বাংলা ভাষা ২০১০
Posted by bangalnama on February 21, 2010
– লিখেছেন সোমনাথ রায়।
আজকের বাংলা ভাষা নিয়ে লিখতে গেলে প্রথমেই একটা পয়েন্টকে কাউন্টার করা দরকার, সেইটা হ’লো যে বিদেশি (মানে হিন্দি আর ইংরেজী) শব্দের অনুপ্রবেশে বাংলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তৈরী হচ্ছে বেংলিশ জাতীয় ভাষা। উদাহরণ দেওয়া হয়ঃ ‘I can’t sit hantu mure’। এবার ব্যাপারটা হলো এই পার্টিকুলার উদাহরণটায় যদি কোনও ভাষা বিদূষিত হয় সেইটা কিন্তু ইংরেজী, কারণ বাক্যটা মূলতঃ একটি ইংরেজী বাক্য যেখানে ক্রিয়া সর্বনাম সবই ইংরেজীর, শুধু মাত্র বাংলা একটি বাক্যাংশকে ব্যবহার করা হচ্ছে ‘verb’-কে বিশেষিত করতে। উল্টোদিকে দেখতে পারি, আমাদের বাংলার স্যারেরাও দশকের পর দশক ধরে ক্লাসের পড়া না পারলে নিল ডাউন করিয়ে রাখতেন। এই ঠিক আগের লাইনটা কিন্তু বেশ গ্রহণযোগ্য বাংলায় লেখা হলো, যেখানে ‘নিল ডাউন’ ইংরেজী শব্দটা (হাঁটু মুড়ে-র প্রায় আক্ষরিক অনুবাদ) দিব্যি বাংলা বাক্যে চলে যাচ্ছে। অর্থাৎ ক্রিয়া, সর্বনাম, অব্যয়, বিভক্তি প্রভৃতি অক্ষুণ্ণ রেখে দু-চারটে বিশেষ্য বিশেষণ অন্য ভাষা থেকে তুলে আনলেও মূল ভাষাটা বাংলাই থেকে যাচ্ছে। আর গদ্য বাংলার জন্মলগ্ন থেকেই সে এই অন্যভাষার থেকে বিশেষ্য বিশেষণ হরবখত নিয়ে এসেছে। ‘পিকনিকে ও পার্টিতে ক্যাটারিং ও চেয়ার টেবিল সরবরাহ’ যাঁরা করে থাকেন তাঁদের ভাষাটাকে বাংলা বলতে আমবাঙালীর কোনও অসুবিধে হয় নি। তাই, চোখ মেললেই দেখা যায়, শুদ্ধ বাংলা (মানে শুধু সংস্কৃত রুট-যুক্ত শব্দ ব্যবহার) একটি প্রায় অলীক প্রকল্প। আর, দেড়শো বছর আগে লেখা ‘কেউ বা ব্যাটবল খেলছে। নিত্যশরণ ওদের ক্যাপটেন।’ যতটা বাংলা বা পঞ্চাশ বছর আগে ‘লেবার কলোনীর হাল-হকিকৎ’ খুঁজতে গেলে যতটা বাংলা বলা হতো, ‘ট্রান্সসেক্সুয়ালের ট্রমাটিক অভিজ্ঞতা’ বুঝতে গেলে তার থেকে গুণগতভাবে ইনফিরিয়র কোনও বাংলা বলা হয়না।
এই পয়েন্টটা প্রণিধান করে নিয়ে, ক্রিয়া, সর্বনাম, বিভক্তি ও অব্যয় দিয়ে বাংলাভাষাকে যদি আইডেন্টিফাই করতে পারি, তাহলে আলোচনার আসল পার্টটায় সহজে ঢুকে পড়া যাবে, যে, একবিংশ শতাব্দীতে বাংলাভাষার হাল-হকিকৎ কী? বিশেষতঃ ইন্টারনেট আর গ্লোবাল মিডিয়ার প্রবল প্রবেশে সমাজের আর চারপাঁচটা জিনিসের মতন বাংলাও বেশ খানিকটা পালটে যাচ্ছে যখন দেখতেই পাচ্ছি। এই জায়গাটায় ঢোকার আগে একটা জিনিস উল্লেখ করা দরকারি মনে হয়, যে নব্বই-এর দশকের শেষ থেকে বাংলাভাষার স্কোপ বেশ সীমাবদ্ধ মনে হচ্ছিল। কারণ, মেইনস্ট্রীম বাংলাভাষায় সে সময়ে যা যা লেখা হচ্ছিল সবই ইংরেজীতে লেখা সম্ভব, উপরন্তু স্ট্যান্ডার্ড বাংলায় (গল্প-উপন্যাস-সংবাদপত্রের বাংলা) এমন অনেক কিছুই লেখা হচ্ছিলনা যা ইংরেজীতে লেখা হয়ে থাকে। এ’প্রসঙ্গে উৎপল দত্তের একটি উক্তি ছিল যে স্ল্যাং আমরা ইংলিশে পড়তে অস্বস্তি বোধ করিনা কিন্তু বাংলায় লেখা হলে বিরক্ত হই। ফলে আমরা যে ভাষাটায় স্বচ্ছন্দ হয়ে কথা বলছি তার সঙ্গে রাবীন্দ্রিক (বা সংসদীয় বা আনন্দবাজারি) বাংলার একটা বিস্তর ফারাক দেখা গেল আর যে বাংলাটা পড়ছি তার কাজ প্রায় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ইংরেজী করে ফেলতে পারে- আর, সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে বৃহৎপুঁজির বিদেশি মিডিয়া ঢোকার ফলে একটা অ্যাডেড অ্যাডভান্টেজ তো ইংরেজী পেয়েই গেল। নব্বই-এর শেষ সময় নাগাদ ‘রক্তমাংস’ পত্রিকায় কবি পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলালের একটা ইন্টারভিউ পড়ি, যেখানে তিনি বলেন যে এই স্ট্যান্ডার্ড বাংলার প্রয়োজন ফুরিয়েছে, তবে এই বাংলাটা উঠে গেলেও মিডিয়া-বাজারের বাইরে যে বাংলাটা পড়ে আছে, সেই বাংলাবাজারের বাংলা আবশ্যিক ভাবে টিকে থাকবে, কারণ একে প্রতিস্থাপন করবার শক্তি এখনও অন্যভাষার নেই।
ঠিক এখানেই একটা পরিবর্তন আনে আনন্দবাজার, কথ্য শব্দ ও শব্দরূপগুলিকে অত্যন্ত মুন্সিয়ানার সঙ্গে লিখিত বাংলায় ঢুকিয়ে। লক্ষ্যণীয় এর আগেও বাংলা ভাষা নিয়ে অজস্র এক্সপেরিমেন্ট হয়েছে, রবীন্দ্রনাথ পরবর্তীযুগে কল্লোল, কমলকুমার, কালকূট, হাংরি প্রভৃতি, কিন্তু এদের মধ্যে অধিকাংশই জনপ্রিয়তার নিরিখে কল্কে পায়নি। ফলে সর্বজনগ্রাহ্য ভাষা হিসেবে যেটা থেকে গেছিল সেটা মোটের ওপর ওই রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প-প্রবন্ধের ভাষাই। আমরা বাংলায় দু’লাইন লিখে অন্যকে বোঝাতে গেলে এখনও যেটা ব্যবহার করবো সেটাও ওইটাই, সম্ভবত। কিন্তু চন্দ্রিল-রঙ্গন প্রমুখ এর মধ্যে একটা জিনিস এনে ফেললেন যা হলো শব্দভান্ডারের মধ্যে প্রচলিত, স্ল্যাং-ধর্মী বিশেষ্য বিশেষণ ও অব্যয়- উদাহরণে দেখা যাবে আনন্দবাজারে ২০০৩-এর এপ্রিলে টিনটিন নিয়ে একটি উত্তরসম্পাদকীয়র কিছু অংশঃ ‘অসম্ভব, বাষট্টি পাতার মধ্যে কি ভাবে এই গোটা গাল্ফ ওয়র টু-টাকে গুঁজবেন বলুন তো। তার চেয়ে আসুন একটু গপ্পো করি। গপ্পো মানে, ওই আর কী, চ্যাট।… আড্ডার মতো কিছু হয়, হোক না চ্যাটালাপ।’ এই নিরন্তর সহজ কথ্যভাষায় এদ্দিন বাংলা গল্প-উপন্যাসে সংলাপ লেখা হতো অবশ্যই, কিন্তু সেগুলো মূলতঃ সৃষ্টিশীল স্বীকৃত সাহিত্যিকদের এরিয়া, সম্পাদকীয়র মতো সিরিয়াস ব্যাপার বা আমজনতার চিঠিপত্রে এর আগে অবধি ওই রবীন্দ্রনাথ-অম্লান দত্ত-পাঁচু রায়ের বাংলাই লেখা হয়েছে (আমজনতা সিরিয়াস কথা সিরিয়াস ভাষাতেই বলে থাকেন কিন্তু)। এর পাশাপাশি জনপ্রিয় হলেন নবারুণ ভট্টাচার্য্য, মূলতঃ হারবার্ট, কাঙাল মালসাট ও ফ্যাতাড়ুর গল্পগুলোর জন্যে, যার অধিকাংশই ওই বাংলাবাজারের বাংলায় লেখা, সাবলীল ভাবে খিস্তি, কলোকিয়াল অশুদ্ধ শব্দ, এবং গুরুচন্ডালী সেখানে উঠে এসেছে। এবং ওই ব্যবহারগুলি শুধুমাত্র সংলাপে সীমাবদ্ধ নেই (যেমন থাকতো সন্দীপনী বাংলায়), লেখকের ন্যারেশনও এই ভাষাকে ব্যবহার করছে। ফলে পাঠক যখন এইগুলো মাথায় রেখে লিখতে বসছেন, সংসদীয় বাংলার নিয়মনীতি তার মগজে কারফিউ জারি রাখছেনা এবং সে নিজে প্রাত্যহিক জীবনে, আড্ডার ঠেকে, খাবার টেবিলে, মিনিবাসের লাইনে, মাছের বাজারে যে ভাষাটা ইউজ করে দিব্য সেইটে লিখে ফেলতে পারছে।
আর, এইখান থেকে আর্বান বাংলাভাষা সম্ভবতঃ আরেকটা মোড় নিচ্ছে আর সেইটা নিতে পারছে তার একটা বড়ো কারণ ইন্টারনেট ফোরামগুলি, যেখানে অনর্গল একজন বাংলা লিখে যেতে পারছেন, কোনও সম্পাদকের অনুশাসন ছাড়াই। তাছাড়া, ইন্টারনেটের ফোরামগুলি আসার আগে আমরা কজনই বা প্রাত্যহিক জীবনে আলাদা করে লেখালিখির চাপ নিতাম? যখন দরকারে চিঠি-চাপাটি অফিস ইউনিয়নের নোটিশ লিখতে বসতুম (টেলিকমের উন্নতিতে ব্যক্তিগত চিঠি ক্যাসেটপ্লেয়ারের মতন মিউজিয়াম-বস্তু হয়ে যাওয়ার পরে তো আরও), তখনও ‘চাপ’-এর মতন হাল্কা শব্দ নৈব নৈব চ! আর এই অনর্গল অনবরতঃ লেখালিখির ফলে কয়েকটা আকর্ষণীয় লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, প্রথম জিনিসটা আপাতদৃষ্টিতে বেশ বাজে, হয়তো ভাষার পক্ষেও বিপজ্জনক, এবং নয়নযুগলের কাছে পীড়াদায়কঃ তা হলো, শব্দের চেহারার পিতৃমাতৃপরিচয় থাকছেনা- বানানশুদ্ধি শব্দটাই অলৌকিক হয়ে উঠছে। তবে আশা করা যায়, বাংলা এডিটরের নির্মাতারা একটি স্পেল-চেকিং ব্যবস্থা চালু করে এই সমস্যাটির আশু সমাধান করবেন (ক-বাবুর লেখা খ-বাবুর কাছে পৌঁছনোর সময়ে একটা ন্যূনতম বানানসমতা না থাকলে খবরের কাগজ দিয়ে লজ্জানিবারণের মতন গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে কিনা!), পরেরটা হয়তো বাংলাভাষার গড়ে ওঠার ইতিহাসের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ, তা হলো, নতুন শব্দের আগমন, শব্দভান্ডারের বেড়ে ওঠা- রবীন্দ্রনাথ যেরকম ভাবে ‘ক্যাপটেন’, ‘ব্যাটবল’ কে অবলীলায় বাংলা করেছিলেন, আজকের লেখকরা ট্রমা, চ্যাটরুম, রিসেশন, হায়ারিং এন্ড ফায়ারিং, অনসাইট, এলজিবিটি-কে বাংলা অক্ষরে লিখবার সময়ে দু’বার ভাবেন না, অভিধানে মাথা ঠোকেন না অধিবিদ্যা জাতীয় পরিভাষা খুঁজে পেতে।
শব্দভান্ডার নিয়ে দুচার কথা বলতে হলে কলিম খান মহাশয়ের কথা সর্বাগ্রে উল্লেখ্য। বাংলা ভাষা বা সামগ্রিকভাবে ভাষাগবেষণার একটি নতুন দিগন্ত খুঁজে এনেছেন কলিম খান ( উৎসাহী পাঠক কলিম খান ও রবি চক্রবর্তী প্রণীত বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ পড়ে দেখতে পারেন বা http://www.banglasemantics.net ওয়েবসাইটটিও)। তিনি দেখাচ্ছেন যে প্রতিটি শব্দের একটি ইতিহাস আছে, যেমন শব্দ মানে যা শব দান করে অর্থাৎ কোনও ধারণা কে লিখিত শরীর দেয় যা তাই ‘শব্দ’- এইভাবে আমাদের বলে ওঠা সমস্ত শব্দের একটা শরীরগত অর্থ আছে, যা আসছে সেই শব্দের মাধ্যমে কোন ক্রিয়া সম্পাদিত হয় তাকে খুঁজে পাওয়ার মধ্যে দিয়ে। উদাঃ ‘গো’ মানে গমন আছে যাহাতে, অর্থাৎ, সংস্কৃত বা প্রাচীন বাংলায় যে যায় বা যার দ্বারা যায় সকলই গো, তাই, গোরু, সূর্য, চন্দ্র, পৃথিবী, দিক, স্বর্গ, মন –সবই গো; আর, তাই যিনি গোস্বামী তিনি পৃথিবীর অধিপতি, তাঁর আলাদা করে গোয়াল না থাকলেও চলে, গরু না চরালেও মন যাকে জানে তাই গোচর, ধোঁয়ার মতন যে বস্তুর গুঁড়ো উড়ে যায় তাকে গোধূম বলে। কিন্তু কলিমবাবু (এমনকী আমার আপনার মতন যে কোনও সেন্সিবল মানুষ) এইটাও লক্ষ্য করছেন যে ‘গো’ বলতে নারী বা গোস্বামী অর্থে ওবামা-কে বোঝালে আজকের পৃথিবীর অফিস আদালত সংবাদপত্র আইবিএন আইবিএম চলবেনা। ফলে স্ট্যান্ডার্ড ইউজে শব্দকে তার নির্দিষ্ট প্রতীকী অর্থে ব্যবহার করা হচ্ছে- আর পাঁচটা ভাষার মতন আধুনিক বাংলাতেও। সেক্ষেত্রে কম্পিঊটারের কষ্টকল্পিত বাংলা যন্ত্রগণক ধরে নেওয়ার থেকে ব্যাটবলের মতন রাবীন্দ্রিক ব্যবহারই সময় ও শ্রমের পক্ষে সাশ্রয়কর। (কলিমবাবুর শব্দভাণ্ডার একটি অন্য দিগন্ত উন্মোচিত করে, তার স্কোপ এই লেখায় নেই, উৎসাহীদের বরং আরেকবার বলবো শব্দার্থকোষ বা ওয়েবসাইটটি দেখে নিতে)।
যাই হোক, সমৃদ্ধ শব্দভাণ্ডারের ব্যাপারটা বাংলার বহমান ইতিহাসের ধারাতেই আরেকটা ঘাট এগিয়ে চলবার মতন, কিন্তু নতুন এবং প্রায় অভূতপূর্ব যে লক্ষণটা আজকের বাংলায় দেখা যাচ্ছে তা হলো নতুন ক্রিয়াপদ গড়ে ওঠা। এর পেছনেও সম্ভবতঃ মূল চালিকাশক্তি ইন্টারনেট আর এস এম এস- রাতে ঘুমে প্রায় চোখ ঢুলে আসবার মুহূর্তে বা অফিস যাওয়ার রাস্তায় সহায়ক ক্রিয়াটিকে টাইপ করার চাপ না নিয়ে আমরা লিখে ফেলছি কালকে আবার চ্যাটাবো, দুপুরের দিকে ফোনিয়ে দেখিস। সহায়ক ক্রিয়ার ব্যবহার কমে আসছে, আদিবাংলার আমলে যেমন প্রবেশ করিল থেকে প্রবেশিল হয়ে চলিত বাংলা পৌঁছলো পেয়েছিল তেমনিই ভাট মারছি থেকে আজকে পাচ্ছি ভাটাচ্ছি। কিন্তু এহ বাহ্য, এর মধ্যে ইম্পর্ট্যান্টলি বাংলা যেটা পাচ্ছে তা হলো বিশেষ্যের থেকে তৈরী হওয়া নতুন ক্রিয়া- ফোনাবো, গুগলানো, বস্-ইও না প্রভৃতি, যার মূল বিদেশি শব্দটি আদতে একটি বিশেষ্য। যেহেতু, যেকোনও ভাষার প্রাথমিক বিল্ডিং-ব্লক তার ক্রিয়াপদগুলি, এই নতুন ক্রিয়াগুলি সার্বিকভাবে বাংলাভাষাকে নতুন দিশায় ‘সমৃদ্ধ’ করছে।
আপাতত এই হলো একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকের শেষে ব্যবহারিক লিখিত বাংলার হালচাল। আগামী দশক আরও সমৃদ্ধি নিয়ে আসবে এই আশা তো সব বাঙালীর বুকে বুকেই রইলো। প্রসঙ্গতঃ অবশ্যোল্লেখ্য, লেখক বাংলাভাষার একজন অবজার্ভার মাত্র- ফলে লেখাটির অথরশিপ থকলেও অথরিটি দাবি করবার জায়গায় নেই। এটিকে সমৃদ্ধতর করে তোলবার দায় পাঠকের ওপরই ন্যস্ত রইলো।
Related
This entry was posted on February 21, 2010 at 11:45 am and is filed under বাংলা, ভাষা, ভাষা আন্দোলন, সাহিত্য, Language Movement. Tagged: Anandabazar Patrika, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, বাংলা, ভাষা, Chandril Bhattacharya, Kalim Khan, Nabarun Bhattacharya, Rabi Chakraborty. You can follow any responses to this entry through the RSS 2.0 feed. You can leave a response, or trackback from your own site.
abin said
bere hoyeche..
বৃষ্টি said
চলমান, গতিশীল বাংলাভাষার অবজার্ভার -এই লেখকের লেখার আমি একনিষ্ট ভক্ত পাঠক!
বাংলাভাষার মাঝে ইংরিজি-ফার্সী-হিন্দি-উর্দুর সাথে স্প্যানিস-ফরাসী-জার্মান মিলে-মিশে একে আরও ঋদ্ধ ও সড়গড় করে তুলছে ,এতো অতীব আনন্দের !
সহায়ক ক্রিয়ার ব্যবহার কমিয়ে বা থামিয়ে ‘চ্যাটাবো, ফোনাবো, গুগলানো’ দিব্যি মেনে নেয়া যাচ্ছে…আরো যাবে …:-)
কিন্ত এস এম এস বাংরিজিতে কথা বলতে শুনে -দেখে
( উদাঃ but আমি ত এইকথা বলিনি so তুমি ক্যানো রাগ করছ বা Den আমি তাকে বল্লাম,আমি তোমায় lyk করি )
আমার মত মাটির মানুষেরও বন্দুকহাতে আতংকবাদী হতে মন চায় :X
এমন ক্যানো….!!!
কিঞ্জল said
“যেকোনও ভাষার প্রাথমিক বিল্ডিং-ব্লক তার ক্রিয়াপদগুলি” বিশেষ্য নয় কেন? এই ক্লেইমের পিছনে কোনো বিশেষ ভাষাতাত্ত্বিক লজিক আছে কি?
এই দেশীয় ভাষার ম্যাট্রিক্সটা রেখে দিয়ে বিদেশি বিশেষ্য আমদানি করেই কিন্তু সবরকমের পিজিন্ বা ক্রেওল ভাষা তৈরী হয়। কারণটা মনে হয় প্রয়োজনীয় ক্রিয়াপদের সংখ্যা বেশ সীমিত। সবই “ডু” বা “বী” র ভেরিয়েশন। নতুন বা কালচারালি এলিয়েন কন্সেপ্টগুলো বিশেষ্যর মাধ্যমেই আসে। বাংলা সাহিত্যের মডার্ন বিবর্তনের উধাহরণসহ ব্যাখ্যাটা ভাল লাগল। সাথে কিছুটা ফর্মাল ভাষাতাত্ত্বিক আলোচনা পেলে মন্দ হতনা – বিশেষ করে বাংলা বা অন্যান্য ভারতীয় ভাষাগুল আদউ ক্রেওলাইজ়েশনের দিকে যাচ্ছে কিনা।
rajib said
baah, bhalo hoyeche.
Somnath said
বৃষ্টিদি, অব্যয়পদ পালটে গেলে ভাষার অরিজিনালিটি ক্ষুণ্ণ হয়, মেনে নিলাম। but,so,Den ব্যবহার একটা মিশ্রভাষা করে দ্যায় বলেই মনে হয়, স্পেশালি যখন সিমিলার অব্যয়গুলো হাতের কাছেই আছে।
কিঞ্জল, বিশেষ্য বিশেষণ, বাংলা বা প্রায় আজকের কোনও ভাষাতেই প্রত্যয় নির্ধারিত অর্থে ব্যবহার হয়না, একটা সিম্বল হিসেবে ব্যবহার হয়, আর অনেক ক্ষেত্রে, শব্দটা তৈরী হবার পার্স্পেক্টিভ না থাকায় অন্য দেশ-কালে তার যথাযথ প্রতিশব্দ তোইরী করা যায়না, একটা অসাধারণ উদাহরণ হতে পারে নক্সাল বা নকশালবাদী শব্দটা, কিন্তু, নকশাল (সম্ভবতঃ এর কোনও বাংলা বা উত্তর-পূর্ব রুট) আছে নিজের আসল অর্থের বদলে একটা মতবাদ বোঝাতে ব্যবহার হচ্ছে, একজন গোয়ানিজকেও এই শব্দটাই ব্যবহার করতে হবে কারণ গোয়ায় এর সমার্থক শব্দটা তৈরী করবার ঐতিহাসিক জায়গাটাই ছিলনা। এরকম ভাবে, ধর ট্রমা শব্দটার প্রতিশব্দ খুঁজতে গিয়ে নাকানিচোবানি খাচ্ছিলাম, কারণ যে ডিসকোর্সটার মধ্যে দিয়ে ট্রমা এসেছে, সেই ডিসকোর্সটা বাংলায় ছিলনা।
এবার বাংলা আর অন্যান্য সিমিলার রুটের ভাষাগুলো যদি দেখি, অসমীয়া, ওড়িয়া- মূল ডিফারেন্সটা ভার্ব ফর্মের। এমন কি ইন্দো ইউরোপিয়ান ভাষাগুলো যেখান থেকে আলাদা, সেখানেও আসলে ডিফারেন্সটা আসইছে ভার্ব ফর্মের- একটা ভাষার চারটে ডায়ালেক্ট দেখলে হাতে গোনা কিছু শব্দ বাদে আসল পার্থক্য ভার্ব ফর্মের, সেখান থেকে অব্জারভেশন যে ভার্ব ফর্ম-ই ভাষার বিল্ডিং ব্লক।
আর, আমার ধারণা, বাংলা আদতে একটা পিজিন ভাষাই, য়াদি অবিশুদ্ধ সংস্কৃত (যদিও সংস্কৃতেও গুচ্ছ অস্ট্রিক/দ্রাবিড় শব্দ আছে)-র সঙ্গে অস্ট্রিক রুটের গাদাগাদা শব্দ মিশে চর্যাপদের ভাষা বা মঙ্গলকাব্য-পদাবলীর বাংলা।
Somnath said
contd
বাংলার অধিকাংশ লোকের মূল ভাষাগোষ্ঠী সম্ভবতঃ ছিল অস্ট্রিক-ই (ভাষাগোষ্ঠী, অ্যানথ্রোপলজিকাল গোষ্ঠী নয়)- তারা সংস্কৃত আধিপত্য স্বীকার করে নিয়ে নিজেদের ভার্ব ফর্মে সংস্কৃত রুট ঢুকিয়ে নিয়ে ক্রমে এরকম ভাষা বানান। ইয়া ইয়ে ইল এলাম ইত্যাদিগুলো যুক্ত হয় করিষ্যে, করত, ভবন্তু টাইপের ক্রিয়ার ধাতুর সঙ্গে
rajib said
je kono somriddho bhashar protita shobder ekta standard banan thaka uchit. “itz gud enuff 4 u 2 no dat..” jatiyo shobdo-sonkhyar cluster ke standard bhasha hisabe grohon korar karon dekhinia.
বৃষ্টি said
আমিও মনে হয় এইরকমই কিছু একটা বলতে চেয়েছিলাম,কিন্তু গুছিয়ে/বুঝিয়ে বলতে পারিনি ।
deviprasad said
সোমনাথের অবজার্ভেশনগুলো ইন্টারেস্টিং ( এই একবিংশ শতাব্দীতে লিখতে বসে আর বাংলা প্রতিশব্দ খোঁজার মানে হয় না!)। তবে, ওই যে, দুইখান কথা আছে। গল্পে, কবিতায় চলিত স্ল্যাং-এর ব্যবহার রবীন্দ্র-পরবর্তী আমল থেকে হয়ে এসেছে, এখানে প্রাক-নব্বুই উত্তর-নব্বুই বিভাজন কষ্টকল্পনা মনে হয়। কিন্তু গল্পে-উপন্যাসে, লেখকের বর্ণনা অংশে বাজার-চলতি ভাষার প্রয়োগ এখনো মেনস্ট্রিম হয় নি, নবারুন বা লিটল ম্যাগাজিনগূলো বাদ দিলে। এটা এভাবে হঠাত করে হওয়াও মুশকিল,লেখ্য ভাষা বিবর্তনের পদ্ধতিতে আস্তে আস্তে বদলায়, কোন বিশেষ শব্দ বা শব্দবন্ধের মেনস্ট্রিম গ্রহণযোগ্যতা গড়ে উঠতে সময় লাগে। যেটা লক্ষ করার সেটা হলো আমরা এখনো যথেষ্ট প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে উঠতে পারি নি। যৌনক্রিয়ার বর্ণনা বা যৌনগন্ধী স্ল্যাং-এর প্রয়োগ কী বাংলা সাহিত্যে এখনো সেভাবে এসেছে? হাংরিরা একটা চেষ্টা করেছিলেন, কিন্ত ওরা এতো ওয়ে ওয়ে অফ মেনস্ট্রিম ছিলেন যে তার কোন প্রভাব বাংলায় পড়ে নি। একটা ছোট উদাহরণ ঃ ফাক শব্দটি ইংরেজিতে এখন ডালভাত, এতটাই যে শব্দটির সেক্সুয়াল কন্নোটেশনটাই প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। কিন্তু বাংলায় আমরা কি এখনো ‘চোদানো’ শব্দটি ব্যবহার করি, বা করতে পারি? তখন আমাদের তৎসম শব্দের খোঁজে বেরোতে হয়!
অন্য পয়েন্টটা হলো বিদেশী বিশেষ্যকে বাংলা ক্রিয়াপদে পরিবর্তনের উদাহরণগুলো এস এম এস বা অর্কুট ফোরামের জন্যে ঠিক আছে, কিন্ত এদের ব্যবহারটা ওসব জায়গাতেই সীমিত থাকবে মনে হয়। একটা মূল কারণ এগুলো বাংলা ভাষার বিশেষ নান্দনিকতাকে আহত করে। আমি ফোন করলাম আর আমি ফোনালাম একই রেসোনান্স বহন করে না।
Somnath said
দেবীপ্রসাদ,
চ্যাটালাম, ফোনালাম কিন্তু আবাপ ইউজ করছে (একটা উদাহরণ ও দিয়েছি)। আবাপ-র ভাষাকে মেইন্সট্রিম আরবান বাংলা হিসেবে ধরতে আপত্তি আছে কি? সেক্সুয়াল কনোটেশনের ব্যবহার দুদশকে বেড়েছে বলেই তো মনে হয়- তবে হ্যাঁ সার্বজনীন স্বীকৃতি পেতে আরও একটা দশক লাগবে।
সুশান্ত said
দারুণ লেখাটা! অন্যভাষার শব্দ লেখাতে ব্যবহারে ভাষা একটা উন্নত হয়। অসমের বাংলা কাগজে প্রায়ি দেখি অসমিয়া শব্দও ঢুকে গেছে। অনেক সময় এটা ‘বাংলা-না অসমিয়া’ এই ধন্দে থাকতে থাকতেই লেখকেরা ঢুকিয়ে দেন। কিন্তু আনন্দ বাজারের ভাষাটা আমার এর জন্যে প্রায় ঘেন্না করে যে, মনে হয় ওরা যেন আমাদের বিলেতি বানিয়েই ছাড়বে। কেন বাবা, এতো বিলেতি প্রেম? হ্যাঁ। ওটা ‘আবাপ-র ভাষাকে মেইন্সট্রিম আরবান বাংলা’ই । এর বেশি কিছু না। লেখাটা কিন্তু দারুণ! এই লেখকের ভক্ত হয়ে গেলাম। গেলাম এই অয়েব কাগজেরো। কিন্তু ‘বাঙাল ভাষা’প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখালে আরো ভালো লাগবে। মানে এদিকটা নিয়ে লেখা লেখি পেতে চাই আরকি!