বা ঙা ল না মা

বিমল চিত্র-কথা

Posted by bangalnama on December 31, 2009


“With his very first film Udayer Pathe (Hamrahi in Hindi), Bimal Roy was able to sweep aside the cobwebs of the old tradition and introduce a realism and subtlety that was wholly suited to the cinema. He was undoubtedly a pioneer. He reached his peak with a film that still reverberates in the minds of those who saw it when it was first made. I refer to Do Bigha Zamin, which remains one of the landmarks of Indian Cinema.” – Satyajit Ray.


বিমল রায় কতটা উঁচু দরের পরিচালক ছিলেন তার স্বীকৃতি পাওয়া যায় ভারতীয় চলচ্চিত্রের প্রথম পুরুষ সত্যজিৎ রায়ের এই উক্তি থেকে। ‘বিমলদা’র চলচ্চিত্র জীবন শুরু কলকাতায় ক্যামেরাম্যান হিসাবে এবং পরবর্তী তিরিশ বছর তিনি সঁপে দিয়েছিলেন ভারতীয় সিনেমায়।


সন ১৯০৯-এর ১২ই জুলাই অধুনা ঢাকার এক জমিদার বাড়িতে জন্ম হয় বিমল রায়ের। জগন্নাথ কলেজে পড়াকালীন বাবা মারা যান এবং তার পরপরই জমিদারির এস্টেট ম্যানেজারের সৌজন্যে তাঁরা সর্বস্বান্ত হন। মা ও ছোট ভাইকে নিয়ে বিমলদা চলে আসেন কলকাতায়। ক্যামেরার প্রতি অসম্ভব ঝোঁক ছিল ছোটবেলা থেকেই। সেই সুবাদেই প্রমথেশ বড়ুয়ার ছায়াছবির প্রচারের জন্য ছবি তোলার কাজ পান। এর কিছুদিনের মধ্যেই নীতিন বোস তাঁকে নিউ থিয়েটার্সে ডেকে নেন সহকারী ক্যামেরাম্যান হিসেবে। প্রথম বড় মাপের সাফল্যের স্বাদ ১৯৩৫-এ প্রমথেশ বড়ুয়ার ‘দেবদাস’-এর সিনেমাটোগ্রাফার ও সহকারী পরিচালক হিসেবে। ৩০-এর দশকের শুরুতে ব্রিটিশ সরকারের হয়ে দুটি তথ্যচিত্র তৈরী করেছিলেন তিনিঃ
‘How Kerosene Tins are made’ আর ‘Grand Trunk Road’; কিন্তু এই ছবি দুটি নিয়ে আজ আর বিশেষ কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। প্রমথেশ পড়ুয়ার সেই সময়ের ছবি ‘মুক্তি’, ‘মায়া’, ‘বড়ি দিদি’-তেও সিনেমাটোগ্রাফার ছিলেন বিমল রায়।


১৯৪৪ সালে নিউ থিয়েটার্সের বাংলা ছবি ‘উদয়ের পথে’ মুক্তি পায় বিমল রায়ের পরিচালনায়। শ্রেণী সংগ্রাম ভিত্তিক বলিষ্ঠ ছবি ‘উদয়ের পথে’ ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছিল সেই সময়ের চলচ্চিত্র সমালোচকদের কাছ থেকে। পরের বছর ছবিটির হিন্দী (‘হামরাহী’) নির্মাণ করেন তিনি।


চল্লিশের দশকের শেষে দেশভাগের পরে নিউ থিয়েটার্সের প্রতিপত্তি কমতে থাকে। অশোক কুমারের উদ্যোগে বিমল রায় বম্বে টকিজ়-এ যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পান। ১৯৫২ সালে মুক্তি পেল বম্বে টকিজ়-এর ছবি ‘মা’। লীলা চিটনিস, ভারত ভূষণ ও শ্যামা অভিনীত এই ছবির গল্প ছিল একেবারেই গতে বাঁধা মেলোড্রামা, কিন্তু ছবিটা উতরে গিয়েছিল বিমল রায়ের হাতের ছোঁয়ায়।


১৯৫৩ সালে বিমল রায় প্রডাকশনের স্থাপনা হয়। বিমলদা একসঙ্গে দু’টি ছবির কাজ শুরু করেনঃ শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পরিণীতা’ আর সলিল চৌধুরীর লেখা গল্প ‘রিক্সাওয়ালা’ অবলম্বনে ‘দো বিঘা জ়মীন’। ‘পরিণীতা’ ছিল বড় বাজেটের ছবি আর তার পাশে ‘দো বিঘা জ়মীন’ কম পয়সায় কাজ চালিয়ে নেওয়া। অথচ ‘পরিণীতা’ সেভাবে চলল না আর ‘দো বিঘা জ়মীন’ ভারতীয় সিনেমায় এক নতুন দিগন্ত খুলে দিল। বাণিজ্যিক এবং সমান্তরাল সিনেমার এক অভূতপূর্ব মেলবন্ধন সূচনা করল ভারতীয় সিনেমার new wave-এর। ‘দো বিঘা জ়মীন’-এ বিমল রায়ের নব্যবাস্তববাদী সত্ত্বার প্রথম সার্থক প্রতিফলন ঘটেছিল। মুখ্য ভূমিকায় বলরাজ সাহানি অসামান্য অভিনয় করেছিলেন। কিন্তু মজার কথা হল শম্ভু মাহাতোর চরিত্রে অভিনয়ের জন্য বিমল রায় প্রথমে ত্রিলোক কপূর, তারপর জয়রাজ এবং নাসির হুসেন-এর কথা ভেবেছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত কিছুটা গররাজি হয়েই বলরাজ সাহানিকে নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। ১৯৫৪ সালে
Cannes Film Festival-এ পুরস্কৃত হয় ‘দো বিঘা জ়মীন’। আন্তর্জাতিক খ্যাতি আসে চীন, ইংল্যান্ড, রাশিয়া, ইটালী থেকেও।


এর পরে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের গল্প নিয়ে করেন আরো দু’টি ছবিঃ ‘বিরাজ বহু’ (১৯৫৪) ও ‘দেবদাস’ (১৯৫৫)। এর মাঝে ১৯৫৪-এ আরো দু’টি ছবি পরিচালনা করেনঃ ‘বাপ বেটি’ এবং ‘নৌকরি’। এই সবক’টি ছবিতেই বিমলদা-র শিল্পীসত্ত্বার পূর্ণ পরিচয় থাকলেও বাণিজ্যিক ভাবে খুব একটা সফল হয়নি একটিও ছবি।


১৯৫৮-তে করলেন দু’টি ছবিঃ ‘মধুমতী’ আর ‘ইয়েহুদি’। বাণিজ্যিক ভাবে দু’টি ছবিই সুপারহিট। শোনা যায় বম্বে-তে বিমলদা-র সাফল্যে কিছুটা ঈর্ষাণ্বিত হয়ে পূর্বজন্ম নিয়ে একটি অতিসাধারণ গল্প তাঁকে দেন ঋত্বিক ঘটক। কিন্তু সেই সাধারণ গল্পই অসাধারণ হয়ে ওঠে বিমল রায়ের কুশলী হাতে, ‘মধুমতী’ ছবিতে। আজ পঞ্চাশ বছর পরেও ‘মধুমতী’র চিত্রগ্রহণ (দিলীপ গুপ্ত), সংগীত (সলিল চৌধুরী) এবং সম্পাদনা (হৃষিকেশ মুখার্জী) একইরকম চর্চিত। সেবারে ‘মধুমতী’ ৯টা ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলো (তখন ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হত ছবির গুণগত মান বিচার করে)।


বাণিজ্যিক সাফল্যের চূড়া থেকে নেমে এসে ১৯৫৯-এ বিমল রায় আরেকবার তাঁর নব্যবাস্তববাদী সত্ত্বার পরিচয় রাখলেন ‘সুজাতা’য়। ‘সুজাতা’ – সিনেমার মাধ্যমে আমাদের সমাজে প্রচলিত ‘জাতের নামে বজ্জাতি’র কুরূপ উন্মোচন করা এক সহানুভূতিশীল প্রতিবেদন।


এরপর বিমলদার শিল্পীসত্ত্বার এক নতুন দিকের পরিচয় পাওয়া যায় ‘পরখ’ (১৯৬০)-এ। অর্থলোভ নিয়ে এক অসাধারণ স্যাটায়ার তৈরী করেছিলেন তিনি, আজও যা ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক।


‘সুজাতা’ এবং ‘পরখ’ দিয়ে ফিল্মফেয়ার-এর সেরা পরিচালক-এর দ্বিতীয় হ্যাট্রিক করেন বিমল রায়। প্রথমটার শুরু ছিল ১৯৫৩ঃ ‘দো বিঘা জ়মীন’ (‘৫৩), ‘পরিণীতা’ (‘৫৪) আর ‘বিরাজ বহু’ (‘৫৫)।


১৯৬২-তে অগ্রগামী-র ছবি ‘সাগরিকা’ অবলম্বনে বিমলদা তৈরী করেন ‘প্রেম পত্র’। বাংলায় ‘সাগরিকা’ সুপারহিট হলেও ‘প্রেম পত্র’ খুব একটা চলেনি।


বিমল রায় পরিচালিত শেষ কাহিনীচিত্র ‘বন্দিনী’ (১৯৬৩)। জরাসন্ধ-র গল্প, নবেন্দু ঘোষের চিত্রনাট্য, নূতন-এর অসামান্য অভিনয়, শচীন কত্তা-র সংগীত – সব মিলে ‘বন্দিনী’-কে যে অনেক চিত্র সমালোচকই বিমল রায়ের শ্রেষ্ঠ ছবি বলে থাকেন সেটা খুব একটা অসঙ্গত নয়। ‘বন্দিনী’-তেই বিমলদার মধ্যে সব থেকে বেশী করে আবিষ্কার করা যায় কুইন্টেসেনশিয়াল নব্যবাস্তববাদী পরিচালক ভিত্তোরিও দে সিকা-র ছায়া।


বিমল রায় প্রোডাকশনের পরের ছবি ‘বেনজ়ীর’ (১৯৬৪), যার পরিচালক ছিলেন এস. খলিল। এর আগে এবং পরে বিমলদা তিনটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছিলেনঃ
‘Immortal Stupa’ (১৯৬১), ‘Life and Message of Swami Vivekananda’ (১৯৬৪) আর ‘Gautama the Buddha’ (১৯৬৭)। তাঁর দু’টি গুরুত্বপূর্ণ কাজ অসমাপ্ত থেকে গেছে। ‘Amrit Kumbh’ আর ‘The Mahabharata’


কিছুদিন আগে বিমল রায়ের ছেলে জয় একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি
(‘Images of Kumbh Mela’) নির্মাণ করেন এবং তাতে ওঁর বাবার ১৯৬০-এ তোলা অনেক ফুটেজ ব্যবহার হরেছেন তিনি। হারিয়ে যাওয়া সেই ছবিগুলো দেখলে বোঝা যায় কতটা কুশলী শিল্পী ছিলেন বিমলদা।


বেশ কিছুদিন ফুসফুসের ক্যান্সারে ভোগার পর ১৯৬৬ সালের ৭ই জানুয়ারী বিমল রায়ের মৃত্যু হয়। প্রোডাকশন হাউস কিছুদিন ধুঁকতে ধুঁকতে চলেছিল। শেকস্্পিয়ার-এর ‘কমেডি অফ এরর্্স’ অবলম্বনে দেবু সেন পরিচালিত ‘দো দু’নী চার’ মুক্তি পায় ১৯৬৮-এ, কিন্তু বক্স-অফিসে এই ছবি একেবারেই চলেনি এবং এরই সাথে সাথে বিমল রায় প্রোডাকশন-এর ইতি।


চিত্রগ্রাহক থেকে শুরু করে সফল পরিচালক এবং প্রযোজক হয়ে ওঠা বিমল রায়ের কাজের সঠিক মূল্যায়ণ আজও হয়েছে কিনা বলা মুশকিল। প্রত্যেকটি কাজে তাঁর সামাজিক দায়বদ্ধতার ছাপ সুস্পষ্ট। ভারতীয় সিনেমায় চিত্রসমালোচক থেকে সাধারণ সিনেমাপ্রেমী দর্শক – সকল স্তরের মানুষের চেতনায় বা অবচেতনে বিমলদা কোথাও না কোথাও ছিলেন, আছেন, এবং থাকবেনও।


লিখেছেন – ইন্দ্রনাথ মুখার্জী

বাঁ দিক থেকে: বিমল রায়, তালাত মেহমুদ, মহম্মদ রফি, শচীন দেববর্মণ।

19 Responses to “বিমল চিত্র-কথা”

  1. Somnath said

    মধুমতী-র স্ক্রিপ্ট লেখার পর নাকি ঋত্বিক ঘটক বলেছিলেন- বিমল রায় প্রোডাকশন-কে পথে বসিয়ে দিলাম!

  2. Caesar said

    Indra-da, aami kintu Satyajit-er ekta Bangla lekha-ey ‘Udoyer Pothe’ niye besh derogatory montobyo-i porechhi. Satyajit-er main apotti chilo film-tir otinaatokiyo songlaap niye, jetaar prosonge uni bolechhilen “ek dhoroner songlaap aachhe, jaake oneke ‘shaanito’ bisheshone bhushito koren, kintu taar songe baastober bishesh kono somporko thaake na.”

  3. Indra said

    @Avik: Ami Satyajit-er she lekha porini..ami jetuku porechi (sekhan thekei quote korechi) tate prosongsha chara r kichu dekhini…‘Udoyer Pothe’ ami partly dekhechi…songlaap aajker bichare haito kichuta natokiyo mone hote pare tabe shei samayer bichare jatheshto prasongik.

    @Somnath: Hnya bolechilen. Ritwik babu as a story/script writer khubi sadharon chilen (director hishabeo sanghatik kichu chilen na in my opinion). Manik babur sange eki niswashe unar naam ta kyano je newa hai bujhi na.

    • Somnath said

      jhogra korbona x-(

      • Indra said

        🙂
        Dyakha hole ekta academic discussion kara jabe na hai. Ami jani ekhane anek Ritwik bhakto achen. Onar 2/3 te chhobi amaro khub priyo, kintu Manik babu just onno level-er.

        • Caesar said

          Ekmot. 110% ekmot. Nehat aamra Bangali bole Satyajit-ke tene na naamale aamader shaanti hoy na.

        • Somnath said

          indrada, academic discussion korar moton porashuno to amar nei. tabe oi 2/3 Te chhobitei (asha kori pochhondogulo ek-i) kichu kichu emon jinis achhe, jeTa manikbabur ekTa chhobi chhaRa ar kichute ami paini. ekantoi byaktigoto byapar obosso eTa.

          • Indra said

            Somnath: Byaktigato pachando-apachando ekta thekei jai ebang at the end of the day mone hai shetai sesh katha…Also I have enough sense not to argue on that…My point is from a skill set and its execution perspective…making a film is a complex collective effort of many creative aspects and Satyajit Roy’s excellence in almost all of those aspects is hard to match.

  4. basu acharYa said

    lekha ta porlam. ekta wiki article er moto laglo. 🙂 jaihok, alochonar angshe ekta mojar jinish chokhe porlo: “Ritwik babu as a story/script writer khubi sadharon chilen (director hishabeo sanghatik kichu chilen na in my opinion). Manik babur sange eki niswashe unar naam ta kyano je newa hai bujhi na.” pore bhalo laglo. 😀 praan khule hashlam. 😀 biplob pal-er lekha pore je nirmal ananda pai, ekhaneo seirokomi pelam! 😀 emon ekti montobyer janye lekhok’ke awsankhyo dhonyobad. 😀 jaihok, uday’er path’e chitranatyer dialogues [kar lekha ekhuni mone porche na] fatafati! 😀 jaihok, ‘uaday’er pathe’ bangla chalachitrer ekta mwor. 🙂

    • k said

      “Ritwik babu as a story/script writer khubi sadharon chilen (director hishabeo sanghatik kichu chilen na in my opinion). Manik babur sange eki niswashe unar naam ta kyano je newa hai bujhi na.”

      eta pore amio praan khule hashlam. Je pita oder khoma koro, ora jane na ora ki bolchhe 😉

    • Indra said

      Praan khule hasha sesh hole Ritwik babu story/script writer ebang director hishebe katota asadharon chilen (especially in comparison to Manik babu) shei sambandhe ektu likhun na…kichuta sekhar cheshta kortum.

  5. আকাশ said

    নেহাত আমরা বাঙালি তাই আমরা ঋত্বিক-কে টেনে নামাই

  6. deviprasad said

    Bimal Roy Productions-er shesh chhobi bodh hoy Chaitali, Bimalbabur mrityur por tanr stree Manobina Roy-er projojonai mukti pai.

    • Indra said

      Hnya officially Chaitali Bimal Roy Productions-er shesh chhobi. Lekha ta pore mone hotei pare je Do Dooni Chaar. Truti marjoniyo.

Leave a comment