“জ্যোতি বসু তোমায় সেলাম
তোমার কাছে এলাম।
আমায় তুমি দেবে কী?
-হাতল-ভাঙ্গা হাতুড়ি।”
সবে শুরু হয়েছে বামফ্রন্টের যুগ। জ্যোতি বাবুর কুর্সি তখন বেশ নড়বড়ে। হাত হাতুড়ি ধরবে না টলমলে চেয়ার সামলাবে, এই গবেষণা চলতে চলতে ‘৭৭-এর ১১ই নভেম্বরের ভোরবেলায়, বিপ্লবী থেকে প্রতি-বিপ্লবী সকলকেই ছাই ঘেঁটে পাপ খুঁজে বার করার মহান দায়িত্ব অর্পণ করে, দেড়’শ টাকার পাঞ্জাবি চাপিয়ে চলে গেলেন তুষার। পৈতৃক ঘাটের এক কোণে গণগণে আঁচের জাজিমে মোড়া শুকনো কাঠের বিছানায় গা এলিয়ে শেষ বারের মতো রুমাল নেড়ে গেলেন আমাদের উদ্দেশ্যে–হ্যাঁ আমাদের, যারা তখন ভ্রূণ হয়ে ওঠারই অবকাশ পায়নি।
***
সালটা সম্ভবতঃ দু’হাজার চার কি পাঁচ। কাশীপুর অঞ্চলের ‘এভারেডি’ কারখানার পাশের বাগানবাড়িটা ছিল কিছু উচ্ছৃঙ্খল যুবকের আড্ডা মারার জায়গা। সদ্য-এক্সপেল্-হওয়া নকশালপন্থী থেকে কৃত্তিবাস পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি, উঠতি ক্যামেরাম্যান থেকে শ্মশানের ডাক্তার, কেউ বাদ থাকত না সেই আড্ডায়। মায়া জগতে বিচরণের সকল উপাদানই থাকত মজুত। গেটের বাইরে থেকে ভেতরের দিকে তাকালে অনেক সময় মনে হত কুয়াশার ভিতর থেকে ভেসে আসছে অশরীরীদের গল্পগাছা। কখনো শোনা যেত ভাস্কর-এর ‘শীতকাল..’, কখনো বা কানে আসত ‘নষ্ট আত্মা..’ থেকে পড়ে যাওয়া একের পর এক কবিতা। চলত সারা রাত!