেন। নবীনদের জানাই, এরা ঢাকা শহরের খানদানী গাড়োয়ান-গোষ্ঠী। মোগল সৈন্যবাহিনীর শেষ ঘোড়সওয়ার বা ক্যাভালরি। রিক্‌শার অভিসম্পাতে এরা অধুনা লুপ্তপ্রায়। বহুদেশ ভ্রমণ করার পর আমি নির্ভয়ে বলতে পারি, অশিক্ষিত জনের ভিতর এদের মত witty (হাজির-জবাব এবং সুরসিক বাক্‌-চতুর) নাগরিক আমি দিল্লী-হিল্লী কলোন-বুলোন কোথাও দেখিনি।

এই নিন একটি ছোট ঘটনা। প্রথম পশ্চিম বাঙলার ‘সংস্করণ’টি দিচ্ছি। এক পয়সার তেল কিনে এনে বুড়ি দেখে তাতে একটা মরা মাছি। দোকানীকে গিয়ে অনুযোগ জানাতে সে বললে, ‘এক পয়সার তেলে কি তুমি মরা হাতি আশা করেছিলে!’ এর রাশান সংস্করণটি আরো একটু কাঁচা। এক কপেকের (মাত্র এক পয়সা) রুটি কিনে ছিঁড়ে দেখে তাতে এক টুকরো ন্যাকড়া। দোকানীকে অনুযোগ করাতে সে বললে, ‘এক কপেকের রুটির ভিতর কি তুমি আস্ত একখানা হীরের টুকরো আশা করেছিলে?’ এর ইংরিজি ‘সংস্করণে’ আছে, এক ইংরেজ রমণী এক শিলিঙে এক জোড়া মোজা কিনে এনে বাড়িতে দেখেন তাতে একটি ল্যাডার নেই (অর্থাৎ মই — মোজার একটি টানা সূতো ছিঁড়ে গেলে পড়েনের সূতো একটার পর একটা যেন মইয়ের এক একটা ধাপ-কাঠির মত দেখায় বলে ওর নাম ল্যাডার)। দোকানীকে অনুযোগ জানাতে সে বললে, ‘এক শিলিঙের মোজাতে কি আপনি, ম্যাডাম, একখানা রাজকীয় মার্বেল স্টেয়ারকেস্‌ আশা করেছিলেন!’

এবারে সর্বশেষে শুনুন কুট্টি সংস্করণ। সে একখানা ঝুরঝুরে বাড়ি ভাড়া দিয়েছে পুলিশের এস.ই. -কে। বর্ষাকালে কুট্টিকে ডেকে নিয়ে তিনি দেখাচ্ছেন, এখানে জল ঝড়ছে, ওখানে জল পড়ছে, — জল জল সর্বত্র জল পড়ছে। পুলিশের লোক বলে কুট্টি সাহস করে কোনো মন্তব্য বা টিপ্পনি কাটতে পারছে না — যদিও প্রতি মুহূর্তেই মাথায় খেলছে বিস্তর। শেষটায় না থাকতে পেরে বেরবার সময় বললে, ‘ভাড়াতো দ্যান্‌ কুল্লে পাঁচটি টাকা। পানি পড়বে না, তো কি শরবৎ পড়বে?’

কুট্টি সম্বন্ধে আমি দীর্ঘতর আলোচনা অন্যত্র করেছি — পাঠক সেটি পড়ে দেখতে পারেন। আমার শোক-পরিতাপের অন্ত নেই যে, এ সম্প্রদায় প্রায় নিশ্চিহ্ন হতে চললো। আমি জানি এদের উইট্‌, এদের রিপার্টি লেখাতে ও ছাপাতে সঠিক প্রকাশ করা যায় না; কিন্তু তৎসত্ত্বেও এ-সম্প্রদায় সম্পূর্ণ লোপ পাওয়ার পূর্বে পুব বাঙলার কোনো দরদীজন যদি এদের গল্পগুলির একটি সংগ্রহ প্রকাশ করেন, তবে তিনি উভয় বাঙলার রসিকমন্ডলীর ধন্যবাদার্হ হবেন।”

খোশগল্প, সৈয়দ মুজতবা আলী

[প্রতিলিখন -দেবর্ষি]

Posted in ইতিহাস, ঢাকা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, সাহিত্য, হাস্যরস | Tagged: , , , , , | Leave a Comment »